“মুড়ি” গ্রাম থেকে শহর, বৃদ্ধ থেকে বালক সবাই এক নামেই জানে, খেতে মুড়মুড়ে এবং মজাদার প্রায় সব বাঙালির ঘরেই পাওয়া যাবে। সেই মুড়িশিল্প লক্ষ্মীপুর জেলার সুনাম ছড়িয়ে দিলো চারদিকে। হাতে ভাজা গিগজ ধানের মুড়ি। যা জেলার গন্ডি পেরিয়ে সুনাম ছড়ালো অন্য জেলায়। মুড়িশিল্পে মূলত অনেক উপকরণ লাগে যা দাম বাড়লে মুড়িশিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের প্রচলিত বাজার দরে খরচ তোলা কষ্টকর হয়ে যায়।
মুড়ি তৈরীর উপকরণঃ ধান, লবন, লাকড়ি, বড় পাতিল ২ টা, মাটির খোরা ২ টা, ঝাঝর ১ টা, বালি ৮ কেজি, পাট খড়ি, ধান শুকাতে হোগলা পাতার পাটি ৬-৮ টিন, ধান ভিজাতে গামল ২ টা, ধান সিদ্ধ করতে পাতিল ৪ টি, ধান রাখার জন্য টুরকি, বস্তা প্রয়োজন মত।
মুড়ি বাজারে সরবরাহ করার জন্য বড় বস্তা সহ অন্যন্যা উপকরণ প্রয়োজন অনুসারে লাগে।
৪০ কেজি ধানে মুড়ি হয় ২৩ কেজি, যা গিগজ ধানে হয়ে থাকে, ধানের দাম বাজার অনুসারে ২৮০০-৩৫০০ টাকা হয় মণ, ২ মণ ধান থেকে চাল হয় ৫২ কেজি এবং মুড়ি হয় ৪৬ কেজি।
২ মণ ধানে লাভ হয় ৫০০-৬০০ টাকা। মুড়ির উৎপাদন বাড়লে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যায় ফলে দাম কম পাওয়া যায়। রোজার মাসে উৎপাদন বাড়ে এবং দামও ভালো পাওয়া যায়।
মুড়ি সাধারণত ভোর ৪ টা থেকে ভাজা শুরু হয় যা চলে সকাল ১০ টা পর্যন্ত। বিকেল বেলায় চাল ঝেরে প্রক্রিয়াজাত করে রাখা হয়।
মুড়িশিল্পের সাথে জড়িত খোকন চন্দ্র দাস বলেন, লক্ষ্মীপুর জেলায় অনেক আগে থেকে অনেক পরিবার এই মুড়িশিল্পের সাথে জড়িত ছিলো। বর্তমানে সদর উপজেলার মজুপুর বাঞ্চানগর গ্রাম সহ সমসেরাবাদের জোড়া দিঘির পাড়ের বলাই দাসের বাড়ির ৭ টি পরিবার, সরকার বাড়ির ৭ টি পরিবার, মনা দাসের বাড়ির ১ পরিবার, সন্তোষ শাখার বাড়ির ১ পরিবার, পানাগো বাড়ির ১ পরিবার, দফাদার বাড়ির ১ পরিবার, কালী বাড়ির ১ পরিবার সহ বিক্ষিপ্তভাবে ২৫-৩০ টি পরিবার এই কাজ করে থাকে।
তাছাড়া রায়পুর উপজেলার পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের গোয়াল বাড়ির ১ পরিবার সহ বিক্ষিপ্তভাবে ১০-১৫ টি পরিবার এই কাজ করে থাকেন।
বর্তমানে লোকসান হয় বিধায় অনেক পরিবার ছেড়ে দিচ্ছে এই কাজ। তাছাড়া এই কাজের প্রধান উপকরণ গিগজ ধানের চাষাবাদ কমে যাওয়া সহ মহিলাদের খাটুনির জন্য অনেক পরিবার অন্য পেশা বেঁচে নিচ্ছে।
যদি ধানের উৎপাদন বাড়ানো যায় এবং ভুর্তুকি মূল্যে না হোক বাজারে দাম না বাড়িয়ে ধান সরবারাহ করা হয় তাহলে এই শিল্প টিকে থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
ধন্যবাদ
নাসির উদ্দিন