২০১৮ সালের ডিসেম্বরে চীনভিত্তিক হুয়াওয়ের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মেং ওয়ানঝুকে গ্রেফতার করেছিল কানাডা সরকার। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে মেং ওয়ানঝুকে কানাডায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। মেং ওয়ানঝুর আরো একটি পরিচয় হলো তিনি হুয়াওয়ে প্রতিষ্ঠাতা বিলিয়নেয়ার রেন ঝেংফেইয়ের কন্যা। এ গ্রেফতার বৈশ্বিক সংকট সৃষ্টি করবে বলে সরকারকে আগেই সতর্ক করেছিল কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা। বিশেষ করে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্ট করবে বলে সতর্ক করা হয়েছিল। খবর রয়টার্স।
সম্প্রতি প্রকাশিত নথি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধের ভিত্তিতে ভ্যাংকুভারে মেং ওয়ানঝুকে গ্রেফতার করেছিল কানাডা সরকার। হুয়াওয়ের শীর্ষ এ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের আগ মুহূর্তে কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা সতর্ক করেছিল যে এর ফলে চীনের সঙ্গে সম্পর্কে প্রভাব পড়বে।
২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে ভ্যাংকুভারে মেং ওয়ানঝুকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রত্যর্পণের বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। যদিও এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি কানাডার আদালতের পক্ষ থেকে।
মেং ওয়ানঝুর আইনজীবীদের দাবি, হুয়াওয়ের এ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তরের সুযোগ নেই। কারণ মেং ওয়ানঝু এমন কোনো অপরাধ করেননি, যার জন্য তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করা যেতে পারে। এমন করা হলে তা কানাডার আইনের পরিপন্থী হবে। যেহেতু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ছিল ইরানের ওপর, তাই এটা কানাডায় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।
হুয়াওয়ে বিশ্বের বৃহৎ নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম এবং দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানি। এর সরঞ্জামের নিরাপত্তা নিয়ে বরাবরই সন্দেহ প্রকাশ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির অভিযোগ, টেলিযোগাযোগ সরঞ্জামের মাধ্যমে হুয়াওয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ওপর নজরদারির কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং এসব তথ্য সরাসরি চীন সরকারের কাছে হস্তান্তর করছে। এমন অভিযোগে গত বছরের মে মাসে হুয়াওয়ের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ। একই সময় প্রতিষ্ঠানটিকে যুক্তরাষ্ট্রে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়।
দেড় বছর আগে ভ্যাংকুভার বিমানবন্দর থেকে মেং ওয়ানঝুকে গ্রেফতারের পর চীন ও কানাডার কূটনৈতিক টানাপড়েন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং এ সময় তার মুক্তির দাবি তোলা হয়। মেংকে গ্রেফতারের ঠিক নয়দিন পর চীনে কানাডার সাবেক কূটনীতিক মাইকেল কোভ্রিগ ও ব্যবসায়ী মাইকেল স্প্যাভোরকে আটক করেছিল দেশটি, যাদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়েছিল।
মেং ওয়ানঝুকে হস্তান্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আদালতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএসআইএস। ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বরের ওই মেমোতে সিএসআইএস জানিয়েছে, ভ্যাংকুভার ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর পর মেংকে গ্রেফতারের পরামর্শ দিয়েছিল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। পরিকল্পিত এ ঘটনাটির আন্তর্জাতিক ও দ্বিপক্ষীয় প্রভাব অনেক বড় হবে, তা আগেই অনুমান করা হয়েছিল।