দেশে অবৈধ হ্যান্ডসেটের প্রবেশ ও চুরি বন্ধের পাশাপাশি এগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মোবাইল ফোন যন্ত্রপাতি পরিচয় (আইএমইআই) ডেটাবেজ চালু করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
এতে মাত্র ১৭ দিনে প্রায় দুই কোটি হ্যান্ডসেটের তথ্য আইএমইআই ডেটাবেজের আওতায় এসেছে।
বিটিআরসি’র তথ্যমতে, গত ২২ জানুয়ারি আইএমইআই ডেটাবেজ করে বিটিআরসি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৭ দিনে এক কোটি ৯০ লাখ ৫৮ হাজার হ্যান্ডসেটের প্রায় তিন কোটি ৮৪ লাখ আইএমইআই ডেটাবেজ সংরক্ষণ করা হয়েছে।
বিটিআরসি’র এক কর্মকতা জানান, পর্যায়ক্রমে সারা দেশের হ্যান্ডসেটগুলোকে আইএমইআই ডেটাবেজের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আইএমইআইর ক্ষেত্রে এটি হচ্ছে ফাস্ট ফেইজ। দেশে এখন থেকে যে হ্যান্ডসেটগুলো আমদানি করা হবে, সেগুলো এয়ারপোর্ট থেকেই আইএমইআই ডেটাবেজে ঢোকানো হবে। আর দেশে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের তথ্য কোম্পানিগুলো নিজ উদ্যোগে নিবন্ধন করিয়ে নেবে। তবে যে হ্যান্ডসেটগুলো এখন গ্রাহকদের হাতে আছে, সেগুলোর আইএমইআই নম্বর মোবাইল ফোন অপারেটরদের মাধ্যমে অটোমেটিক পদ্ধতিতে নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, হ্যান্ডসেট যেন চুরি না যায়, তাই হ্যান্ডসেটগুলো সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে অর্থাৎ ব্যক্তি তথা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা জোরদার করতেই আইএমইআই ডেটাবেজ চালু করা হয়েছে।
হ্যান্ডসেটের তুলনায় আইএমইআই কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, এখনকার হ্যান্ডসেটগুলো সাধারণত ডাবল সিমসমৃদ্ধ। আবার কিছু হ্যান্ডসেটে তিন সিমও ব্যবহার করা যায়, যে কারণে হ্যান্ডসেটের তুলনায় আইএমইআই সংখ্যায় বেশি হয়।
গ্রে মার্কেট (অবৈধ হ্যান্ডসেট বিক্রির বাজার) বন্ধের পাশাপাশি হ্যান্ডসেটের গুণগত মান নিশ্চিতে আইএমইআই ডেটাবেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক বলেন, ‘সবার নিরাপত্তার স্বার্থেই আইএমইআই ডেটাবেজ চালু করা হয়েছে। অবৈধভাবে বিদেশ থেকে হ্যান্ডসেট আমদানি করায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এছাড়া ফোন চুরি ঠেকানোর পাশাপাশি দেশে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ঠেকাতেই আইএমইআই ভূমিকা রাখবে।’
তিনি বলেন, ‘তবে অনেকের আত্মীয়স্বজন দেশের বাইরে থাকায় তাদের কথা মাথায় রেখে আমরা এরই মধ্যে পাঁচটি থেকে বাড়িয়ে আটটি হ্যান্ডসেট নিয়ে আসার সুবিধা দিয়েছি। কেবল যারা বৈধভাবে হ্যান্ডসেট নিয়ে আসবেন, তাদের সুবিধা চিন্তা করেই এটি বাস্তবায়ন করেছি, যাতে কারও কোনো অভিযোগ না থাকে।’
উল্লেখ্য, আইএমইআই’র একটি ১৫ ডিজিট সিরিয়াল নম্বর আছে, যেটি সব হ্যান্ডসেটে দেওয়া থাকে। এর ডেটাবেজ চূড়ান্ত করার মাধ্যমে বৈধ ডিভাইসগুলো শনাক্ত করার পাশাপাশি কোন নেটওয়ার্ক অ্যাকসেসে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে, বা চুরির পর কোথায় আছে, সেটিও শনাক্ত করা যাবে। *#০৬# ডায়াল করলে হ্যান্ডসেটের পর্দায় আইএমইআই নম্বর দেখতে পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, নীতিমালা অনুযায়ী প্রত্যেক যাত্রী প্রতিটি বোর্ডিং পাস বা সংশ্লিষ্ট ভ্রমণসংক্রান্ত কাগজ অনুযায়ী বিটিআরসির অনাপত্তিপত্র ছাড়া আটটি মোবাইল ফোন নিয়ে আসতে পারবেন। তবে আটটির বেশি মোবাইল ফোন আনার ক্ষেত্রে বিটিআরসি থেকে ‘ভেন্ডর এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট’ নিয়ে সেগুলো কাস্টমস থেকে খালাস করতে হয়। এখন থেকে এসব হ্যান্ডসেটও বিমানবন্দরে নিবন্ধন করিয়ে নিতে হবে যাত্রীদের।