ব্যাবসা শব্দটির সাথেই কেন যেন একটা “প্রতিযোগিতা” কথাটি চলে আসে। অনেকেরই ধারনা একজন উদ্যোক্তা আর একজন উদ্যোক্তার প্রতিদ্বন্দ্বী, একজন বিজনেস পার্সন আর একজন বিজনেস পার্সন এর প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তুু ই-কমার্স যত এগিয়ে যাচ্ছে, বিজনেস যত বেশি Digitalised হচ্ছে ততই গতানুগতিক এসব ধারনাগুলোর পরিবর্তন হচ্ছে।
একসময়ের প্রতিযোগিতামূলক বাজারটা এখন অনেকটাই পারস্পরিক সহযোগিতার পর্যায়ে চলে এসেছে। ২০২০ সাল… সারাবিশ্ব যুগ যুগ ধরে এই বছরটাকে মনে রাখবে।কিন্তুু সব খারাপের মাঝেও কিছু ভালো পরিবর্তন ঘটে যায়। যেমন ২০২০ সালে বাংলাদেশের নতুন নতুন অনেক উদ্যোক্তা আমাদেরই হারিয়ে যাওয়া পন্যগুলোকে নতুনভাবে, নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরছে সারা বিশ্বের কাছে।
সারাবিশ্বে বহুল সমাদৃত তাও আবার যুগ যুগ ধরে সেটা হলো কাস্টমার মিটআপ। কাস্টোমার একটা বিজনেস এর প্রান। আর কাস্টোমারদের ফিডব্যাকগুলো হচ্ছে লং টার্ম ইনভেস্টমেন্ট। কাস্টমার মিটআপ এর মাধ্যমেই কেবল অনেক মানুষের নেগেটিভ পজেটিভ মতামত নেয়া সম্ভব।
বর্তমানে অনলাইন ভিত্তিক জনপ্রিয় একটি গ্রুপ হলো Digital skils for Bangladesh ( DSB) এই গ্রুপের ৮০% মেম্বারই হলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। তারা এখানে ই-কমার্স রিলেটেড সকল ধরনের আইডিয়া নেয়ার জন্য গ্রুপে শিক্ষা গ্রহন করে থাকে।ই-ক্যাব এর ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট রাজিব আহমেদ স্যারের আইডিয়া অনুসারে কাস্টোমার মিটআপ শুরু হয় এবং কাস্টোমারদের পাশাপাশি একজন উদ্যোক্তাও অন্য উদ্যোক্তার মিটআপে অংশ নিয়ে থাকেন।
কিন্তুু একজন উদ্যোক্তা কেন আর একজন উদ্যোক্তার মিটআপে যাবেন ? কি লাভ হবে মিটআপে গেলে?
মিটআপ মানেই কিন্তুু অনেক মানুষের মিলনমেলা এবং প্রতিটি মানুষ কিন্তুু এক একজন ভোক্তা। প্রত্যেকেই নিজের চাহিদা অনুযায়ি কিছুনা কিছু প্রতিদিনই ক্রয় করেন।তাই উদ্যোক্তা হোক কিংবা ব্যবসায়িকে সবার কাছেই যে কোন পন্যের চাহিদা রয়েছে।
কোন কাস্টমার মিটআপে যখন অনেক উদ্যোক্তা একসাথে মিলিত হন তখন ওখানে আর একটা বিনামূল্যের ব্রান্ডিং তৈরী হয় এবং অনেকগুলো পন্যের মার্কেটপ্লেস তৈরী হয়।
👉প্রত্যেক উদ্যোক্তা নিজেকে তুলে ধরতে পারেন।
👉 নিজের পার্সোনাল ব্রান্ডিং তৈরী করার সবচাইতে সেরা উপায় মিটআপ গুলোতে তৈরী হয়।
👉পরিচিতি পর্বের সময় প্রত্যেকটি উদ্যোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।
👉মিটআপে পন্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকে তাই সব উদ্যোক্তাই যার যার পছন্দ অনুযায়ি একে অন্যের পন্য ক্রয় করতে পারে।
👉 সম পর্যায়ের পন্যগুলোর মধ্যে কোলাবোরেশান করে কাজ করার সুযোগ তৈরী হয় যেমন কেউ চাইলেই B2B করে কাজ করতে পারে।
👉 উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার বদলে সমমানষিকতা গড়ে ওঠে এবং পরস্পরের প্রতি সহযেগিতামূলক মনভাব তৈরী হয়।
👉হারিয়ে যাওয়া পন্য গুলো নতুন ভাবে ইনোভেশন এর মাধ্যমে মিটআপ গুলোতে উঠে আসে। যেমন খেস শাড়ি থেকে খেসের পর্দা পর্যন্ত আমরা দেখেছি। জামদানি শাড়িকে গাউন এ রুপান্তরিত করে এবং বাটিক এর স্যান্ডেল গুলোও মিটআপের মাধ্যমেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
👉অনলাইন পোর্টাল গুলোতে নিউজ যাওয়ার কারনে অনেকগুলো উদ্যোক্তার কথা উঠে আসে এবং এটা বিনা খরচে বিশাল একটা ব্রান্ডিং।
👉 এখন যেহেতু ফেসবুক পেজ / গ্রুপের মাধ্যমে বিজনেস হয়ে থাকে তাই মিটআপ গুলোতে সবার পেজের পরিচিতি হয় এবং Like / Follower বাড়ে।
👉 মিটআপ / ইভেন্ট গুলোতে ৫/৬ লাখ টাকার পন্য সেল হয়ে থাকে।
এভাবেই প্রতিটি মিটআপ নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দেয়। বর্তমানে অনেকেই এটা নিয়ে খুব কনফিউজড থাকেন তিনি কেন আর একজনের মিটআপে যাবেন। একজন উদ্যোক্তার কাছে প্রতিটি মিনিট অনেক গুরুত্বপূর্ণ তাহলে কেন তিনি সারাদিন অন্য একজন উদ্যোক্তার মিটআপে গিয়ে সময় দেবেন।
“সময় ” হচ্ছে যে কোন মানুষের জন্য সবচাইতে বড় “Investment ” তাই প্রতিটি উদ্যোক্তার উচিত মিটআপের সময়টুকুর সর্বোচ্চ ব্যবহার করা। যত বেশি সম্ভব নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া, আন্তরিকতা তৈরী করা এতে করে নেটওয়ার্ক বড় হবে। আর নেটওয়ার্কিং একটা বিজনেস এর সফলতাকে অনেক বেশি দ্রতগতি দিয়ে থাকে। তাই সবারই এদিকে নজর দেয়া উচিত।
লেখক
জান্নাতুল ফেরদৌস নিপা
স্বত্বাধিকারী: জান্নাত টি ভ্যালি