অনেকের কাছে বিষয়টা সম্পূর্ণ অজানা হতে পারে কারণ সবাই জানে চাঁদপুর, মাওয়া ঘাট, বরিশাল ইলিশ পাওয়া যায়, লক্ষ্মীপুরের নাম তেমনভাবে জানে না। লক্ষ্মীপুরে যে ইলিশ পাওয়া যায় তা হলো মেঘনা নদীর ইলিশ! যা এই জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সহ বিভিন্ন অন্য জেলায় রপ্তানি হয়। লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি মেঘনা অববাহিকায় প্রচুর ইলিশ আহরণ করা হয়,সদরের মজু চৌধুরীর ঘাট,সহ রায়পুর উপজেলার জেলেরাও মেঘনা নদীতে ইলিশ আহরণ করে।
মৌসুমের সময় মেঘনা নদীর ইলিশ ছাড়াও পাশ্ববর্তী চাঁদপুর জেলার ইলিশও এই জেলায় পাওয়া যায়।
পদ্মার ইলিশ দেশসেরা,এত দিন এমন ধারণাই মানুষের মুখে মুখে প্রচার পেয়ে আসছে। এবার গবেষণা করে একদল বিজ্ঞানী বলেছেন, দেশের ইলিশের বেশির ভাগই মেঘনা থেকে আসে। স্বাদে ও পুষ্টিতে এই মোহনার মাছ শুধু দেশের মধ্যেই নয়, বিশ্বসেরা। আর আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে পুষ্টি ও স্বাদে সেরা ইলিশগুলো ধরা পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাসাগর গবেষণা সংস্থা (নোয়া) থেকে পাওয়া ১৯৯৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব কথা জানাচ্ছেন দেশের একদল গবেষক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি বিভাগের চারজন গবেষক যৌথভাবে ওই গবেষণা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নেচার পাবলিশিং গ্রুপের বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স রিপোর্টস–এ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। ‘প্রাইমারি প্রোডাক্টিভিটি কানেক্টস হিলশা ফিশারিজ ইন বে অব বেঙ্গল’ শীর্ষক ওই গবেষণা প্রতিবেদনে ইলিশের স্বাদ ও ওজন বৃদ্ধির কিছু কারণ তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, সাধারণত সমুদ্রে থাকা অবস্থায় ইলিশের ওজন ও স্বাদ কিছুটা কম থাকে। কারণ, সেখানে তার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উদ্ভিদ ও প্রাণিকণা কম থাকে। নদী ও মোহনায় তা বেশি থাকে। বিশেষ করে মেঘনা অববাহিকায় এর উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। সাগর থেকে নদীতে আসার সময় ইলিশ স্রোতের উল্টো দিকে ঘণ্টায় ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত সাঁতার কাটে। যাওয়ার পথে শক্তি অর্জনের খাবারও গ্রহণ করে। মেঘনা অববাহিকায় উদ্ভিদকণা বেশি থাকায় ইলিশ তা খায় এবং এতে তার শরীরে প্রচুর ফ্যাটি অ্যাসিড ও ওমেগা থ্রি তৈরি হয়। ওই দুটি উপাদান একই সঙ্গে খুবই পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ভাইরাসের আক্রমণ প্রতিরোধ করাসহ নানা কাজে ওই দুই উপাদান মানুষের জন্য খুবই উপকারী।
গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদনের মাত্র ২ শতাংশ আসে পদ্মা থেকে। তাও সেগুলো আকৃতিতে ছোট হয়। বড় ও স্বাদের ইলিশের বেশির ভাগই পাওয়া যায় মেঘনা অববাহিকায়।
গবেষণায় সুপারিশ হিসেবে মেঘনা অববাহিকায় জাটকা ধরা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, দূষণ কমানো এবং বেহুন্দি জাল বন্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যে পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ে, তার আর্থিক মূল্য দুই বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ লাখ জেলে ওই মাছ ধরার ওপরে জীবিকা চালায়। আর বাজারজাত করা মিলিয়ে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান এই মাছের ওপর নির্ভরশীল।
নাসির উদ্দিন