বান্দরবান শহরের টাইগার পাড়ার পহাড় চূড়ায় প্রায় দুই হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের উপর অবস্থিত নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র। শহর থেকে মাত্র ৪ কিমি দুরে অপরূপ সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি এই নীলাচল।নীলাচল চট্টগ্রাম বা বাংলাদেশের বান্দরবান জেলায় অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
চারদিকে দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের ঢালে কোথাও আঁকা-বাঁকা রাস্তা, পাহাড়ী পাড়া আর রূপালী নদী গুলো যেন শিল্পীর আঁকা ছবি।এই পাহাড় থেকে এক নজরে দেখা যাবে পুরো বান্দরবান শহর। সুর্যোদয় আর সুর্যাস্ত দেখা যেতে পারে এখান থেকেও। আঁকা-বাঁকা পাহাড়ী রাস্তায় প্রচুর চড়াই-উৎরাই থাকলেও প্রায় পুরো রাস্তাই পিচ ঢালা। তবে স্থানীয় অভিজ্ঞ ড্রাইভার ছাড়া এসব রাস্তায় না যাওয়াই উত্তম।
যতই বলেন নীল বিষাদের রং কিন্তু নীলাচলের অপূর্ব রুপ বলে ভিন্ন কথা। প্রকৃতিকে সবচেয়ে সুন্দর ও মনোরম করতে নীল রঙের জুড়ি নেই। যেখানে নীল সেখানেই প্রকৃতির অপূর্ব মায়া হাতছানি দেয়। যে রঙ বিষন্নতার বাহক, সে রঙ কিন্তু বিষন্নতা দূর করার কারণও হতে পারে।
নীল আকাশের কাছাকাছি চলে গেলে মন ও ভালো হতে বাধ্য। কিন্তু আকশের এতো কাছাকাছি কিভাবে যাওয়া যায় আসুন দেখি- নীল আকাশ কিংবা সাদা মেঘ এর সবকটিই খুঁজে পাবেন অত্যন্ত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর একটি স্থান নীলাচলে।
অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং দূর সমুদ্রের হাতছানি থেকে শুরু করে গাছপালা ও পাখ-পাখালির কিচিরমিচির সবই আছে নীলাচলে। । ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে এই প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ উচ্চতায় অবস্থিত বলে নীলাচল থেকে সমগ্র বান্দরবন ও দূরের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখা যায়। এই পর্যটন কেন্দ্রটি এতোটাই উচ্চতায় অবস্থিত যে নিচের পাহাড়গুলোকে এর সামনে বেশ ছোট মনে হয়।
পাহাড়ে ট্রেকিং করতে কিংবা বনের গভীরে যেতে যাদের অসুবিধা হয় নীলাচল তাদের জন্যই। আকাশের বিশালতার মতো বিশালও হার মানায় এর সৌন্দর্য। নীলাচলে পর্যটকদের সুবিধার্থে অনেকগুলো ছোট-বড় বিশ্রামাগার রয়েছে। এবং বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য আকর্ষনীয় ব্যবস্থাও রয়েছে।
নামের সাথে মিল রেখে এখানকার প্রত্যেকটি বিশ্রামাগারের রঙও নীল করা হয়েছে। বর্ষাকালে নীলাচলের সৌন্দর্য দেখার মতো। বর্ষার সকালে ভেজা প্রকৃতির মায়া আপনাকে বিমোহিত করবে। দূরের ঘন সতেজ অরণ্য, আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা আর দূরের সমুদ্র সৈকতের গর্জন সব মিলিয়ে প্রকৃতির এক অপরূপ রুপ আপনার সামনে ভেসে উঠবে।
শরৎ ও হেমন্ততে নীলাচলে দেখা যায় মেঘের ভেলকি রুপ। সাদা তুলোর মতো বুনো মেঘের দল ছোটাছুটি করে সর্বত্র। তখন মেঘের পিছুপিছু ছুটে যেতে বাধ্য হবেন আপনি। এরপর পরই আসে শীতের সৌন্দর্য।
শীতকালে নীলাচল নববধূর রুপ ধারণ করে। কুয়াশা ঘেরা ও শিশিরভেজা পাহাড় কিংবা হালকা মেঘে ঘেরা সমুদ্র সবই যেন একটি মোহ। যে মোহ কখনোই ভাঙ্গে না। সূর্যোদয় থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিভিন্ন রঙের ঘনঘটা নীলাচলকে করে তোলে আরো রঙ্গিন। মোটামুটি সব সিজনেই ঘুরে ভালো লাগবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই নীলাচলে।
নীলাচল প্রকল্পে রয়েছে শুভ্রনীলা,‘ঝুলন্ত নীলা’, ‘নীহারিকা’ এবং ‘ভ্যালেন্টাইন পয়েন্ট। কমপ্লেক্সে আছে বাচ্চাদের খেলাধুলার ব্যবস্থা এবং বসার ব্যবস্থা । পাহাড়ের ঢালে ঢালে সাজানো হয়েছে এ জায়গাগুলো। ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে সামনের পাহাড়ের দৃশ্যও ভিন্ন ভিন্ন রকম। একটি থেকে আরেকটি একেবারেই আলাদা, স্বতন্ত্র। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬শ’ ফুট উঁচু এই জায়গায় বর্ষা, শরৎ কি হেমন্ত— তিন ঋতুতে ছোঁয়া যায় মেঘ।
মেঘমুক্ত আকাশে কক্সবাজারর সমুদ্রসৈকতের অপুর্ব দৃশ্য নীলাচল থেকে পর্যটকেরা উপভোগ করতে পারেন। নীলাচলে বাড়তি আকর্ষণ হল এখানকার নীল রং এর রিসোর্ট। নাম নীলাচল স্কেপ রিসোর্ট। সাধারণ পর্যটকদের জন্য এ জায়গায় সূর্যাস্ত পর্যন্ত অনুমতি আছে।
নীলাচল পাহাড়ি এলাকাটি অনেকেই স্বর্গভূমি বলে থাকেন।বিশেষকরে নীলাচলের সুর্যাস্তের দৃশ্য মনে অপার্থিব অনুভূতি জাগিয়ে তোলে এবং এর নির্মল বাতাসে যে কোন পুরানো রোগনিরাময়ে সহায়ক বলে কথিতআছে।
নীলাচলে এলে আপনার ভিতর ঘুমিয়ে থাকা শৈল্পিক সত্তা জেগে উঠবে।গুনগুনিয়ে গাইবেন প্রিয় কোন গান বা লিখতে ইচ্ছে করবে প্রকৃতির প্রতি আপনার প্রেম।আপনাকে ভাবিয়ে নিয়ে অনেক দূর। মনের বিশালতা বেড়ে হুট করে।একপলকেই প্রেমের আসন দখল করবে নীলাচল।
তাহলে আর কেন প্রকৃতির এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে আপনি ও বেড়িয়ে পড়ুন আপন মনে জাগতিক ঝঞ্জাট ছেড়ে।মাঝে মাঝে প্রকৃতির কাছ কিছু ঋণ নিতে হয় অপরিশোধীয় ঋণ।যা আমাদের জীবন চলার পথে আরেকটু মহৎ,আরেকটু মহান আরেকটু উদারতার শিক্ষা দেয়, শিক্ষা প্রকৃতির মতো নিজেকে বিলিয়ে দিতে।
সতর্কতাঃনিজস্ব ড্রাইভার নিয়ে কখনোই এখানে যাওয়া উচিত নয়।স্হানীয় পর্যায়ের ড্রাইভার গুলো বেচে নেয়া উত্তম।
চট্টগ্রাম শহর থেকে কিংবা কক্সবাজার থেকে সরাসরি বাস আছে।বান্দরবানের নির্দিষ্ট বাস পূরবী।স্হানীয় পর্যায়ের গাইড হলে ভ্রমণে আনন্দের মাত্রা বাড়ে এবং নিরাপদ থাকা যায়।
রাহাত সোলতানা
অভিরুচি বুটিকস