পর্ন ( X) দেখলে আপনার মস্তিষ্কের যে ক্ষতিটা হবে । কোকেইন , হেরােইন ইত্যাদি কড়া মাদক সেবনেও আপনার একই ক্ষতি হবে ! শুধু তা – ই না , পর্ন – আসক্তি আপনার মস্তিষ্কের গঠনই বদলে ফেলবে ! কিন্তু কেন ? আপনি কিছু খেলেন না , পান করলেন না , ঘরের এককোণে বসে বসে পর্ন দেখলেন , তারপরেও কেন কোকেইন বা হেরােইন সেবনের মতাে ক্ষতির শিকার হবেন আপনি ? কেন আপনার মস্তিষ্ক পরিবর্তিত হয়ে যাবে ? এই “ কেন ” -র উত্তর পাবার জন্য বিজ্ঞানের কিছু কচকচানি শুনতে হবে । চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব সহজভাবে বােঝানাের । আমাদের মস্তিষ্কের একটা অংশকে বলা হয় রিওয়ার্ড সেন্টার ( Reward Center )।
এটার কাজ হলাে আপনাকে পুরস্কৃত করার মাধ্যমে আনন্দের অনুভূতি দেয়া , বেঁচে থাকার প্রেরণা দেয়া। সহজ বাংলায় বলি । ছােটবেলায় ফেলুদা পড়ার নেশা ছিল। বাসা থেকে বলত পরীক্ষায় ভালাে রেসাল্ট করলে ফেলুদার বই কিনে দেয়া হবে । পরীক্ষায় ভালাে রেসাল্ট করার পর আমাকে ফেলুদার বই কিনে দিয়ে ভালাে ফলাফলের জন্য পুরস্কৃত করা হলাে , রিওয়ার্ড সেন্টার ঠিক এই কাজটাই করে । যে কাজগুলাে আপনার জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে ভালাে কিছু খাওয়া , কিছু পাবার জন্য কঠোর পরিশ্রম করা , রিওয়ার্ড সেন্টার সেই কাজগুলাে করার জন্য আপনাকে প্রেরণা দেবে এবং কাজ শেষে পুরস্কৃত করবে ।। কিন্তু রিওয়ার্ড সেন্টার কীভাবে আমাদের পুরস্কৃত করে ?
মেকানিযমটা কী ? রিওয়ার্ড সেন্টার এই পুরস্কার দেবার জন্য ডােপামিন ( Dopamine ) এবং অক্সিটোসিন ( Oxytocin ) নামের দুটো কেমিক্যাল রিলিয করে । যখন রিওয়ার্ড সেন্টার অনুভব করে পুরস্কার দেয়ার মতাে কিছু ঘটেছে , এ কেমিক্যাল দুটো পাইকারি হারে উৎপন্ন হওয়া শুরু করে । আর এ দুটো কেমিক্যাল উৎপন্ন হলেই খেল খতম … আকাশে বাতাসে শুধু আনন্দ আর আনন্দ । আনন্দম , আনন্দম , আনন্দম । কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলাে , এই “ রিওয়ার্ড সেন্টার ” খুব সহজেই বেহাত হয়ে যায় । আফিম বা কোকেইন জাতীয় মাদকদ্রব্য কোনাে ঝক্কি ঝামেলা ছাড়াই “ আরামসে ” রিওয়ার্ড সেন্টারকে উত্তেজিত করে তােলে । মস্তিষ্কে ডােপামিন আর অক্সিটোসিনের জলােচ্ছাস শুরু হয় । পরিণতিতে কবির ভাষায় , “ সুখের মতাে ব্যথা অনুভূত হতে থাকে ।
মাদকদ্রব্যের মতাে পর্নও খুব সহজেই মস্তিষ্কে ডােপামিনের বন্যা বইয়ে দিয়ে দর্শককে ক্ষণিকের জন্য সুতীব্র আনন্দ দিতে পারে । পর্ন – আসক্ত এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে দেখা গিয়েছে , তাদের মস্তিষ্কের গঠন হুবহু এক । ”
লেকিন পিকচার আভি বাকি হ্যায় …
ডােপামিন ব্রেইন পালসের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পুরস্কার পাবার নতুন রাস্তা তৈরি করে । যার ফলে যে কাজটার কারণে প্রথমবার ডােপামিন নির্গত হয়েছিল , মস্তিষ্ক ডােপামিনের লােভে বার বার সেটাতে ফিরে যেতে চায় । এ কারণেই একবার পর্ন দেখলে বার বার দেখতে ইচ্ছে করে ।
দুধের দাঁত পড়তে শুরু করেছে তখন কেবল। বহু কষ্টে ব্যাট তুলে ধরতে পারি । আশেপাশে আমার মতাে কয়েকজন পিচ্চিকে নিয়ে একটা দল গঠন করা হলাে , বল থাকলেও ব্যাট ছিল না । কারােরই সাহস ছিল না বাবার কাছে ব্যাটের আবদার করার । অগত্যা একজন তার বড় ভাইয়ের হাতেপায়ে ধরে তাল গাছের ডাল চেঁছে ব্যাট বানানাের ব্যবস্থা করল । সেই ব্যাট নিয়ে আমাদের কী যে আনন্দ !
কিছুদিন এটা দিয়ে জম্পেশ খেলা হলাে , কিন্তু তারপর তালের এই ব্যাট দিয়ে খেলা অরি মন টানে না । ইতিমধ্যে আমরা কিছুটা বড় হয়েছি । কাঠমিস্ত্রীদের দিয়ে নিম কাঠের সুন্দর একটা ব্যাট বানানাে হলাে । নীল রঙা এই ব্যাট এখনাে আমার চোখে ভাসে ! কত ছক্কা যে মেরেছি এই ব্যাট দিয়ে ! কিছুদিন পরে এই ব্যাট দিয়েও খেলার আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম । চাঁদা তুলে বেশ দামি কাঠের বল খেলার ব্যাট কেনা হলাে । এত প্যাঁচাল পাড়ার একটাই উদ্দেশ্য , আপনাদের বােঝানাে যে মানুষ কোনাে কিছু নিয়ে খুব বেশিদিন সন্তুষ্ট থাকতে পারে না ।
পর্ন – আসক্তির ক্ষেত্রেও ঠিক একই ঘটনা ঘটে । ধরুন , আপনি কোনাে সফটকোর ( Softcore ) পর্ন দেখলেন । একটি নির্দিষ্ট মাত্রার ডােপামিন রিলিয হলাে , আপনি আনন্দ পেলেন । পর পর কয়েকবার পর্ন দেখার পর ঠিক একই পরিমাণ ডােপামিন রিলিয হলেও , আপনি আগের মতাে আর আনন্দ পাবেন না । আপনি আর এই পর্ন ভিডিওতে সন্তুষ্ট থাকতে পারবেন না । আপনার প্রয়ােজন হবে নতুন কিছুর । কেন এমন হয় ?
মাত্রাতিরিক্ত ডােপামিন রিলিয হলে মস্তিষ্ক ডােপামিনের ব্যাপারে কম সংবেদনশীল হয়ে যায় । অর্থাৎ আগের ডােজে আর কাজ হয় না । কারণ অতিরিক্ত ডােপামিনের প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য মস্তিষ্ক এমন কিছু স্নায়ু বিসর্জন দেয় যেগুলাের কাজ ছিল ডােপামিনজাত উদ্দীপনা গ্রহণ করে সাড়া দেয়া । Receptor Nerve নামের এ স্নায়ুগুলাের কাজ হলাে ডােপামিন অণু গ্রহণ করে মস্তিষ্ককে এই সিগন্যাল দেয়া যে , আমি এত এত পরিমাণ ডােপামিন গ্রহণ করেছি । যখন Receptor Nerve এর সংখ্যা কমে যাবে তখন আগের মতাে সেই একই পরিমাণ ডােপামিন রিলিয হলেও সেটা গ্রহণ করার জন্য পর্যাপ্ত Receptor Nerve থাকছে না , আর তাই মস্তিষ্ক ধরে নিচ্ছে উপস্থিত ডােপামিনের পরিমাণ খুব কম ।এ কারণেই সে একই পর্ন ভিডিও দেখেও আপনি আগের চেয়ে কম আনন্দ পাচ্ছেন । আগের মতাে আনন্দ পাবার জন্য আপনার তখন আরও “ কড়া ” কিছু লাগবে । আপনি ঝুঁকে পড়বেন হার্ডকোর ( Hardcore ) পর্নের দিকে । এতে ডােপামিন রিলিযের মাত্রা বাড়বে এবং আপনি পাবেন আগের সেই সুতীব্র আনন্দ । সফটকোর পর্ন দিয়ে শুরু করে ডােপামিন লেভেলের সঙ্গে পাল্লা দেবার জন্য আপনি ধীরে ধীরে সমকামী পর্ন আর শিশু পর্নের মতাে জঘন্য জিনিসও দেখা শুরু করবেন ।
মাদকাসক্তদের ক্ষেত্রেও কিন্তু ঠিক এমনটাই ঘটে । সিগারেট থেকে যে নেশার শুরু হয় তার শেষ হয় কোকেইন আর হেরােইনে।আমাদের মস্তিষ্কের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ হচ্ছে ফ্রন্টাল লৌব ( Frontal Lobe ) । এই বাবাজির কাজ কী ?
ল্যাবের করিডাের দিয়ে কোনাে রূপবতী হেঁটে গেলে আপনার দুচোখে যে স্বপ্নের আবির নামে , তার জন্য দায়ী এই ফ্রন্টাল লৌব । আমাদের ভাব প্রকাশের মাধ্যম মানে ভাষা , সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা , সমস্যা সমাধানের পারদর্শিতা , সর্বোপরি আমাদের ব্যক্তিত্ব নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই ফ্রন্টাল লৌব ।
মাদকাসক্তি , অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়া , ইন্টারনেট আসক্তি , পর্ন — এই ফ্রন্টাল লৌবের মারাত্মক ক্ষতি করে । ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলাে , একজন মানুষ যত বেশি পর্ন দেখে , তার মস্তিষ্কের তত ক্ষতি হতে থাকে এবং ক্ষতি পূরণ করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসাটাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায় ।কারণ নার্ভ সেল হল দেহের সেই কোষগুচ্ছ যেগুলাে কখনােই রিজেনারেট করে না । আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ মনে হলেও পর্ন ভিডিও আপনার মস্তিষ্কের কী ব্যাপক ক্ষতি করে , আশা করি বােঝা গেছে ।