মাদুর বা পাটি হল কাপড়ের উপাদানের টুকরার একটি জাতিবাচক শব্দ বা নাম, যা সাধারণত মেঝে বা অন্যান্য সমতল স্থানের স্থাপন করা হয়ে থাকে।
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে দেশ বিখ্যাত পাতির তৈরী পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সম্মত মাদুর এবং সেই মাদুর তৈরীর প্রধান উপকরণ পাতি চাষ বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। হঠাৎ করেই প্রাকৃতিক পাতি ও মাদুরের স্থান দখল করতে শুরু করেছে ভারতীয় প্রযুক্তির প্লাস্টিকের তৈরী কৃত্রিম পাতি ও মাদুর। নতুন আগমন ও দেখতে আকর্ষনীয় হবার কারনে প্লাস্টিকের তৈরী রং বে-রঙের চোখ ধাঁধানো পাতি ও মাদুর তৈরীর কারখানা স্থাপন ও বিক্রির ধুম পড়েছে। ফলে পাতি চাষ ও মাদুর উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকেরও নীচে।
এখনো যারা চাষ করা পাতির মাদুর তৈরীতে নিয়োজিত তারা বাহারি নক্সা করতে না পারলেও পাতিতে রং করে মাদুর তৈরী ও বাজারজাত করতে বাধ্য হচ্ছে। রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাড়রা এসে প্লাস্টিক ও প্রাকৃতিক পাতির তৈরী মাদুর কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
বাহারি রং ও নক্সা করা কৃত্রিম পাতির মাদুরের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় জমে উঠেছে মাদুর হাট ও কারখানা স্থাপন কার্যক্রম। পাইপ তৈরী ও মাদুর বুনুনের স্বয়ংক্রিয় কারখানায় চাকরির পাশাপাশি বহু বেকার নারী-পুরুষ নতুন প্রযুক্তির পাইপ দিয়ে বাড়িতে হাতে বুনুন করছে নক্সা ছাড়া মাদুর। আয়ও করছে বেশ।
সপ্তাহে দুই দিন রবিবার ও বৃহস্পতিবার কাক ডাকা ভোর থেকে দুপুর পযর্ন্ত খুচরা ও পাইকারী বেচা-কেনার ধুম পড়ে যায়। এখানকার হাতে ও স্বংক্রিয় মেশিনে তৈরী বাহারী কারুকার্যে ভরা মাদুর গুলো দামে কম হওয়ায় এর চাহিদা ব্যাপক। পাতি চাষ ও পাতি দিয়ে তৈরী পরিবেশ বান্ধব স্বাস্থ্য সম্মত মাদুরের সুখ্যাতি দেশজুড়ে।
প্লাস্টিকের পাতি তৈরীর কারখানা স্থাপন হওয়ার পর থেকে পাতি দিয়ে তৈরী মাদুরের পাশাপাশি প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে তৈরী মাদুরের চাহিদা দিন দিন বেশি হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় শত সহস্র বেকার মানুষ প্লাস্টিকের মাদুর তৈরী করে হাটে-বাজারে বিক্রির মাধ্যমে ভাল আয় করছে। বেকার থাকা মানুষগুলো স্বপ্ল পুঁজি বিনিয়োগ ও অল্প পারিশ্রম করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে।বর্তমানে এই প্লাস্টিকের মাদুর দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
বর্তমানে এ ব্যবসা জনপ্রিয় ও লাভজনক হওয়ায় চাষ করা পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সম্মত পাতির তৈরী মাদুর ব্যবসা হুমকির মুখে পড়ার আশংকা করা হচ্ছে। বর্তমানে প্লাস্টিক মাদুরের চাহিদা আকাশ চুম্বি হলেও অদুর ভবিষ্যতে তা আর থাকবে বলে মনে হয় না। কারন হিসাবে তারা বলেন প্রাকৃতিক পণ্যের চাহিদা কমবেশি চির দিন এবং বর্তমানে এসে তা বাড়ছে।
দেশীয় পণ্যের আলাদা মাত্রা আছে।! আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যের সাক্ষ্য হিসেবে দেশীয় পণ্য টিকে থাকবে এবং পরবর্তীতে আগামী প্রজন্মের হাত ধরে পণ্যগুলো নতুন করে আমাদের মাঝে আসবে” এই প্রত্যাশা কারিগরদের।
দেশীয় পণ্যকে সম্ভবনার দারপ্রান্তে নিয়ে আসতে ডি এস বি নামক ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপের অবদান অনস্বীকার্য। যুব সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পরুক আমাদের দেশীয় পণ্যগুলো। “ফেসবুক শুধুই সময় নষ্ট করার একটা মাধ্যম মাত্র” এমন ধ্যান ধারণা থেকেও বেড়িয়ে আসি আমরা।
লেখক
প্রমি পোদ্দার