১৪ বছর আগে বান্দরবানের লামার মিরিঞ্জা পাহাড়চূড়ায় তৈরি করা হয়েছিল ইটপাথরের বিশাল টাইটানিক জাহাজ। আটলান্টিক মহাসাগরে ১৯১২ সালে ডুবে যাওয়া টাইটানিকের আদলে তৈরি করা এ জাহাজে ওঠার জন্য নির্মিত হয়েছিল আঁকাবাঁকা পাকা সিঁড়ি। এই জাহাজ দেখতে পর্যটকের ঢল নামে। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে দেড় হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের ওপর স্থাপিত টাইটানিক জাহাজটি।
১৬ একর পাহাড়ি ভূমিতে ২০০৩ সালে তৈরি হয় মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স। কমপ্লেক্সের পশ্চিমে উঁচু পাহাড়চূড়ায় নির্মিত হয় টাইটানিক জাহাজ।
আরো রয়েছে সুরম্য ‘গিরিদ্বার’, রাত্রিযাপনের বাংলো-বনরত্না। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগের জন্য পাহাড়ে খাদে তৈরি হয় গোলঘর-মালঞ্চ। পূর্ব দিকে সুখী ও দুঃখী নামে এক হাজার ফুট উঁচু দুটি জোড়া পাহাড়। টাইটানিক জাহাজে উঠলে চোখে পড়ে। পাহাড়ের খাদে কুঁড়েঘরে বসবাস মুরং, মারমা, ত্রিপুরা, চাকমা, বমসহ ১১ ভাষাভাষী সম্প্রদায়ের জীবন যাপন। টাইটানিক জাহাজ থেকে বাইনোকুলার দিয়ে সুদূর কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকত, সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার ট্রলার দৃশ্য ও দেখা যায়।
নয়ন জুড়ানো সবুজ স্নিগ্ধে ঘেরা নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর। মনোরম দৃশ্যের সমাহার ও বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারে সমৃদ্ধ লামা, ঠিক যেন শিল্পীর পটে আঁকা ছবির মতন। সর্বত্র সবুজ-শ্যামল গিরি শ্রেনীর এক অপরূপ চিত্র বৈচিত্রময় হাতছানি। যেখানে মেঘ ছুঁয়ে যায় পাহাড়ের গা। যত দূর তাকানো যায় শুধু সাদা মেঘের ভেলা। নিচে সবুজের ছড়াছড়ি। মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে সাদা ঝর্ণা ধারা আর আদিবাসীদের টংঘর। নাকে আসছে বুনো ফুলের মিষ্টি সুবাস। নির্মল আনন্দের রাজ্যে নগরের যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে প্রকৃতির বুক চিরে গড়ে উঠেছে আকাশ ছোঁয়া চিরসবুজ এক শান্তির আধার।এখানে দেখা যায় পাহাড় ও মেঘের মিতালী।মেলবন্ধনে একাকার মেঘ ও পাহাড়।
টাইটানিকের চূড়ায় দাঁড়িয়ে মনে পড়বে শত বছর আগের টাইটানিক জাহাজকে নিয়ে তৈরি কাহিনীচিত্র। এখান থেকে দেখা যায় অপূর্ব সূর্যাস্তের দৃশ্য, যার সৌন্দর্য অনেক সময় কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতের সূর্য ডোবার দৃশ্যকেও হার মানায়। এ পাহাড়ে দাঁড়িয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও বঙ্গোপসাগরের রাত্রিকালীন অলংকার লাইট হাউজের আলোর ঝিলিক দেখার সুযোগ। এ চূড়া থেকে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র সৈকতের ঢেউ, ভাসমান জাহাজ স্বচক্ষে দেখার জন্য বসানো হয়েছে বাইনোকুলার।
এখানে দেখা যায় স্রোতস্বিনী মাতামুহুরী নদীর স্বপ্নীল গতিধারা।পাহাড়ের দক্ষিণ প্রান্তে সেই ১৯১২ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যাওয়া প্রমোদ-জাহাজের রেপ্লিকা দেখা যাবে এখানে এলে। এখানে নির্মাণ করা হয়েছে টাইটানিক জাহাজের ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটির পাশে এসে দাঁড়ালে মনে পড়ে যাবে ট্রাইটানিক ট্র্যাজেডি ও তাকে ঘিরে এক অমর প্রেমের কাহিনী।
জোৎস্নারাতে চাঁদ দেখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে চন্দ্রমা গোলঘর। পর্যটনের পূর্ব দিগন্তজোড়া সবুজ পাহাড়ের সারিতে চোখ রাখলে আর পলকও পড়ে না। ছোট ছোট কুঁড়েঘর। প্রায় ১ হাজার ফুট গভীর ঝিরি থেকে উৎসারিত জলের বিরামহীন কলরব। চোখে পড়ে বনমোরগ, খরগোশ, মায়াবী বুনো হরিণের অবাধ বিচরণ।
উপজাতীয়দের টং-ঘরে পাহাড়ি নর-নারীর সরল জীবনযাপন, এ যেন এক অনন্য ভুবন। মিরিঞ্জা চূড়া যেন এক সবুজ মায়া; টিলা-টক্কর, পাহাড়ি ঝরণা, কাঁকর বিছানো পথ— এখানে কতো যে আমোদ ছড়ানো পথে পথে তা এখানে না এলে বোঝাই যাবে না। এখানকার মানুষের হৃদয়ে রয়েছে দিগন্তের বিস্তার আর আতিথ্যের ঐশ্বর্য।
এখানে সুউচ্চ সবুজ পাহাড়-বনানীঘেরা আঁকাবাঁকা পথ, আকাশ, মেঘ, নদী আর সাড়া জাগানো টাইটানিক জাহাজের মনোরম ভাস্কর্যে এ পর্যটনকেন্দ্রটিকে দিয়েছে নয়নাভিরাম নৈসর্গিক সৌন্দর্য।প্রকৃতি যেন তার উদার হাতে সুনিপুণ কারিগরের মতো মুকুটশিখর মিরিঞ্জা পাহাড়কে মোহনীয় করে সাজিয়ে রেখেছে।ঘন সবুজের আবরণে আবৃত মিরিঞ্জা পর্যটনে অবসরের প্রতিটি ক্ষণ ভরে উঠবে।
এ চড়াই-উৎরাইয়ে শান্ত বনতলে ঘুরে বেড়াতে কোনো ক্লান্তি আসে না।নির্মল আনন্দের রাজ্যে নগরের যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে গড়ে উঠেছে প্রকৃতির বুকচিরে আকাশ ছোঁয়া চিরসবুজ এক শান্তিধাম।এখানে দেখা যায় পাহাড় ও মেঘের মিতালী।মিরিঞ্জা পাহাড়ে এলে যে কারো মনে প্রকৃতিপ্রেম জেগে উঠবেই।
সাগরপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৫শ ফুট উঁচু মিরিঞ্জা পর্যটন পাহাড়। এখানে ওঠা মাত্রই দৃষ্টিগোচর হয় লতাগুল্মের দৃশ্যশোভা, পাখ-পাখালির কল-কাকলি। এসব চোখ, কান, মন সব ভরিয়ে তোলে। মাথার উপর টুকরো নীল আকাশ, প্রতিনিয়ত মেঘ ছুঁয়ে যায় মিরিঞ্জা পাহাড়ের গায়। লতাগুল্মের কারুকার্যময় অনেক বড় বড় গাছের উপর আকাশ যেন ছাদ।এছাড়া জংলি ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মাখামাখি, পাহাড়ের নীচে লুকানো ঝরণা, চূড়ায় উপজাতীয় টংঘর, জুম চাষ আর অরণ্যরাণীর ঐতিহ্যের পোশাক। তাদের পায়ের খাড়ুর ঝন ঝন।
সুউচ্চ পাহাড়ের শিখর থেকে কক্সবাজারের সাগরের উত্তাল তরঙ্গমালার মনোমুগ্ধকর নৃত্য ও সাগরের উপর চলমান জাহাজের সম্মুখযাত্রার দুর্লভ দৃশ্য। এছাড়া এ পাহাড়ে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম সৈকত ও বঙ্গোপসাগরে রাত্রিকালীন শোভা লাইট হাউসের আলোর ঝিলিক দেখার সুযোগ। যা ভ্রমণ পিপাসুদের মনকে উদ্বেলিত করে তুলবে। মেঘমুক্ত আকাশে তারার মেলা, মনে হয় সু-উচ্চ মিরিঞ্জা’র হাতের নাগালে। কখনো বা পাহাড়ের সঙ্গে মেঘের লুকোচুরি।
মাঝে মাঝে আপন বৃত্ত থেকে বেরিয়ে প্রকৃতি সান্নিধ্যে নিজেকে উজাড় করে দিতে হয়।প্রকৃতির সান্নিধ্যে গেলে প্রকৃতির সতেজতায় মন সতেজ হয়ে উঠে।মনের উপর সবুজের প্রভাব পড়ে।তাই নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে বেড়িয়ে আসি মিরিঞ্জায়।
রাহাত সোলতানা
স্বত্বাধিকারী-অভিরুচি বুটিকস