ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রামে প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি এর অবস্থান।প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি স্থানীয়ভাবে প্রতাপপুর রাজবাড়ি বা বড় বাড়ি হিসেবেও পরিচিত। বাংলা ১২২৮ সালের ১৩ ফাল্গুন এটির নির্মান কাজ শেষ হওয়া রামনাথ কৃষ্ণ সাহা জমিদার বাড়িটির সীমানা প্রায় সাড়ে ১৩ একর । নিজ নামেই তিনি নির্মাণ করে যান রাজপ্রাসাদসম বাড়ি।
১৮৫০ মতান্তরে ১৮৬০ সালে জমিদার রাজকৃঞ্চ সাহা ৮শ’ শতক জায়গায় দৃষ্টিনন্দন করে বাড়িটি নির্মাণ করেন। নিজ নামেই তিনি নির্মাণ করে যান রাজপ্রাসাদসম বাড়িটি। রামনাথরা ছিলেন পাঁচ ভাই। তারা থাকতেন পাঁচটি দ্বিতল ভবনে। বাড়িতে রয়েছে মোট ১৩টি পুকুর যাতে মাছ চাষ হতো জমিদারের তত্ত্বাবধানে। বাড়ির ভেতরে পাঁচটি পুকুরের ৫টি পাকা ঘাটে স্নান করতেন বউ-ঝিরা।এতো পুকুর বাংলাদেশের আর কোন জমিদার বাড়িতে নেই। এখানকার পুকুর পুরো বাড়িকে করেছে আকর্ষণীয়। ওই সময়ে বাড়িটি ছিল আশপাশের এলাকার জন্য দর্শনীয়। তৎকালীন অন্যান্য স্থানের জমিদাররা এ বাড়িতে সফরবিরতি করতেন। একপর্যায় জমিদার প্রথার বিলুপ্ত ঘটলে ওই বাড়ির প্রভার প্রতিপত্তি কমতে শুরু করে।
দাগনভূঞায় কয়েকটি চৌধুরী, ভূঞা এবং জমিদার বংশের মধ্যে প্রতাপপুর জমিদারদের অবস্থান ছিল শীর্ষে। তারা ছিল আশপাশের এলাকার জন্য প্রভাবশালী। ব্রিটিশ আমলে বাড়ির জমিদার রাজকৃঞ্চ সাহা এ বাড়িতে বসেই অত্র এলাকার শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। তিনি এবং তার ৫ ছেলে জমির খাজনাদি আদায় করতেন।
জমিদার বাড়িতে ঢুকতেই স্বাগতম জানাবে বিশাল এক চালতা গাছ। এতো বৃহৎ আকৃতির চালাত গাছ হয়তো প্রথমবার দেখছেন আপনি। প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি এলাকায় রাজবাড়ি, বড় বাড়ি হিসেবে ও পরিচিত। এখনো প্রতি বছর বৈশাখে সনাতন ধর্মালম্বীরা এ বাড়িকে ঘিরে তিন দিনব্যাপী উৎসব পালন করেন।
৬টি ঐতিহাসিক ভবন, ১৩টি পুকুর নিয়ে সবুজে শ্যামল ভরা বাড়িটি এক সৌন্দর্যের অধিকারী এই রাজবাড়ী। প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো পুকুর গুলোতে এখনো মাছ চাষ করা হয়। জমিদারের বংশধররা থাকায় এখনো এটি মালিকানাধীন। তথ্য মতে, অনেক কোম্পানি এই বাড়িটি কিনতে চাইলেও এটি বিক্রি করা হয়নি। বাড়িটির একমাত্র কেয়ারটেকার দিনেশ বাবু থেকে জানা যায়, জমিদারী ক্ষমতা চলে যাওয়ার পরেও এখানে তাদের বংশধররা এই বাড়িতে থাকত।
কিন্তু তখন ডাকাতের প্রবণতা বেশী থাকার সাপেক্ষে জমিদারের বংশধররা এই বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। এখন তাদের বংশধররা কাজের সূত্র ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান করছেন। এছাড়াও প্রায় ৫০টিরও বেশী নারিকেল গাছ, সুপারি গাছসহ আম, কাঁঠাল,এবং বহু প্রজাতির গাছ নিয়ে এখনো বিষম দাঁড়িয়ে আছে জমিদার বাড়িটি।