বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প যাত্রা শুরু করে ষাটের দশকে। তবে সত্তরের দশকের শেষের দিকে রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে এই শিল্পের উন্নয়ন ঘটতে থাকে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী শিল্পখাত। পোশাক আমাদের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম। বিশ্বের কাছে পরিচিত এনে দিয়েছে আমাদের এই শিল্পটি৷ পোশাক শিল্পের দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। এটি আমাদের জন্য অবশ্যই গৌরবের।
কিন্তু আমরা কজনে জানি বাংলাদেশের এই খাত সম্পর্কে? বাংলাদেশে প্রথম গার্মেন্টস শিল্পের সূচনা হয় পুরান ঢাকায়। রিয়াজ গার্মেন্টস নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রথম পোশাক রপ্তানি শুরু করে।
১৯৬৩ সালে পুরান ঢাকার উর্দু রোডে রিয়াজ স্টোর নামের দর্জির দোকানের মালিক ছিলেন রিয়াজ উদ্দিন। তিনি তৈরী জামাকাপড় বিক্রি করতেন। দক্ষ এবং পটু রিয়াজ উদ্দিন ১৯৬৫ করাচি যান, সেখানে দেখেন পশ্চিম পাকিস্তানের একটি পোশাক কারখানা মাসে লাখ পিস তৈরী পোশাক বিদেশে রপ্তানি করছেন। নিজেও স্বপ্ন দেখেন নিজ দেশের জন্য এমন কিছু করবেন। সেই স্বপ্ন থেকেই ১৯৭৩ সালে রিয়াজ স্টোর নাম পাল্টে নতুন নাম করন করেন রিয়াজ গার্মেন্টস। নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য চেষ্টা করতে থাকেন, ব্যবসা বড় করেন৷ শেষ পর্যন্ত ৫ বছর পর ১৯৭৮ সালে সেই অধরা স্বপ্ন পূরণের মূহুর্ত আসে রিয়াজ উদ্দিনের জীবনে। ফ্রান্সের এক প্রতিষ্ঠান দশ হাজার পিস ছেলেদের শার্ট অর্ডার করে। ১৯৭৮ সালের ২৫ জুলাই বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র সাহায্যে প্যারিসে দশ হাজার পিস শার্ট রপ্তানি করার মাধ্যমে শুরু হয় বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের নতুন বিপ্লব। দেশের প্রথম রপ্তানি কৃত আয়ের পরিমান ছিলো ১৩ মিলিয়ন ফ্রাংক বাংলাদেশীর টাকা ১৩৪ কোটি টাকা (২০২১ সালের হিসাব মতে)।১৯৭৮ সালে এই টাকার পরিমান ছিলো ৪ লাখ টাকা। এর পর থেকেই বাংলাদেশের নতুন দিগন্তের শুভ সূচনা হয়। সেসময়ে রিয়াজ গার্মেন্টস সহ আরো ৪ টি পুরানো গার্মেন্টস ছিলো প্যারিস, বৈশাখি এবং জুয়েল গার্মেন্টস।
সেসময়ের সামাজিক অবস্থা বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার মত ছিলো না। তাই রিয়াজ গার্মেন্টস নারীদের নিয়ে কাজ করার আগ্রহ দেখালেও সফলতা পান নি। তিনি মেয়েদের আগ্রহ তৈরী করতে নিজের মেয়েকে কারখানায় কাজে লাগিয়ে দেন। তারপর কিছু নারীরা কাজে আসতে শুরু করে।
১৯৬৯ সালে ৩ নভোচারী নিল আমস্ট্রং, এডউইন অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স রিয়াজ গার্মেন্টসের পোশাক হাতে পেয়ে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেন- “We wish to thank you for your thoughtful gift of three shirts which was presented to us during our visit to Dacca.”
বিদেশ ছাড়াও নিজ দেশের মাটিতেও সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ৮০ দশকে নায়ক রাজ্জাক ছিলেন তাদের কোম্পানির ব্র্যান্ড এম্বাসেডর। তখন সংবাদপত্র এবং টিভিতে তাদের অনেক বিজ্ঞাপন প্রচার হয়।
বর্তমানে ৪০-৪৫ লাখ নারী পুরুষ পোশাক কারখানায় কাজ করেন। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে, বেকারত্বের হার কমছে,২০১৯-১৯ অর্থবছরের হিসেব মতে ৩৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করছে দেশ যে পোশাক শিল্পের মাধ্যমে তার সূচনা হয়েছিলো পুরান ঢাকার একজন দর্জির হাত ধরে।এটি অবশ্যই পুরান ঢাকার জন্য আনন্দের ও গৌরবের।