হলুদ দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের কাছে খুব পরিচিত একটি রান্নার উপকরণ। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই রান্নায় হলুদ ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে হলুদ ছাড়া যেনো রান্নাই হয় না। হলুদে পটাসিয়াম, ফাইবার, ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেসিয়াম ও অন্যান্য উপাদান রয়েছে যা প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী।
প্রাচীন ভারতীয় ও চৈনিক আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় হলুদের ব্যবহার অনেক হতো।হলুদ গুড়ো দীর্ঘদিনের ঘা বা খত শুকাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রান্না ছাড়াও হলুদের বহুল ব্যবহার রয়েছে।যেমন-রূপচর্চায় হলুদের ব্যবহার,খত শুকানোর কাজে হলুদের ব্যবহার,আয়ুর্বেদ ঔষধ হিসেবে এর ব্যবহার,সর্দি কাশির ঔষধ হিসেবে এর ব্যবহার।
প্রসাধনী সামগ্রী তৈরির জন্য হলুদের কদর বিশ্ব জোরে ও কাপড়ে হলুদ রং করার জন্যও ব্যবহার করা হয় হলুদ। হলুদের বিভিন্ন রকম ব্যবহার রেয়েছে তাই এর চাহিদাও রয়েছে।
আমাদের ময়মনসিংহের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে হলুদ নিয়ে কাজ করে এমন উদ্যোক্তা এখনো চোখে পরেনি। অথচ এ অঞ্চলের খুব সম্ভাবনাময় পণ্য এটি। হলুদের ব্যবহার কখনো কমে না, বরং জনসংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি এর ব্যবহারও বাড়ছে।শুধু মাত্র রান্না করা খাবারের বেলায় যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে দেখা যায় যে যত মানুষ বাড়তে থাকবে হলুদের চাহিদা ততই বাড়তে থাকবে। তাই এই পণ্য নিয়ে ডেডিকেটেড ভাবে কাজ করলে কখনো পিছিয়ে পরার কথা নয়।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা হলুদের জন্য ময়মনসিংহ জেলায় বিখ্যাত।ফলবাড়িয়ার সন্তোষপুর এলাকায় প্রচুর পরিমানে হলুদ চাষ হয় এবং উৎপাদনও খুব ভালো হয়। কিন্তু এই সম্ভাবনাময় পণ্যকে ই-কমার্সের আওতায় এখনো খুব একটা পরিচিত করা সম্ভব হয়নি এমন কি তেমন ই-কমার্স উদ্যোক্তাও কাজ করতে এগিয়ে আসছে না।কিন্তু বেশী বেশী প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে জানানো সম্ভব হবে যে এই অঞ্চলের হলুদ বিক্রি করেও লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার প্রতিবছরে হলুদের চাষাবাদ বাড়ছে।মুক্তাগাছার রসুলপুর এলাকা টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকার পাশাপাশি হওয়ায় এসব পাহাড়ি এলাকায় হলুদের ব্যাপক ফলন হয়।যা স্থানীয় বাজারগুলোতেই বিক্রি করে কৃষকরা।
ময়মনসিংহের গৌড়িপুর উপজেলায়ও হলুদ চাষ করা হয়। উপজেলার বিশকা,বাঙনামী,কলতাপাড়া সহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে কৃষকরা হলুদ চাষ করে থাকে।প্রতি রবি মৌসুমের শেষের দিকে হলুদগুলো তুলে তা পরিস্কার করে কৃষকরা কাঁচা হলুদ বিক্রি করে দেয় পাইকারের কাছে বা স্থানীয় বাজারে।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বাটাজোর,গিলারচালা সহ আরো কয়েকটি পাহাড়ি একালায় প্রচুর হলুদ চাষ হয়। এসব পাহাড়ি অঞ্চলে সেচের সমস্যার জন্য অন্য ফসল ফলানো সম্ভব হয়না, তাই পাহাড়ি জমিকেও কাজে লাগাচ্ছে এ এলাকার কৃষকরা। তারা এই জমিগুলোতে প্রতি বৈশাখ মাসে হলুদের চাষ করে থাকে। একবছর পরে হলুদ গাছের নিচ থেকে তুলা হয় হলুদ।হলুদ বিক্রি করে অনেক কৃষকরা অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছে।
ময়মনসিংহ যেহেতু কৃষি প্রধান জেলা তাই কৃষি পণ্য গুলোর খুব ভালো চাষাবাদ হয় এই অঞ্চলে।বিশেষজ্ঞ দের মতে, ময়মনসিংহের অঞ্চল গুলো দোঁয়াশ ও বেলে দোঁয়াশ মাটি হওয়ায় এই অঞ্চল হলুদ চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী।হলুদ চাষ এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করে দিয়েছে।এ অঞ্চলের ডেডিকেটেড উদ্যোক্তারা চাইলে কৃষকদের কাছ থেকে খুব সহজেই সংগ্রহ করতে পারে এবং প্রসেসিং করে তা বাজারজাত করতে পারে। এই জন্য প্রয়োজন বেশী বেশী প্রচার করা।
হলুদ এমন একটি সম্ভাবনাময় পণ্য যা শুধু দেশেই নয় বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় এর চাহিদা রয়েছে। তাই ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া,ভালুকা,মুক্তাগাছা ও গৌড়িপুরের হলুদকে ই-কমার্সের আওতায় আনা সময়ের দাবী। এদিকে কিছু উদ্যোক্তা কাজ করলেই সহজেই নিজের বিজনেসে যেমন ভালো করতে পারবে তেমনি এই অঞ্চলের কৃষকদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।
ময়মনসিংহের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে অন্য সব কৃষি পণ্যের সাথে হলুদও দাপটের সাথে মার্কেটে টিকে থাকতে পারবে। তাই ময়মনসিংহ অঞ্চলের এসব কৃষি পণ্য সম্পর্কে বেশী বেশী কনটেন্ট তৈরি করতে হবে যা পড়ে সারাদেশের মানুষ জানতে পারবে আমাদের জেলার সম্ভাবনাময় পণ্য সম্পর্কে ।অডিও কনটেন্ট ও ভিডিও কনটেন্ট তৈরি, মিডিয়ায় প্রচার ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের ডেডিকেশন সবদিকেই সবার এগিয়ে আসতে হবে।