খেজুরের রসের সাথে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত, শীতকালের গ্রামের চিরচেনা চেহারায় আমরা প্রতিবারই এঁকে ফেলতাম খেজুর গাছের রস সংগ্রহের চিত্র। খেজুরের রসের গুণাগুণ ও উপকারিতা অনেক রয়েছে। খেজুরের রস থেকে নলেন গুড় হয়, ঝোলা গুড় হয় এবং দানা গুড় হয় যা স্বাদে গন্ধে অনন্য।খেজুরের রস প্রচুর খনিজ ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ।
খেজুরের রসে ১৫-২০% দ্রবীভূত শর্করা থাকে, যা থেকে গুড় ও সিরাপ তৈরি করা হয়। খেজুরের গুড় আখের গুড়ের তুলনায় বেশি মিষ্টি, পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। ঘ্রাণ ও স্বাদের জন্য এ গুড়ের রয়েছে বিশেষ চাহিদা রয়েছে। খেজুরের গুড়ে আখের গুড়ের চেয়ে বেশি প্রোটিন, ফ্যাট ও মিনারেল থাকে।
খেজুর রস খালি খেতেই দারুণ।তবে রাতে বা সকালে খাওয়া ভালো। এই রস হালকা ফুটিয়ে পান করা উচিৎ নয়ত এতে জীবাণু আছে তাই স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে যায়৷ খেজুরের রসে চিনির পরিমাণ বেশি থাকায় ডায়বেটিস রোগীরা না খাওয়া উচিত।
এছাড়া সারা রাত ধরে রস জমে থাকার পর সকাল সকাল এ রস খেলে উপকার পাওয়া যায়। যত সময় গড়াতে থাকে, ততো এতে ফারমেন্টেশন/ গাঁজন প্রক্রিয়া হতে থাকে ফলে রসের স্বাদ নষ্ট হয় এবং অম্লতা বাড়ে। দিনের আলোতে গাঁজন বেশি হয়। তাই দিনের বেলা রস খাওয়া ঠিক নয়। এতে বমি-সহ পেটের নানা সমস্যা হতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে, খেজুরের রসে যেন কোনো পোকা বা পতঙ্গ মুখ না দেয়।
খেজুর রস এনার্জি ড্রিংক এর মত, তাই শরীরে শক্তি জোগাতে পরিমাণমতো রস খাওয়া ভালো আর সকালে খালি পেটেই পান করা সম্ভব। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ ব্যক্তি সকালে খেজুর রস পান করতে চাইলে ১-২ গ্লাস খেতে পারেন। এতে জলীয় অংশও বেশি তাই একে প্রাকৃতিক ‘এনার্জি ড্রিংক’ বলা যেতে পারে।
খেজুরের রসে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি থাকে। খেজুরের রস কাঁচা খাওয়া যায়, আবার জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করেও খাওয়া যায়। গুড়ে আয়রন বা লৌহ বেশি থাকে এবং হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে। যারা শারীরিক দুর্বলতায় ভোগেন, খেজুরের রস তাদের জন্য দারুণ উপকারী। রস ও গুড় দুটোই তারা খেতে পারবেন।
ফেনী জেলায় খেজুরের রস হয় প্রচুর। জেলার উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীর চর শাহবিভারী, চর খোন্দকার, মহেশচর,চরচান্দিয়া,চর এলাহি, সোনাপুর,সাহেবের ঘাট, বাখরিয়া, চর লামছি, চর দরবেশ, মুহুরী প্রজেক্ট সহ বিভিন্ন এলাকার বিস্তৃত জনপদ শীতকালে ঘুরে দেখা যায়, খেজুরের গাছে গাছে রস নেওয়ার জন্য কলস বা মাটির হাড়ি বসানো থাকে।সংগ্রহ হয় বিপুল পরিমাণে খেজুরের রস।
রস গুলো দিয়ে ফেনীতে গুড় তৈরি হয় না। কারণ হিসেবে গাছিরা বলেন, সমুদ্রোপকূলবর্তী সোনাগাজী লোনা পানির এলাকা হওয়ায় এই আবহাওয়ায় গুড় তৈরি করা যায় না। গুড় তৈরি করার জন্য বাইরে থেকে কারিগর আনা হলেও তারাও পারেন না।রসের মৌসুমে পুরো উপজেলার কয়েক হাজার গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া জেলার ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজী ও দাগনভূঞাঁর গ্রামগুলোতে খেজুর রস সংগ্রহ চলে। সোনাগাজীর মত বড় পরিসরে না হলেও ভালো রকমের রস এইসব উপজেলা থেকে আসে।