খাবারের ব্যপারে দিনে দিনে মানুষের বাড়ছে সচেতনতা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অর্গানিক সবজির দোকান গুলোতে লেগেই থাকে ক্রেতাদের ভীড়। ই-কমার্স শপ গুলোতে সবজির অর্ডার বাড়ছে দিনে দিনে। এসব অর্গানিক দোকান বা ই-কমার্স বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান গুলোতে সবজি অপচয় বা নষ্ট হতে দেখা যায় না।
শেরপুরের নালীতাবাড়ি উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নে কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় একশ একর জমিতে লাউ, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, লাল শাক, পালং শাক, মরিচ, ব্রকলি সহ নানা প্রজাতির শীতকালীন শাক-সবজি উৎপাদন হচ্ছে। এসব ফসল উৎপাদনে কীটনাশক ব্যবহার না করে জৈব সার প্রয়োগ করছে স্থানীয় কৃষকরা। এতে ফলন ভালো হচ্ছে এবং ক্রেতাদের চাহিদা বাড়ছে। কৃষকদের বিষমুক্ত সবজির চাহিদা থাকায় অধিক লাভের আশায় ধানের জমিতে তারা বাড়িয়েছে সবজি চাষ। কৃষদের এ সচেতনতার মূলে রয়েছে সরকারি সহযোগীতা।
শীতকালীন সবজি দিয়ে বিষমুক্ত চাষ শুরু হলেও মিষ্টিকুমড়া, পটল, চালকুমড়া, ঢ্যাঁড়স সহ নানা প্রজাতির গ্রীষ্মকালীন সবজিও চাষ হচ্ছে শেরপুরে। সদর উপজেলার ভিমগঞ্জ, চরপক্ষিমারি, বলায়েরচর, লছমনপুর, চরমোচারিয়া, ভেলুয়া ইউনিয়নে ব্যাপক ভাবে সবজির চাষ হয়। এছাড়াও জেলার ঝিনাইগাতী, নকলা, নালিতাবাড়ী, শ্রীবরদী উপজেলা এবং গারো পাহাড়েও সবজির উৎপাদন হয়। এসব সবজি স্থানিয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয় ট্রাকে ট্রাকে। বিশেষ করে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয় শেরপুরের সবজি। ব্রহ্মপুত্র নদের কোলে থাকা সাতনং চর, কামারেরচর, ঝগড়ারচর সহ চরাঞ্চলীয় জমিতে টমেটো, কালা বেগুন, পেয়াজ, রসুন, সরিষা সহ বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজি উৎপাদন হয় বিপুল পরিমাণে। এসব অঞ্চলের মানুষ বাড়ির আঙ্গিনায়ও চাষ করে বিষমুক্ত দেশি শাক-সবজি।
সকল ধরণের জৈব সার স্থানীয় বাজার থেকে ক্রয়ের পরিবর্তে কৃষি বিভাগের উৎসাহ এবং প্রশিক্ষণ পেয়ে কুইক কম্পোস্ট, ভার্মি কম্পোস্ট সহ অধিকাংশ জৈব সার নিজেরাই তৈরি করে স্থানীয় কৃষকরা। এতে করে তাদের অর্থ যেমন সাশ্রয় হয় তেমনি জমিতে সার প্রয়োগ করে সন্তুষ্ট হতে পারে কৃষকরা। কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ”নিজেদের উৎপাদিত জৈব সার ব্যবহারে খরচ কমে লাভের পরিমাণ বেড়েছে। তাই লোকসান গুনতে হচ্ছে না ফসল উৎপাদনে। কৃষকরা আরও জানায়, জমিতে কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব সার প্রয়োগ করায় ফলন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এতে তারা সন্তষ্ট। কিন্তু মাঝে মাঝে ঢাকাইয়া পাইকার পেতে সমস্যা হলে ফসল বিক্রি নিয়ে সংকটে পরতে হয়।”
স্থানীয় ই-কমার্স উদ্যোক্তারা এসব বিষমুক্ত সবজির নিয়ে অনলাইনে কাজ করতে পারে ব্যাপক ভাবে। এতে করে কৃষি পণ্য বিক্রয় নিয়ে ভোগান্তিতে পরতে হবে না স্থানীয় কৃষকদের। সেই সাথে রাজধানীবাসী সহ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা পাবে তাজা ও বিষমুক্ত সবজি। এটি “নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন” বাস্তবায়নেও ভূমিকা রাখবে বলিষ্ঠ ভাবে।
এ প্রতিবেদন লেখার পূর্বে টেস্টবিডি নামক ফেসবুক গ্রুপে ”বিষ মুক্ত সবজি পেলে নিকটস্থ বাজার নাকি অনলাইন” থেকে ক্রয় করতে চায় ক্রেতারা, তা জানতে চেয়ে একটি পোল করা হয়। সেখানে ৫ ঘন্টায় মোট ৩০১টি ভোট প্রদান করে গ্রুপ মেম্বাররা। ৭৪% ক্রেতা বিষমুক্ত সবজি ক্রয় করতে চায় অনলাইন থেকে আর ২৬% ক্রেতা ক্রয় করতে চান নিকটস্থ বাজার থেকে। আবার কেউ কেউ উভয় স্থান থেকে ক্রয় করার মন্তব্য করেছেন।
মন্তব্যের ঘরে হাসিনা আক্তার লিখছেন, “সব কিছু ঠিক থাকলে যে কোন জায়গায় থেকে কিনবো।” নায়মা আহমেদ লিখছেন, “বিষমুক্ত জানা থাকলে অবশ্যই অনলাইন থেকে কিনবো, এলাকার সবজিওয়ালা থেকে তো ঠেকায় পরে কিনি।” রওসান আক্তার লিখছেন, “যেহেতু অনলাইনে কেনাকাটা করলে পণ্য সম্পর্কে সবকিছুই বিস্তারিত জানা যায় এবং পণ্য গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়। সে ক্ষেত্রে বিষমুক্ত সবজি পেলে আমি অনলাইন থেকে কেনাকাটা করব।” নাছরিন সুলতানা লিখছেন, “টাটকা সবজি যদি কাছে বাজার থাকে অবশ্যই কাছের বাজার থেকেই নিবো।”
লেখক
মোঃ দেলোয়ার হোসেন, প্রতিষ্ঠাতা : আওয়ার শেরপুর