চীনভিত্তিক হুয়াওয়ের নেটওয়ার্ক সরঞ্জামে নিষেধাজ্ঞা দিলে শত শত মিলিয়ন পাউন্ড আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে যুক্তরাজ্য। পাশাপাশি পঞ্চম প্রজন্মের দ্রুতগতির মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি চালুর ক্ষেত্রেও অন্য দেশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে পড়বে দেশটি। বিবৃতিতে ব্রিটিশ বহুজাতিক টেলিযোগাযোগ কোম্পানি ভোডাফোন গ্রুপ পিএলসির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। খবর রয়টার্স।
বিশ্বের বৃহৎ নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম ও দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানি হুয়াওয়ে। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটির নেটওয়ার্ক সরঞ্জামের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছে। বলা হচ্ছে, বেইজিং প্রতিষ্ঠানটিকে গ্রাহক তথ্য হস্তান্তরে বাধ্য করছে। গুরুত্বপূর্ণ এসব তথ্য কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দেশের নাগরিক ও সরকারের ওপর নজরদারি কার্যক্রম পরিচালনা করছে চীন। যদিও এমন অভিযোগের সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। উল্টো ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন মিত্র দেশগুলোকেও হুয়াওয়ের নেটওয়ার্ক সরঞ্জামে নিষেধাজ্ঞা আরোপে প্ররোচিত করছে।
বিশ্বব্যাপী ফাইভজির বাণিজ্যিকীকরণ নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। এ নেটওয়ার্ক প্রযুক্তিতে ডাটা ডাউনলোড ও আপলোডে দ্রুতগতি মিলবে, যা মোবাইল ইন্টারনেট সেবা খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। বিশ্বের অনেক দেশ এরই মধ্যে ফাইভজি নেটওয়ার্কের পরীক্ষা চালিয়েছে। এ মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তিতে ফোরজির চেয়ে কয়েক গুণ উন্নত সেবা মিলবে বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ফাইভজির কল্যাণে টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলোর ব্যবসার পরিধি ও আয় বাড়বে।
বিবৃতিতে ভোডাফোন জানিয়েছে, তারা ব্রিটেন সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক গত মাসে তাদের কোর নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ের পণ্য ব্যবহার স্থগিত করেছে। তবে প্রেক্ষাপট বিবেচনা না করে যুক্তরাষ্ট্রের প্ররোচনায় যুক্তরাজ্য হুয়াওয়ের পণ্যে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে তা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণ হবে। কারণ হুয়াওয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশে তাদের ফাইভজি নেটওয়ার্কের পরীক্ষা চালিয়েছে। এ-সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি উন্নয়নে অন্য নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নির্মাতাদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
গত বৃহস্পতিবার হুয়াওয়ের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) স্কট পিটি বলেন, যুক্তরাজ্যে ভোডাফোনের এক-তৃতীয়াংশ বা প্রায় ১৮ হাজার বেসস্টেশনে হুয়াওয়ের রেডিও সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে। এখন যুক্তরাজ্য হুয়াওয়ের নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নিষিদ্ধ করলে বিপুলসংখ্যক বেসস্টেশনে ব্যবহূত রেডিও সরঞ্জাম প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়। এটা করতে গেলে ভোডাফোনের পুরো নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ঝুঁকিতে পড়বে, যা ফাইভজি টেকনোলজির ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তিনি বলেন, চলতি বছরের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ১৯টি অঞ্চল ও শহরে ফাইভজি নেটওয়ার্ক চালু করবে ভোডাফোন। পাশাপাশি খুব অল্প সময়ের মধ্যে আরো সাতটি শহরের অন্তত ১২টি অঞ্চল এ নেটওয়ার্ক সেবার আওতায় নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। নেটওয়ার্ক সিস্টেম থেকে হুয়াওয়ের সরঞ্জাম বর্জনে বাধ্য করা হলে ভোডাফোন বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে। কারণ প্রতিষ্ঠানটির ৩২ শতাংশ বেসস্টেশনে হুয়াওয়ের রেডিও টেকনোলজি ব্যবহার হচ্ছে। নেটওয়ার্ক অবকাঠামোতে হুয়াওয়ের সরঞ্জাম বর্জনে বাধ্য করা হলে ভোডাফোনের ফাইভজি ব্যবসা পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হবে। সেটা প্রতিষ্ঠানটির জন্য বড় অংকের ক্ষতির কারণ হবে।
ভোডাফোনের সিটিও স্কট পিটি বলেন, নেটওয়ার্ক অবকাঠামোতে হুয়াওয়ের রেডিও টেকনোলজি ব্যবহারে কোনো ঝুঁকি দেখছেন না তিনি। নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা থাকলে জটিল ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক ও কোর নেটওয়ার্কে প্রতিষ্ঠানটির সরঞ্জাম বর্জন করা যেতে পারে।
ব্রিটিশ সরকার টেলিযোগাযোগ সরবরাহ চেইন পর্যালোচনা করছে। হুয়াওয়ের পণ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে কিনা, সে বিষয়ে আগামী মাসে প্রতিবেদন দেয়া হবে।
গত মাসে যুক্তরাজ্যের জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কেন্দ্রের প্রধান জানিয়েছিলেন, হুয়াওয়ের সরঞ্জাম ব্যবহারের ফলে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় নিরাপত্তা দুর্বলতা থাকলেও তা মোকাবেলা করার সামর্থ্য তাদের রয়েছে। এছাড়া চীনা প্রতিষ্ঠানটির নেটওয়ার্ক সরঞ্জামে নিরাপত্তা ত্রুটি থাকার কোনো প্রমাণ তারা পাননি।