কলকারখানার যুগে পাটি মানেই প্লাস্টিকের তৈরি,যা মাদুর নামে ও পরিচিত।এই প্লাস্টিকের ভীড়ে এখনো দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ ধরে রেখেছে,হাতে বোনা শীতল পাটির ঐতিহ্য। তার মধ্যে একটি জেলা হচ্ছে মুন্সিগঞ্জ।
মুন্সিগঞ্জ জেলা নানা রকমের পাটিশিল্পের জন্য বিখ্যাত।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শীতল পাটি।
মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন,টংগীবাড়ি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন এখনো পাটি বুনন শিল্পের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
সিরাজদিখান উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়ন,বয়রাগাদি ইউনিয়ন,জৈনসার ইউনিয়ন,মালখানগর ইউনিয়ন এর কয়েকটি গ্রাম থেকে প্রায় ১৪৪ টি পরিবার পাটিশিল্পের সাথে জড়িত।
টংগীবাড়ি উপজেলা থেকে আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের থেকেও প্রায় ৭০ টির ও বেশি পরিবার এই শিল্পের সাথে জড়িত।লোকমুখে শুনা যায়,পাইকপাড়ার পাইট্টাল বাড়ি এ জেলার সর্ব বৃহৎ পাটি উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে পরিচিত।
এইসব এলাকায় পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম পুরুষগুলো পাটি শিল্পকে আগলে রেখেই জীবিকা নির্বাহ করছে।নারীরাও এইক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই।সংসারের কাজের ফাকে ফাকে তারাও পাটি তৈরির কাজে হাত লাগাচ্ছে।
তাদের উৎপাদিত পাটিশিল্পের মধ্যে রয়েছে মনোরম কারূকার্য করা শীতলপাটি,সাধারন পাটি,পাটির ব্যাগ,জুতা ,ছোট চট,বড় চট ইত্যাদি।পাটি তৈরির মূল কাচামাল মোতরা বা পাইত্রা তারা সংগ্রহ করে আনেন সিলেট থেকে। বছরে ২/৩ বার তারা কাচামাল সংগ্রহ করে থাকেন।বিভিন্ন প্রকিয়াজাত করে এই কাচামাল আসতে সময় লাগে দেড়-দুই মাস।স্থানীয়দের মতে পাটি বুনন এর উত্তম সময় হচ্ছে মাঘ-ফাল্গুন মাস।এবং সে পাটি বিক্রির উত্তম সময় হচ্ছে বৈশাখ মাস।
টংগীবাড়ি উপজেলার আব্দুল্লাপুর বাজারে জেলার পাটি বিক্রির সবচেয়ে বড় হাট বসে।প্রতি সপ্তাহে এই হাট থেকে লাখ টাকার পাটিও বিক্রি হয়। নারায়নগঞ্জ,ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ আসে এই হাট থেকে পাইকারী দামে পাটি কেনার জন্য।
প্রতিটা পাটির মূল্য আকারভেদে ২৫০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।শীতপাটির মূল্য এর চেয়ে আরো তিনগুন বেশি।
এক একটা পাটি তৈরি করতে ২ থেকে ৮ দিন পর্যন্ত সময় লাগে।
এত পরিশ্রমের পর ও প্রতিটা পাটিতে লাভ আসে মাত্র ১৫০ টাকার মত।
পাটিশিল্পের এত সম্ভাবনা থাকলেও,লাভের অংশ কম থাকায় পরিবার এর খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে পাটিশিল্পের কর্মীরা।তাদের মতে,বিক্রির পরিমান আরো বেড়ে গেলে গড়ে তাদের আয় আরো বেশি আসবে এই শিল্প থেকে।
শীতলপাটির গ্রহনযোগ্যতা সবসময়েই বেশি।শীতলপাটি মানেই এক প্রকার প্রশান্তি,আবেগ।গ্রামঞ্চলে শীতলপাটির এত বুনন, উৎপাদন দেখা গেলেও শহরে দেখা যায়না খুব একটা।তাই শহরের মানুষের কাছে শীতলপাটির আকাঙ্ক্ষা,গ্রহনযোগ্যতা তূলনামূলক বেশি।
একি অবস্থা উচ্চবিত্তদের ক্ষেত্রেও। অনেক উচ্চবিত্ত,রুচিশীল পরিবার শীতলপাটিকে ওয়ালম্যাট হিসেবেও বাড়িতে সাজিয়ে রাখেন।ইদাদিং পাটি দিয়ে তৈরি গয়না,হাত ব্যাগ,জুতার কিছু ফিউশন দেখা যাচ্ছে,এই সকল পণ্যের যত বেশি প্রচার হবে তত বেশি গ্রহনযোগ্যতা বাড়বে।তাছাড়া এখনো হিন্দুসম্প্রদায় বিয়ে মানেই শীতলপাটি লাগবে।
এই সকল উচ্চবিত্ত,রুচিশীল মানুষদের কাছে শীতলপাটির গ্রহনযোগ্যতা আরো বাড়াতে ই-কমার্স বেশ ভূমিকা রাখবে।
ই-কমার্স খাতে শীতলপাটির প্রচার,প্রসার যত বাড়বে,তত মানুষ এর প্রতি ঝুকবে।পাশাপাশি প্লাস্টিকের তৈরির মাদুরের গ্রহনযোগ্যতাও কমাতে শুরু করবে।প্লাস্টিকের তৈরি দ্রব্য মানেই পরিবেশের ভারসম্য নষ্ট হওয়া।
ই-কমার্স খাতে শীতলপাটি সহ বিভিন্ন পাটির সম্ভাবনা একই সাথে দেশীয় পণ্য প্রচার,কর্মীদের আর্থিক উন্নতি,রুচিশীল দের চাহিদা নিবারন,পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় বেশ ভূমিকা রাখবে।
ফারিয়া ওমর ঝুমুর
মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি,টেকজুম.টিভি
ওনার অফ কারূঘর জুয়েলারি