মানুষ প্রকৃতি প্রেমী, যান্ত্রিক জীবনে একটু প্রকৃতির ছোঁয়া জেনো মনে প্রশান্তি এনে দেয়।প্রকৃতি থেকে উপহারগুলো আমাদের মন করে তুলে প্রফুল্ল।প্রকৃতি থেকে পাওয়া তেমনি উপহার হলো পদ্মফুলের রাজ্য। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় আছে পদ্মবিল এবং তা প্রতি বর্ষার সময়ে সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় আমাদের এই দেশের প্রকৃতির। পদ্মফুল তার সৌরভ ছড়াতে থাকে বর্ষাকাল থেকে শরৎ কাল পর্যন্ত,আবার অনেক সময় হেমন্ত কালকেও স্পর্শ করে তার সৌরভ।সৌন্দর্য পিপাসু মানুষগুলো পদ্মবিলে নিজেদের কিছুটা সময় কাটাতে পেরে অনেক বেশী খুশি হয়। পদ্মবিল বা পদ্মপুকুর গুলো যে শুধু সৌন্দর্য উপভোগ করার জায়গা তা নয় বরং পদ্মফুল, পদ্মবীজ ও পদ্মপাতার অনেক ব্যবহার ও উপকারীতা রয়েছে।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বড়বিলা পদ্মবিল প্রায় ৩০০ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত।বর্ষা ও শরৎ কালে এই বিস্তৃত এলাকা জুড়ে প্রতিদিন হাজার হাজার পদ্মফুল তার সৌরভ ছড়ায়।যার সৌন্দর্য মানুষের মনকে আকৃষ্ট করে। যান্ত্রিক জীবনে একটু প্রশান্তি পেতে এই পদ্মবিল ঘুরাঘুরি করার জন্য পারফেক্ট একটি জায়গায়।কথায় আছে মানুষ প্রকৃতি প্রেমী, তাই প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে পারলে মানুষ শান্তি পায়।বড়বিলার আশেপাশের মানুষ গুলো অনেকটা যত্নের সাথে রাখে এই বিলকে, পদ্মফুল ফোটার মৌসুমে এই বিলের সৌন্দর্যের রক্ষনাবেক্ষন জরুরি হয়ে পরে।
ময়মনসিংহের পর্যটন এরিয়া হিসেবে বড়বিলা পদ্মবিল –
পর্যটন এরিয়া হিসেবে পরিচিত এই বিল সম্পর্কে আগে আমাদের দেশের মানুষ তেমন একটা জানতো না, এমনকি ময়মনসিংহ জেলায়ও অনেক মানুষ এই বিলের সৌন্দর্যের কথা জানে না।গতকয়েক বছর যাবত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বদৌলতে কিছু মানুষ এই পদ্মবিলের ছবি দেওয়ায় অনেকে জানতে পারে।ফলে কিছু সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ উপভোগ করতে যায় এর সৌন্দর্য।নৌকায় করে পুরো পদ্মবিল ঘুরে বেড়ানো যায়।অনেকে ফটোগ্রাফি করার জন্য আদর্শ জায়গা হিসেবে বেছে নেয় এই পদ্মবিলকে।
পর্যটন এরিয়া হিসেবে বড়বিলা পদ্মবিল পরিচিতি পেতে পারে ময়মনসিংহের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে। প্রয়োজন শুধু শিক্ষিত উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা এবং পর্যটন শিল্পে ময়মনসিংহকে সমৃদ্ধ করা।
ময়মনসিংহ শহর থেকে ফুলবাড়িয়া উপজেলার বড়বিলা পদ্মবিলে যেতে দেড় ঘন্টা থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগে।তবে কাঁচা রাস্তায় যাতায়াত করতে হয় বলে অনেক পর্যটককে ভোগান্তিতে পরতে হয় বলে অনেকটাই পিছিয়ে আছে আপার সৌন্দর্যের জলরাশি এই বিস্তৃত এলাকা।এই এলাকায় পর্যটকদের জন্য নেই কোনো পর্যটন স্পট,নেই যাতায়াতের সুবিধা। তাই এসব এলাকার জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে হলে এবং পর্যটন এরিয়াকে জনপ্রিয় করে তুলতে হলে প্রয়োজন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা।
পদ্মপাতা ব্যবহারের প্রচলন –
পদ্মপাতা ব্যবহার করা হতো আগেকার দিনে,কিন্তু বর্তমান সময়ে খুব একটা দেখা যায় না। প্রাচীনকালে যখন গ্রামাঞ্চলে শিশুদের জ্বর হতো তখন তাদের শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য পদ্মপাতার বিছিয়ে সেখানে সোয়ে থাকতে দিতো তাহলে শরীর শীতলতায় ভরে যেতো।এছাড়া গ্রামের বাজারগুলোতে হলুদ গুড়ো,মরিচ গুড়ো, নাড়ু, মুড়ি মুড়কি ইত্যাদি বিক্রি করা হতো। কারন পদ্মপাতা পরিবেশ বান্ধব ও সহজলভ্য ছিলো। বর্তমানে পদ্মপাতার ব্যবহার দেখা যায় শুধু সনাতন ধর্মালম্বীদের পূজা পার্বনে।
পদ্মফুলের ব্যবহার -পদ্মমধু দিয়ে চোখের ঔষধ সহ আরো অনেক ধরনের ঔষধ তৈরি করা হয়,পদ্মফুল থেকে পদ্মমধু সংরক্ষণ করা হয়।বর্তমানে অনেক ধরনের প্রসাধনী তৈরির কাজেও পদ্মফুলের ব্যবহার হয়।
সনাতন ধর্মালম্বীদের কাছে পদ্মফুল একটি পবিত্র ফুল হিসেবে পরিচিত। দুর্গাপূজায় ১০৮ টি পদ্মফল দূর্গদেবীকে সপ্তমী অষ্টমী ও নবমী তিথিতে নিবেদন করতে হয়। কৃত্তিবাসী রামায়ণের কাহিনিতে রয়েছে দেবীর প্রসন্নতা লাভের জন্য অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে ১০৮টি ফুল দিয়ে দেবীর বন্দনা করার কথা।
তাই দুর্গাপূজার সময় ময়মনসিংহ শহরসহ রাজধানী ঢাকায়ও যায় এখানকার পদ্মফুল।পদ্মফুলের চাহিদা রয়েছে অনেক বেশী কিন্তু সেই তুলনায় হাতের কাছে মানুষ পায় খুব কম।
পদ্মবীজের উপকারীতা –
পদ্মবীজ অনেক উপকারী একটি উপাদান, এতে রয়েছে মিনারেল, ফ্যাট ও ট্র্যাস জাতীয় উপাদান।পদ্ম বীজ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব উপকারী,মানুষের ওজন কমাতে সাহায্য করে পদ্মবীজ,ক্ষুধা কমায়, ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় গেরিলা বাহিনী ও সাধারণ মানুষ পদ্মবীজ খেয়ে কাটিয়ে দিতো কয়োকদিন।বীজগুলো রান্না করা যায় বিভিন্ন ভাবে খিচুরীতে, তরকারিতে ও বরা হিসেবেও খাওয়া হয়।
পদ্মবীজ থেকে তৈরি করা হয় তৈল,যা চুল ও ত্বকের জন্যও খুব উপকারী।
বর্তমানে পদ্মফুল ও পদ্মবীজ থেকে তৈল,মধু,প্রসাধনী,
খাবারসহ অনেক কিছু তৈরি করা হচ্ছে।বীজগুলো খেতে খুব সুস্বাদু হয়। পদ্মফুল ও বীজের অনেক বেশী চাহিদা রয়েছে আমাদের দেশে ও দেশের বাহিরে।সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে উদ্যোগ নিলে পদ্ম থেকে উৎপাদিত পণ্য দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে।
এক্ষেত্রে কিছু শিক্ষিত উদ্যোক্তা যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে ভালো ভালো কনটেন্ট লেখার ফলে খুব ভালো ভাবে যেমন পরিচিত পাবে তেমনি তার পণ্যের তাহিদাও থাকবে,তবে সেই উদ্যোক্তাকে হতে হবে ডেডিকেটেড।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বড়বিলা পদ্মবিলকে পর্যটন এরিয়া হিসেবে পরিচিত করতে পারলে এখানকার কিছু মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। বেকারত্ব হ্রাসেও ভূমিকা রাখতে পারে পদ্ম থেকে উৎপাদিত পণ্য নিয়ে উদ্যোগ গ্রহন করার মাধ্যমে।
ময়মনসিংহের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে পদ্ম থেকে উৎপাদিত পণ্য ও বড়বিলা পদ্মবিল পর্যটন এরিয়া।তাই প্রয়োজন বেশী বেশী প্রচার করা এবং সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহন করা।