কৃষিনির্ভর আমাদের বাংলাদেশ। যেখানে ফল, ফুল, কৃষিজ পণ্যের কোন কমতি নেই। ফুল, ফসল এর যেমন নিত্য নৈমিত্তিক জাত এর উদ্ভাবনা চলে তেমনি চলে ফলের ও৷ দেশের খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণসহ অর্থ সামাজিক উন্নয়নে সরকার ফল উৎপাদন এ জোড়ালো পদক্ষেপ নিয়েছেন সাথে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে ফল খাওয়ার প্রবণতা ও বেড়ে গেছে সাধারণ মানুষদের মাঝে।
আমরা দেশী বা বিদেশী ভেদাভেদ করি অনেক সময়। বিদেশী ফল দামী, কিভাবে খাবো, কেমিক্যাল দেয়া কিনা বা বিভিন্ন রকম চিন্তা আমাদের মাথায় দেখা দেয়। তবে একটা কথা কিন্ত আসলেই চিন্তার বিষয় যে ফল কি দেশ চিনে?
চিনেনা, তবু কেন দেশী বা বিদেশীর তকমা পেতে হয়?
আসলে কি, সেই আদিকাল থেকে যেসব ফল আমাদের দেশে চাষ হয়ে আসছে সেগুলোই আমাদের প্রচলিত দেশী ফল। যেমনঃ আম, জাম, কাঠাল, লিচু, কলা, পেয়েরা, পেঁপে এসব। প্রায় ১৩০ রকম দেশী ফল আছে আমাদের দেশে। যার মাঝে বুনো ফল প্রায় ৬০ টি। বাকি ৭০ টির মধ্যে আম, কাঠাল, কলা, পেয়ারা, লেবু, লিচু, নারিকেল, কুল, আনারস, পেঁপে এই দশটি হলো আমাদের প্রধান দেশী ফল।
তাহলে বিদেশী ফল কোনগুলা? বিদেশী ফল কি আমাদের দেশে হয়না?
যেসব ফল গুলোর উৎপত্তি বিদেশে এবং সেখানেই বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হয় সেগুলো হলো বিদেশী ফল। তবে আমাদের দেশের জলবায়ু এমনই যে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এমন অনেক ফলের সম্ভাবনা আমাদের এখানে রয়েছে, যেগুলো বিদেশী ফল হলেও সুন্দরভাবে চাষাবাদ হচ্ছে আমাদের দেশে এবং বাণিজ্যিকভাবেই চাষ সম্ভব হচ্ছে এখন। দেশী ফল এ যেমন চাহিদা, মানুষেরা নির্দ্বিধায় একসেপ্ট করে ঠিক তেমনি বিদেশী ফলগুলোকেও এখন খাবারের লিস্ট এ প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে৷
আমাদের দেশ এর সাথে জলবায়ুতে মিল না থাকলেও অনেক বিদেশী ফল এর বাণিজ্যিকভাবেই চাষ হচ্ছে আমাদের দেশে৷ ইভেন অনেক ফল এর বিভিন্ন জাত উদ্ভাবন ও করা হচ্ছে যা একদম আমাদের দেশী ফলের মত বিস্তার লাভ করছে আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। আমাদের দেশে এ পর্যন্ত যতগুলো বিদেশী ফল সফলভাবে প্রবর্তন সম্ভব হয়েছে তার মধ্যে ড্রাগন ফ্রুট, স্ট্রবেরি, রামবুটান, অ্যাভোকাডো,, ম্যাঙ্গোস্টিন, রামবুটান, মাল্টা, লংগান, ল্যাংসাট, জাবাটিকাবা, শান্তল, পিচফল, আলুবোখারা, পার্সিমন, এগ ফ্রুট, সাওয়ার সপ, নাশপাতি, প্যাসন ফ্রুট, অন্যতম। এসব ফলগুলোকে আমাদের দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান গুলোতে চাষ করছে, উন্নত দেশোপযোগী জাত উদ্ভাবন করেছে এবং অনেক গুলো ফল থেকেই আশানুরূপ ফল ও আসছে। এর ই রেষ ধরে অনেকেই বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিত সমাজ ফল চাষের দিকে ঝুকছেন এবং অনেক ফলের বাণিজ্যিক ফলন ও হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর বর্ষব্যাপি ফল উৎপাদন ও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. মেহেদি মাসুদ এর দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ফলের চারা বিক্রি হয়েছিলো ৩ কোটি টাকার যা ২০২০-২১ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার৷ এটা ছোট্ট একটা সমীকরণ দিয়েই বোঝা যায় যে কতটা বেড়ে চলছে ফলের চারা বিক্রি৷
আয়তনে বিশ্বের অন্যতম ছোট দেশ এবং সাথে বাড়তি জনসংখ্যার দেশ হলেও ফল উৎপাদনে সফলতার অন্যতম উদাহরণ আমাদের দেশ। এমনকি ফল উৎপাদন এ আমাদের বাংলাদেশ বিশ্বের ১০ টি শীর্ষ দেশের মধ্যে নিজের নাম লেখাতে সক্ষম হয়েছে। ১৮ বছর ধরে বাংলাদেশে ১১ শতাংশ হারে ফল উৎপাদন বাড়ছে। শুধু যে উৎপাদন এর দিক থেকে তা নয়, বাড়ছে মাথাপিছু ফল খাওয়ার পরিমাণ ও৷ ২০০৬ সালে যেখানে মানুষ ৫৫ গ্রাম করে দৈনিক ফল খেত এখন তা বেড়ে হয়েছে ৮৫ গ্রাম৷ এখন অন্তত ২২ প্রজাতির ফল মানুষ নিয়মিত খায়৷ এর মাঝে বিদেশী ফল ভাবি আমরা যাদের তার সংখ্যা ও কম নয়। আর তাইতো শিক্ষিত উদ্যোক্তা সমাজ বিদেশী ফল এর বাণিজ্যিক চাষাবাদে হচ্ছে ব্যাপক আগ্রহী।
আমাদের টাঙ্গাইল এ এমন বেশ কিছু ফলের বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে। যেমন ড্রাগন ফল, মাল্টা, সৌদি আরবের খেজুর এর বেশ কয়েকটি জাত, রামবুটান, স্ট্রবেরি, অ্যাভোকাডো, রকমেলন, বারোমাসি তরমুজ, ডুরিয়ান, এ ফল গুলোর বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে আমাদের টাঙ্গাইল এ।
টাঙ্গাইল এর ঘাটাইল এর রসুলপুর এ শামছুল আলম, যিনি পেশায় শিক্ষক, তার শিক্ষকতার পাশাপাশি ফলের বাগান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন পুরো এলাকাবাসী কে। তিনি খুব বেশি আগ্রহী ছিলেন কেমিক্যাল মুক্ত ফল উৎপাদন এর। আর এই আগ্রহ থেকেই গড়ে তোলের ৭৮ প্রজাতির ফলের গাছ এর সমন্বয়ে পুরো সাত একর জায়গা জুড়ে ফলের বাগান।
তার ফলের বাগানে যেমন শোভা পায় দেশী ফল তেমনি বেড়ে উঠেছে বিদেশী বিভিন্ন ফল। সৌদি খেজুর, ভিয়েতনামি ওপি নারিকেল, ড্রাগন ফল, ত্বীন ফল, কালো আঙুর, আপেল, রামবুটান, নাশপাতি, এগফ্রুট, ডুরিয়ান, অ্যাভোকাডো, ম্যাংগোস্টিন, থাই বাতাবিলেবু, চায়না কমলা, চায়না লিচু, চায়না পেয়ারা, সুদানি শরিফা, জাপটিকাবা, আলু বোখারা, পামওয়েল, বিলেতি গাব, অ্যানোনিয়া, ব্রনাই সহ আরো বেশ কিছু৷ তাছাড়া কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, কাঠবাদাম, মোসম্বি ও তার বাগানে দিব্যি সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠেছে। তিনি এই সাত একর জমি জুড়ে এসব গাছ লাগিয়েছেন এবং নিজের স্বপ্নের চেয়ে ও ভালো ফল পেয়েছেন। হয়েছেন এলাকার সকলের কাছে একজন সেরা উদাহরণ। তাকে দেখেই এখন অনেকেই অনুপ্রানিত হয়েছেন বিদেশী ফল উৎপাদন এর দিকে। তিনি চান বিদেশী ফলের জয়লাভের এ সময়ে বিদেশী ফল ই দেশে ফলিয়ে বাজারের সরবরাহ বাড়াতে যেন বিদেশী ফলের উপর আমাদের নির্ভরশীল হতে না হয়৷ বরং সকলে কেমিক্যালমুক্ত ফল খাবে। এতে দেশের অর্থনীতি তে ও দারুণ পজিটিভ প্রভাব ফেলবে অবশ্যই।
শুধু ঘাটাইল না সখিপুর জেলার শোলাপ্রতিমা গ্রামের মোঃ হারুন অর রশিদ ৩০ শতক জমিতে মাল্টার চাষ করেছেন এবং সফলতা পেয়েছেন। দুই বছরের মাথায় ই তিনি ফল পান এবং বিক্রি ও করেছিলেন প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার৷ বছর ঘুড়ে এ উৎপাদন বেড়েই চলেছে৷ তার মতে চাকুরীর পিছনে না ঘুড়ে এক হাজার চারা লাগিয়ে পরিচর্যা করতে পারলেও গুডবায় বলা যাবে বিদেশী মাল্টা কে।
মধুপুর এর কফিজয়ী সানোয়ার সাহেব ও কম যান না। তাকে উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা পর্যন্ত উদ্যোমী ও সাহসী উদ্যোক্তা বলেই আখ্যায়িত করেন৷ কফি চাষে সফল হয়ে সফলতার তকমা মাথায় নিলেও তিনি তার কফির পাশাপাশি ও চাষ করছেন এমন অনেক দেশী ফল এবং পাশাপাশি করছেন বিদেশী ফল মাল্টা, ড্রাগন, সৌদি খেজুর এর বাণিজ্যিক চাষ।
এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায় বিভিন্নভাবেই অনেক ফলচাষী উদ্যোক্তা রয়েছে যেমন সখীপুরে সৌদি খেজুর এর ই বাগান করেছেন, টাঙ্গাইল সদরেই চাষ হচ্ছে বারোমাসি তরমুজ এর। তাছাড়াও যারা ফলের দিকে ঝুকছেন তারা সবাই বিদেশী ফলকে বেছে নিয়েছেন তাদের এ সেকটর এ।
এর মধ্যে কিছু ফলের কথা না বললেই নয় যেগুলো চাষ করে সম্ভাবনার মুখ দেখছেন উদ্যোমী চাষীরা এবং এগুলোর চাষ হচ্ছে টাঙ্গাইল এ বেশ ভালোভাবেই। যেমনঃ
ড্রাগন ফ্রুটসঃ
বাহিরের দেশের যে ফলগুলোকে আমাদের দেশ বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা হচ্ছে তার মধ্যে সবথেকে এগিয়ে ড্রাগন ফ্রুটস। এই ফল বিশ্বের অন্যতম পরিচিত ফল এবং বিভিন্ন দেশে এর চাষ ও হয়৷ ভিয়েতনাম এ সবথেকে বেশি বাণিজ্যিক ফলন হলেও আমাদের দেশেও বেশ সাড়া ফেলেছে।
বাংলাদেশ এ প্রথম এ ফলের চাষ শুরু হয় ২০০৭ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর জার্মপ্লাজম সেন্টার এ৷ পরবর্তীতে এখান থেকে উদ্ভুত বাউ ড্রাগন ফল ১ এবং বাউ ড্রাগন ফল ২ নামক সাদা ও লাল দুইটি জাত এখন আমাদের দেশের বিভিন্ন জেলায় উপজেলায় খুব ভালোভাবেই চাষ করা যাচ্ছে।
টাঙ্গাইল এর ঘাটাইল, মধুপুর, সখীপুর এর পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপক ফলন হচ্ছে ড্রাগন এর। কৃষকের মুখে ফুটিয়েছে হাসি আলহামদুলিল্লাহ। সবাই এই ফলকে খুব সহজে একসেপ্ট করে নিয়েছে, খুব সহজেই চাষাবাদ সম্ভব হচ্ছে এবং খরচ ও কম। এখন ড্রাগন মানে আমাদের দেশীয় ফলের মতই সহজে প্রাপ্য৷ পুষ্টিমান এ ও সেরা নিঃসন্দেহে৷
মাল্টাঃ
মাল্টা আমাদের দেশে কতটা চাহিদাসম্পন্ন একটি ফল তা হয়তো নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা।গত অর্থবছরে শুধুমাত্র মাল্টা ই আমদানি হয়েছে ১৯ কোটি ৯১ লক্ষ টাকার এবং আমাদের দেশে আমদানীতে সবথেকে এগিয়ে আপেল এবং এর পর ই মাল্টার অবস্থান এবং পুরো বিশ্বে আমদানিতে ৮ম। এই ফল দেশে উৎপাদন হলে এবং বাণিজ্যিক ফলন হলে আমাদানি নির্ভর অনেকটা ই কমে যেত। এখন সেটাই সম্ভব হচ্ছে।
জাম্বুরা এবং কমলার সংকরায়ণে বারি মাল্টা ১ উদ্ভাবন করা হয়েছে যা সারাদেশ জুড়ে ই চাষ সম্ভব হচ্ছে। টাঙ্গাইল এ ঘাটাইল, মধুপুর, সখীপুর, কালিহাতি, দেলদুয়ার উপজেলার বিভিন্ন জায়গাতেই বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হচ্ছে। অনেক উপকারী এ ফল নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য।
রকমেলনঃ
রকমেলন হলো মাস্কমেলন গোত্রের একটি ফল যা আরবে সাম্মাম বলা হয়। উপরের লেয়ার পাথরের এর মতই দেখতে তাই একে রকমেলন বলা হয়। খেতে বেশ সুস্বাদু এ ফল তাই এর নাম অনেকেই সুইট মেলন বা সুইট রক বাঙ্গী ও বলে থাকেন । মরুভূমির সাম্মাম এর চাষ হচ্ছে টাঙ্গাইল এ ও। সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়ন এ, দেলদুয়ার উপজেলাতে শুরু হয়েছে এর চাষ এবং বেশ ভালো সম্ভাবনা দেখছেন কৃষকরা৷ একবার চাষবকরে এর ফলন পাওয়া সম্ভব ৩ বার এবং ফলনে খরচ ও কম। বাংলাদেশ এ তরমুজ যেসব জমিতে হয় সেসব জমিতে ই এগুলোর ফলন সম্ভব জন্য গবেষকরা ও খুব প্রেফার করছেন এ ফলকে৷
বারোমাসী তরমুজঃ
বারোমাসি তরমুজ মূলত ব্ল্যাকবেরী এবং ইয়েলো বেরী তরমুজ। এরা মূলত থাইল্যান্ড এর জাত হলেও আমাদের দেশের পরিবেশের সাথে সুন্দরভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে৷ প্রচুর ফলন হচ্ছে৷ টাঙ্গাইল এ ও যেমন কয়েকটি উপজেলায় চাষ হচ্ছে তেমনি এর চাষ হচ্ছে সারাদেশ জুড়ে বিভিন্ন জেলায়। শুধুমাত্র গরম এর জন্য অপেক্ষা না, সারাবছর ই এসব তরমুজ পাওয়া যাবে জন্য বিশাল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে এই বারোমাসি তরমুজ৷
সৌদি খেজুরঃ
অত্যন্ত পরিচিত একটি ফল খেজুর আমাদের দেশে। তবে হতাশাজনক হলেও সত্যি যে এই ফল আমরা যে পরিমাণ খাই কিন্তু উৎপাদন ছিলোনা কিছুদিন আগেও৷ পুরোটাই ছিলো আমদানিনির্ভর। প্রায় ১২-১৯ প্রজাতির খেজুর এর গাছ হয়। মিসর ও মেসোপটেমিয়া এলাকায় এর আদি নিবাস। মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান খাদ্য খেজুর। মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রচুর খেজুর গাছ হয়। সবচেয়ে বেশি খেজুর উৎপন্ন হয় মিসর, ইরান, আলজেরিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, পাকিস্তান, সুদান, ওমান ও তিউনিসিয়ায়।। সেদিক থেকে বাংলাদেশে এর উৎপাদন হয় বলেই অনেকে জানেনা কিন্তু তা হচ্ছে। বেশ কিছু জেলায় হচ্ছে এর বেশ ভালো ফলন এবং টাঙ্গাইল এর সখীপুরেও এর চাষ হচ্ছে। দেশে বসেই খেতে পারা যাচ্ছে সৌদির সেইসব মরিয়ম খেজুর, আজুয়া খেজুর, আমবাগ খেজুর।
স্ট্রবেরিঃ
মূলত আমরা বিদেশী ফল হিসেবেই জানি স্ট্রবেরিকে৷ এটি মূলত বাহিরের দেশের ই ফল হলেও বর্তমানে আমাদের দেশে দিব্যি এর চাষ হচ্ছে৷ বাংলাদেশ এর জমবায়ুর সাথে খুব ভালোভাবেই খাপ খাইয়ে নিয়েছে এ ফল। আর তাইতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভাবন হয়েছে রাবি স্ট্রবেরি-১, রাবি স্ট্রবেরি-২, এবং রাবি স্ট্রবেরি-৩ নামের ৩ টি জাত। এছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে তৈরি হয়েছে বারি স্ট্রবেরি-১ নামের একটি জাত এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর জার্মপ্লাজম সেন্টার থেকে বাউ স্ট্রবেরি-১ নামের একটি জাত উদ্ভাবন হয়েছে৷ এগুলোর সফলতায় চাষীদের মুখে ফুটছে হাসি এবং নতুন অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে৷ স্ট্রবেরি কিন্তু খুব সুন্দরভাবে টব এ ও হচ্ছে ছাদে বা বারান্দায়।
রামবুটানঃ
খুব সম্ভবত মালয়দ্বীপ বা থাইল্যান্ড এ থেকে উদ্ভুত একটি ফল, দেখতে অনেকটা ই লিচুর মত তবে গায়ে হালকা লোম আছে। অত্যন্ত সুস্বাদু এই ফলটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম প্রচলিত একটি ফল। আমাদের দেশে এর বিস্তার হচ্ছে বেশ ভালোভাবেই। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর জার্মপ্লাজম সেন্টার এ বাউ রামবুটান-১ নামের একটি জাত নিবন্ধন ও হয়েছে। এছাড়া হর্টিকালচার ও বিভিন্ন ব্যক্তি উদ্যোগ এ এর চারা, গুটিকলম, বীজ, জোঁড়কলম, কুঁড়ি সংযোজন এর মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হচ্ছে এবং খুব সফল সব উদ্যোক্তারা৷ ভবিষ্যৎ এ এর বিস্তার অনেক বেশি হবে বলেই সকলের ধারণা।
অ্যাভোকাডোঃ
অন্য একটি নাম মাখন ফল। মাখন নামটার কারণ হলো এর একটি অত্যন্ত চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্য আছে, আর তা হলো এতে শর্করার পরিমাণ কম এবং তেল এর পরিমাণ বেশি। তবে এতে চর্বির পরিমাণ ৮৮% হলেও সম্পূর্ণ কোলেস্টেরল মুক্ত একটি ফল৷ প্রথম মধ্য আমেরিকা তে মিললেও বাংলাদেশ এ প্রথম আসে মধুপুর এ৷ এখন তো ঘাটাইল, মধুপুর এ এর চাষ হচ্ছে।
কিছু উদ্যোমী ফলচাষী শুরু ও করেছেন এর আবাদ
বর্তমানে খুব জনপ্রিয় হয়েছে ফলটি আমাদের দেশে এবং খুব সম্ভাবনাময় ও এটি আমাদের দেশের জন্য। অলরেডি এর ড্রাফটিং ও করা সম্ভব হয়েছে এ ফল এর। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ দের কাছে অত্যধিক প্রিয় এ ফল আমাদের দেশে এভাবে চাষ হচ্ছে এটি আমাদের জন্য খুব পজিটিভ কিছুই।
ম্যাঙ্গোস্টিনঃ
বিদেশী যে কটি ফল বাংলাদেশ এর মাটিতে খুব সহজেই খাপ খাইয়ে নিয়েছে এর মাঝে ম্যাঙ্গোস্টিন একটি। সুনিষ্কাশিত গভীর দোআঁশ মাটি এর জন্য উপযুক্ত তাই বাংলাদেশ এর অনেক এলাকায় এর বাণিজ্যিক চাষাবাদে সাফল্য সম্ভব। টাঙ্গাইল এর ঘাটাইল এ এর ফলন হচ্ছে৷ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর জার্মপ্লাজম সেন্টার এ ও এর জাত উদ্ভাবন হয়েছে৷ গাবের মত দেখতে এর ফল অত্যন্ত সুস্বাদু ও খুব ই সুন্দর গন্ধযুক্ত৷
প্যাশন ফ্রুটঃ
প্যাশন ফ্রুট কিন্তু টাঙ্গাইল এ বেশ ভালোভাবেই চাষ হচ্ছে। পাকা ফল শরবত এর মত করে খাওয়া হয় জন্য একে ট্যাং ফ্রুট বা শরবতি গাছ ও বলা হয়৷ বাড়ির টব এ ও এর সুন্দর ফলন সম্ভব। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন অঞ্চল বিশেষ করে ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, উত্তর আর্জেন্টিনা তে এই ফল প্রথম দিকে পাওয়া যেত এখন তো বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে ই এর চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
ডুরিয়ানঃ
এই ফলটি চাষ করছেন ঘাটাইল এ শামসুল আলম। এটি মালয়েশিয়ার জাতীয় ফল। আমাদের দেশের কাঠালের মত দেখতে হলেও অত্যন্ত দামী ফল ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। কিন্তু এর তীব্র গন্ধে অনেকেই এই ফল খেতে না পারলেও মালয়েশিয়ান রা খুব ই পছন্দ করেন। তবে এর গন্ধ এতটা ই তীব্র যে একে নিয়ে গবেষণা ও কম হচ্ছে আমাদের দেশে৷ ইভেন যারা আমাদের দেশ থেকে ওখানে যায় তারা নরমালি নাকি এই ফলটি খেয়ে ই দেখেনা তবে অভ্যাস করে ফেলতে পারলে তখন আর খেতে না নেই।
এসব ছাড়া ও আরো অনেক ফলচাষী রা তাদের উদ্যোগ এ যোগ করছেন নতুন নতুন বিদেশী ফল৷ অবশ্যই এটি আমাদের পুরো দেশকে ই অনন্য এক সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যাচ্ছে ফল উৎপাদন এ বাংলাদেশ এর অবস্থান নিঃসন্দেহে গর্বের৷
এত এত উৎপাদন এর পর ও বাংলাদেশ এর ফল আমদানির পরিমাণ প্রতি বছর বেড়েই চলছে৷ গত বছর ফল আমদানি তেই বাজার ছিলো প্রায় দশ হাজার কোটি টাকার। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ রা দেশী ফলকে প্রায়োরিটি দিলেও দেশে উৎপাদিত ফলের পরিমাণ কম হওয়াতে বিদেশী ফলের প্রতি ই ঝুকতে হয়। এমন একটা ব্যাপার যেন অপশনস ই নেই। সেই ক্ষেত্রটা ই তৈরি করছে এখন দেশের অনেক অনেক উদ্যোক্তারা, গবেষকরা। বিদেশী ফলের চাষ বাংলাদেশে ই দিন দিন বেড়ে চলছে যেন আমদানীর পরিমাণ কমে।
এগুলোর সফল প্রচার হলে, অনেক উদ্যোক্তা এদিকে এগিয়ে আসলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যেমন পরিবর্তন হতে পারে তেমনি পারে অনেক লোকের কর্মসংস্থান করতে। টাঙ্গাইল এর মাটি চাষাবাদের জন্য উপযোগী আর এই কারণেই এখানে এই সেক্টর এ অনেক উদ্যোক্তার দেখা মিলছে এবং সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
এখন না পেয়ে আমাদের আমদানীর উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু দেশে উৎপাদিত ফল এর চাহিদা সব সময় আছে। কেননা দেশে উৎপাদন করছে এখন বেশিরভাগ ই শিক্ষিত সমাজ, যাদের লক্ষ্য ই হচ্ছে নিরাপদ কৃষি পণ্য তুলে দেয়া, অবশ্যই কেমিক্যাল ফ্রি, কিন্তু বিদেশ থেকে আমরা যে ফল ই খাইনা কেন তা কখনো কেমিক্যাল ফ্রি হয়না কেননা এদের তাজা রাখতে ও কেমিক্যাল এর প্রয়োজন। সচেতন জনগোষ্ঠী এখন এই দিকগুলো খুব বেশি বিবেচনা করে দেশে উৎপাদন হচ্ছে এমন ফল এ ই প্রেফার ফিল করে৷
তাই আমাদের দেশে যে এসবের চাষ হচ্ছে, আমাদের টাঙ্গাইল এ ও কত কত বিদেশী ফল চাষ হচ্ছে সফলভাবে, এসবের অনেক বেশি প্রচারণা দরকার। এদের সফল প্রচারণা ই পারে এই সেক্টর গুলো আরো অনেক লোকসমাজে সমাদৃত করতে, তবেই আগ্রহ বাড়বে সবাই নিজের চাকরীর ফাঁকে কিংবা বেকারত্ত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতেও খুব ভালো কিছুর সঙ্গী হতে পারবে অনেকেই। ই-কমার্স এ এই সেক্টর এ উদ্যোক্তা যুক্ত হলে অবশ্যই প্রচারণায় এগিয়ে থাকবে এবং সুফল পাবে সারা দেশ।