ঝিনুক শিল্প আমাদের দেশে একটি সম্ভাবনাময় শিল্পের নাম। এ দেশে ঝিনুক চাষের রয়েছে উজ্জ্বল সম্ভাবনা। ঝিনুক থেকেই পাওয়া যায় মহামূল্যবান রত্ন ‘মুক্তা’।ঝিনুক চাষ দেশের জন্য বয়ে আনতে পারে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। সেই সঙ্গে সৃষ্টি করতে পারে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ। ঝিনুককে আমরা বিভিন্নভাবে কাজে লাগাতে পারি। ঝিনুক নোনা ও স্বাদু উভয় পানিতে হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের কক্সবাজার অঞ্চল ঝিনুক চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এটি একটি অমেরুদন্ডী প্রাণি। বাংলাদেশের প্রায় ৬৯,৯০০ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র জলরাশিতে প্রায় ৩০০ প্রজাতির ঝিনুক রয়েছে। এসব প্রজাতি কক্সবাজার ও এর নিকটবর্তী উপকূলীয় অঞ্চলে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়; যা এখনো প্রায় অব্যবহূত অবস্থায় আছে।
অর্থনৈতিকভাবে ঝিনুকের গুরুত্ব অপরিসীম। এই ঝিনুক বৈজ্ঞানিক ভাষায় Perna Viridis এবং Crassostrea species নামে পরিচিত। সাধারণত বিভিন্ন প্রকার ঝিনুককে মলাস্ক নামে অভিহিত করা হয়। এই Perna Viridis এবং Crassostrea species চাষের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্নপ্রকার ঝিনুক খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে, বিশেষকরে রাখাইন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা ঝিনুককে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। ঝিনুক থেকে উৎপন্ন চুন পানের সাথে গ্রহণ করে থাকে।
মাছের খাদ্য হিসেবে সরাসরি ঝিনুকের মাংসল অংশ দেওয়া হয়। পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিতে ক্যালসিয়ামের বিকল্প হিসেবে ঝিনুক শেলের গুড়া খাদ্যের উপাদান হিসেবে ব্যবহূত হয়। এছাড়া চিংড়ি, কাঁকড়া এবং হাঁস প্রতিপালনে ঝিনুকের মাংসল অংশের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
মুক্তার মতো মূল্যবান সম্পদ ও ঝিনুকের মাংসল অংশে থাকে। মহেশখালী দ্বীপ মুক্তার জন্য প্রসিদ্ধ । এই মূল্যবান মুক্তা উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো এক বিশেষ ধরনের ঝিনুক।
আমাদের দেশে অলংকার হিসেবে ঝিনুকের বহুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে কক্সবাজার, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চট্টগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলে প্রায় সকল বিপণি বিতানগুলিতে ঝিনুকের অলংকার পাওয়া যায়।
চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে ঝিনুককে মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। লৌহজাত পণ্য প্রস্ত্ততিতে ঝিনুক থেকে উৎপাদন ক্যালসিয়াম অক্সাইড ব্যবহার করা হয়, যেন লোহাকে সুবিধামত বাঁকা করানো যায়। বাণিজ্যিকভাবে খাবার লবণ প্রস্ত্ততিতেও ক্যালসিয়াম অক্সাইডের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।এমনকি চিনি, কাগজ ও ঔষধ শিল্পে বিভিন্নভাবে ঝিনুক ব্যবহূত হয়। পানি ও মাটির ক্ষারত্ব, পানির টক্সিসিটি কমাতে, প্লাংটন ব্লুম নিয়ন্ত্রণে এবং পানিতে ভাসমান তৈলাক্ত পদার্থ পরিশোধনে ঝিনুক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পৃথিবীর উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশ যেমন- চীন, জাপান, ফ্রান্স, কোরিয়া, ডেনমার্ক প্রভৃতি দেশ ঝিনুক চাষের মাধ্যমে তাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে।এসব উন্নত দেশের মতো চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চল কক্সবাজার ওমউপকূলীয় অঞ্চল গুলো ঝিনুক চাষের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
ঝিনুক শিল্প হলো এমন একটি শিল্প যা সামুদ্রিক প্রাণি ঝিনুক নির্ভর এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সুদীর্ঘকাল থেকে প্রতিষ্ঠিত।আমাদের দেশে ঝিনুক শিল্পের প্রত্যাশিত প্রসার হয়নি; যেমনটি হয়েছে ভারত, চীন ও জাপানে। এরা বিশ্বের অন্যতম প্রধান ঝিনুক শিল্পোন্নত দেশ।কিছু কার্যকরী উদ্যোগ নিলে আমাদের দেশে ও এই শিল্পের প্রসার ঘটানো সম্ভব।
বাংলাদেশের লোনা পানিতে ও ৩০০ প্রজাতির এবং মিঠা পানিতে ২৭ প্রজাতির ঝিনুক রয়েছে। তবে বাংলাদেশে ৫ ধরনের ঝিনুকে মুক্তা হয়।
ঝিনুকের মূল্যবান ও আকর্ষণীয় সামগ্রীর মধ্যে লাইটশেড, ঝাড়বাতি, পর্দা, চাবির রিং, টেবিল ল্যাম্প, ঝাড়ু, ফুল, এ্যাশট্রে, কানের দুল, মালা, হাতের চুড়ি, চুলের ক্লিপসহ বিভিন্ন ধরনের পুতুল, পশু-পাখির মূর্তি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ঝিনুকের এসব সামগ্রীর কদর দিন দিন বাড়ছে। ঝিনুকের তৈরি নিত্যনতুন ডিজাইনের সামগ্রী ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঝিনুক সামগ্রীর চাহিদাও রয়েছে।
ঝিনুক শিল্প বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। বাংলাদেশের দক্ষিণ চট্টগ্রাম বা কক্সবাজার অঞ্চল ঝিনুক চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিতে ক্যালসিয়ামের বিকল্প হিসেবে ঝিনুক শেলের গুড়া খাদ্যের উপাদান হিসেবে ব্যবহূত হয়। এছাড়া চিংড়ি, কাঁকড়া এবং হাঁস প্রতিপালনে ঝিনুকের মাংসল অংশের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
আমাদের দেশে অলংকার হিসেবে ঝিনুকের বহুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে কক্সবাজার, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চট্টগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলে প্রায় সকল বিপণি বিতানগুলিতে ঝিনুকের অলংকার পাওয়া যায়।
বর্তমানে আমাদের দেশে ঝিনুক একটি সম্ভাবনাময় শিল্পে পরিণত হয়েছে। এ শিল্পের দিকে গুরুত্ব দিলে এ থেকে প্রতি বছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে এবং সেই সঙ্গে অনেক বেকারও কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে।
রাহাত সোলতানা
স্বত্বাধিকারী-অভিরুচি বুটিকস