গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরে অবস্থিত ন্যাশনাল ডাটা সেন্টারকে বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম ডাটা সেন্টার বলে জানিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তিনি বলেন, ‘হাইটেক পার্ক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কগুলো সফটওয়্যার, ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদি পণ্য রপ্তানির মূলকেন্দ্র হয়ে উঠবে। প্রথম পর্যায়ে এ পর্যন্ত ২৮ টি আইটি/ হাইটেক পার্ক স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে, সরকার পর্যায়ক্রমে দেশের সকল বিভাগ/জেলায় আইটি/ হাইটেক পার্ক স্থাপন করবে। আইটি শিল্পকেও সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে এবং দেশী বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সম্পৃক্ত করতে সুলভ মূল্যে প্রতিটি হাইটেক/আইটি পার্কে স্পেস দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও স্টার্ট আপডেট বিনামূল্যে স্পেস দেওয়ার মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করছে।’
বুধবার বিনিয়োগকারীদের জন্য সদ্য চালুকৃত কমিউটার ট্রেনে চড়ে তিনি এই হাইটেক পার্ক পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে প্রতিমন্ত্রী কালিয়াকৈরে ডেভেলপার ও বিনিয়োগকারীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন ।
পলক বলেন, ‘১৯৯৯ সালে বিনিয়োগ বোর্ডের ১২তম সভায় প্রধানমন্ত্রী কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কিন্তু পরবর্তী সরকার এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেনি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবারো হাইটেক পার্ক আলোর মুখ দেখে।’
প্রতিমন্ত্রী হাইটেক পার্ক নির্মাণের শুরুর কথা সম্পর্কে বলেন, ‘ক্ষমতায় এসে ২০১৪ সালে এই এলাকার উপর থাকা বিভিন্ন ধরনের মামলা নিষ্পত্তি করি এবং সে বছরের ১২ই মার্চ প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় জায়গাটি পরিদর্শন করেন।’
পলক আরও বলেন, ‘হাইটেক পার্কের বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও ট্রেন কানেক্টিভিটি খুব দরকার ছিল । আমরা উপলব্ধি করছিলাম যে ট্রেন যোগাযোগ ছাড়া এই হাইটেক পার্ক সফলতা পাবে না । সেসময় সজীব ওয়াজেদ জয় প্রথম আমাকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন এখানে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আমরা সেসময় রেলমন্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলাম তখন আমরা গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আধুনিক রেল স্টেশন স্থাপন করার প্ল্যান করেছিলাম । যা অতি সম্প্রতি বাস্তবায়িত হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কালিয়াকৈরে ৩৫৫ একর জমির উপর স্থাপিত বঙ্গ বন্ধু হাইটেক সিটি। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ প্রথম প্রকল্প। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এ পার্কের প্রয়োজনীয় সকল অফসাইট ইনফ্রাস্ট্রাকচার নির্মাণের কাজ শেষ করেছে। ইতিমধ্যে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব মডেল এ দুটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের নিকট ১৪০ একর জমি প্রদান করা হয়েছে। ডেভেলপার কোম্পানি সামিট টেকনোপলিস বিডি লিমিটেড কর্তৃক , ৬০ হাজার বর্গফুট বিশিষ্ট ফ্যাক্টরি ভবন এবং ১ লক্ষ,৬০ হাজার বর্গফুট বিশিষ্ট সিগনেচার বিল্ডিং নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অন্য ডেভেলপার কোম্পানি লিমিটেড টেকনো সিটি বিডি লিমিটেড এর দুই লক্ষ বর্গফুট বিশিষ্ট মাল্টি টেনান্ট বিল্ডিং নির্মাণ কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে।’
তিনি বলেন, ‘এছাড়াও পার্কটিতে একটি সার্ভিস বিল্ডিং ২৭২৬০ ,বর্গফুট নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে দুটি আইটি প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি ) প্রোডাক্ট তৈরির কাজ শুরু করেছে এবং চীনের সহযোগিতায় প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা ব্যয় এই টেক পার্কেই গড়ে উঠছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ টায়ার ফোর ডাটা সেন্টার। ইতিমধ্যে এই জাতীয় ডাটা সেন্টারে ৯৯ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে, শীঘ্রই এখানে কাজ শুরু হবে।’
ব্যবস্থাপনা পরিচালক সচিব হোসনে আরা বেগম এনডিসি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক সিটিতে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার জন্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রবল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। আমরা বিনিয়োগকারীদের সব রকম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি। দেশী বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য ১৪টি প্রণোদনা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এসব কার্যক্রম আরও সহজে করনের জন্য বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা অনলাইনভিত্তিক ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছি যা দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য খুবই কার্যকর হবে। সম্প্রতি চালুকৃত ট্রেন সার্ভিস বিনিয়োগকারীদের যাতায়াতের সময় ও খরচ কমিয়ে আনবে। ফলে তারা এখন নিশ্চিন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন। আমরা বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে যা যা করা প্রয়োজন তাই করবো। ইতিমধ্যে এই পার্ক থেকে আইটি পণ্য রপ্তানি শুরু হয়েছে শীঘ্রই এখানে মোবাইল ফোন ল্যাপটপ সহ বিভিন্ন হার্ডওয়ার পণ্য উৎপাদিত হবে।’
এ সময় জানানো হয়, কালিয়াকৈরে নির্মিত বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি রেল স্টেশনটি গত ১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন। এটা ছিল বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের দীর্ঘদিনের দাবি। এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে বিনিয়োগকারীরা এবং সেখানে কর্মরত লোকজন সহজে এবং অল্প সময়ে ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে যাতায়াত করতে পারবেন। এর ফলে হাইটেক পার্ক খুব দ্রুত কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি কমিউটার ট্রেন ১ এবং ২ নামে দুটি প্রতিদিন চার বার ঢাকা থেকে কালিয়াকৈরে যাতায়াত করবে।