করোনার ধাক্কা কাটিয়ে বিদেশের বাজারে আবার শুরু হয়েছে চট্টগ্রামের সবজি রপ্তানি। সুইডেন, মালয়েশিয়া, কানাডাসহ ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে সবজি রপ্তানি হয়। তবে মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে রয়েছে চট্টগ্রামের সবজির আলাদা চাহিদা। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চট্টগ্রাম থেকে ৫০ রকমের বেশি সবজি রপ্তানি হয়ে থাকে।
মধ্যপ্রাচ্যে চট্টগ্রামের শাক-সবজি ও মৌসুমি ফলের চাহিদা বাড়ছে। শাহ আমানত (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সপ্তাহে সাতদিন তিনটি ফ্লাইটে সরাসরি যাচ্ছে হরেক তাজা শাক-সবজি। চাহিদা বাড়ায় রফতানি খাতে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
করোনায় বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় বেশ কয়েক মাস সবজি রফতানি বন্ধ থাকলেও চলতি মাসের শুরু থেকে ফের পুরোদমে শুরু হয়েছে। গত ২৯ দিনে ২৩০ মেট্রিক টন সবজি রফতানি হয়েছে। বিমানবন্দর ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, এখন বাংলাদেশ বিমান, এয়ার এরাবিয়া ও ফ্লাই দুবাইয়ের ফ্লাইটে সপ্তাহে সাত দিন সবজি রফতানি হচ্ছে।
এসব ফ্লাইটে যাত্রীদের মালামাল নেওয়ার পর লাগেজের বাকি অংশে সবজি ও মৌসুমি ফল নেওয়া হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে সপ্তাহে ৩৫-৩৮ টন সবজি রফতানি হয়। বছরে প্রায় ২৫ কোটি টাকার সবজি ও ফল রফতানি হয় মধ্যপ্রাচ্যে। এর পাশাপাশি ইউরোপের দেশগুলোতে প্রক্রিয়াজাত সবজি এবং সবজি থেকে তৈরি হরেক রকমের খাবার রফতানি হচ্ছে।
আগে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামের শাক-সবজি রফতানি হতো। ২০০২ সাল থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে শাক-সবজি যাচ্ছে মরুর দেশে। অর্ধশত রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান শাক-সবজি রফতানি করছে। বছরে ১২ মাস সব ধরনের শাক-সবজি ও মওসুমি ফল রফতানি হয়।
চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন টাটকা শাক-সবজি যাচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশী ছাড়াও ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ মধ্যপ্রাচ্যের নাগরিকদের কাছে এ দেশের সবজি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চলতি মওসুমে চট্টগ্রাম থেকে কচু, কচুর লতি, কচুর ফুল, কচু শাক ছাড়াও কচুর ছড়া, ওল কচু, পাইন্যা কচু রফতানি হচ্ছে।
এ তালিকায় আরো আছে বরবটি, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, লেবু, পটল, ঝিঙ্গে, শশা, কাকরোল, উচ্ছে, তিতা করলা, দেশি আলু, সীম বিচি। মওসুমি ফলের মধ্যে পেয়ারা, জলপাই, আখ, জাম্বুরা, পানিফল, আমলকি, আমড়া যাচ্ছে প্রতিদিন।
রফতানিকারকরা জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলে উৎপাদিত প্রায় সব ধরনের সবজির বিশাল বাজার সৃষ্টি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সীতাকুন্ড, রাঙ্গুনিয়া, পার্বত্য জেলার খাগড়াছড়ি, মাটিরাঙ্গা, রাঙ্গামাটির চন্দ্রঘোনায় পাহাড়-টিলা ও সমতল ভূমিতে উৎপাদিত শাক-সবজির চাহিদা বেশি। পাহাড়ি জুমের মিষ্টি কুমড়া এবং চাল কুমড়া বেশি জনপ্রিয় মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে। ফলের মধ্যে কাঁঠাল রফতানি হয় বেশি।
বর্তমানে বিদেশ রফতানি যোগ্য শাক-সবজি চাষে মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা উৎসাহিত । তারা হাতে কলমে প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন।চট্টগ্রামের সবজি দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও যাচ্ছে। এতে প্রান্তিক কৃষকরা সরাসরি উপকৃত হচ্ছে।
বাংলাদেশ বিমানসহ তিনটি ফ্লাইটে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, শারজা ও আবুধাবীতে যায় শাক-সবজি। সামনের দিনগুলোতে সবজি রফতানি আরও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী।
শুধু মধ্যপ্রাচ্যে শাক-সবজি রফতানি হচ্ছে এমন নয়, এর পাশাপাশি ইউরোপের দেশগুলোতেও চট্টগ্রামে উৎপাদিত সবজি প্রক্রিয়াজাত করে রফতানি হচ্ছে। উভয়ক্ষেত্রেই সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে। শাক-সবজি ও মৌসুমি ফল রফতানিতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম ফ্রেশ ভেজিটেবলস অ্যান্ড ফ্রুটস এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। কিছু সুযোগ সুবিধা বাড়ালে সবজি রফতানি দ্বিগুণ করা সম্ভব। বর্তমানে ২৫ কোটি টাকার সবজি রফতানি হয়। তা ৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করা যাবে। তিনি বলেন, বর্তমানে সপ্তাহে যে পরিমাণ সবজি যাচ্ছে লাগেজ সুবিধা বাড়ালে আরও বেশি সবজি রফতানি সম্ভব।
গত ৩ মাসে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ৭০০ টনেরও বেশি সবজি রপ্তানি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। এমন তথ্য জানিয়েছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর, উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্র।
মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে চট্টগ্রামের সবজি রপ্তানি বাড়াতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রার আয় যেমন বাড়বে তেমনি সরকারের রাজস্বও বাড়বে।চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে রপ্তানিকৃত এসব সবজি সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, মাস্কাট, দুবাই, আল জাবেরসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রাজ্যে রপ্তানি হয়।
সবজির মধ্যে মিষ্টি কুমড়া, লাউ, আলু, বেগুন, কচু, কচুর লতি, তিতকরলা, উস্তে, কাঁকরোল, পটোল, ঝিঙে, শসা, বরবটি, শিম, লেবু, জলপাই, সাতকরা, বাঁশের কোড়ল, কলার মোচা, গাজর, ফুলকপি, শালগম, ব্রোকলি, চায়না বাঁধাকপি, বিট, সাতকরা উল্লেখযোগ্য।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২০৪৫ টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২০৯৬ টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২১১৫ টন সবজি রপ্তানি হয়।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ফ্লাই দুবাই, এয়ার এরাবিয়া ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্যাসেঞ্জার ফ্লাইটে সবজি মিডলইস্টে রপ্তানি হয়।
এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য সুখবর চট্টগ্রামবাসী ও বাংলাদেশের জন্য । সবজি রপ্তানি খাতেও আমাদের উল্লেখযোগ্য আয় হচ্ছে। সরকার রপ্তানিতে নানামুখী উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। সবজি রপ্তানিতে সরকারের যথেষ্ট রাজস্ব আয় হয়
। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে উৎপাদন বাড়াতে হবে। কৃষকদের নানামুখী সহায়তা দিয়ে উৎসাহিত করতে হবে। শীতকালীন সবজি বেশি খুব বেশি জনপ্রিয়।এই জনপ্রিয় ধরে রেখে কার্যকরী পদক্ষেপ নিলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।এই সবজি ই-কমার্সে ও রাখতে পারে অনন্য অবদান।অনেক উদ্যোক্তা কার্যকরী পদক্ষেপ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সুফল ভোগ সহ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে।
রাহাত সোলতানা
স্বত্বাধিকারী-অভিরুচি বুটিকস