রোস্ট, বিরিয়ানি, কাচ্চি, পোলাও, তেহারি ইত্যাদি নামগুলোও শুনলেই মুখে পানি চলে আসে। আর সেই লোভনীয় স্বাদের অন্যতম একটি কারণ, এইসব রান্নায় আলু বোখারার ব্যবহার। মশলা জাতীয় ফল নামে অভিহিত করা হলেও আলু বোখারা মোটেও মশলা নয় বরং কুল গোত্রের একটি ফল। কাঁচা আলু বোখারা চিবিয়ে খাওয়া যায় বরইয়ের মত করে এবং পাঁকা ফলটি মশলা হিসাবে রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর কাজে লাগার পাশাপাশি জ্যাম, জেলি ও আচার বানিয়েও খাওয়া যায়। বিদেশী ফল হলেও বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশেই চাষ হচ্ছে আলু বোখারা। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা শহরের রাজঘাট পাড়ে বনলতা নার্সারিতে চাষ হচ্ছে এই দামী মশলা জাতীয় ফলটি।
চাষী মো. শওকত আলী ২০০৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি আলু বোখারার চারা নিয়ে আসেন যা প্রথমে একটু দুর্বল ছিল। পরিচর্যা করে গাছটিকে সুস্থ করে তোলা হয় এবং পরবর্তীতে গুটি কলমের মাধ্যমে আরও বংশবৃদ্ধি করা হয়। শওকত আলীর নার্সারিতে ১২টি পরিপক্ক আলু বোখারার গাছ রয়েছে এবং প্রতিটি গাছেই বাম্পার ফলন হয় প্রায় প্রতি বছরই। গুটি কলমের মাধ্যমে আলু বোখারার চারাও শওকত আলী বর্তমানে বিক্রি করছেন ২০০-১০০০ টাকা দরে। মুক্তাগাছার মাটি আলু বোখারার জন্য বেশ উপযোগী তাই এই ফলটি উৎপাদনে বিশাল সম্ভাবনা বিদ্যমান এই এলাকায়।
অপ্রচলিত এই ফলটির যথাযথ সংরক্ষন ও বাজারজাতকরনের অভাবে নষ্ট হচ্ছে, যার পরিমাণ প্রায় ৩ মণের মত। সঠিক প্রচারনার অভাবে এই অঞ্চলের আলু বোখারা পাচ্ছে না উপযুক্ত বাজার ও সম্ভাব্য ক্রেতা। আলু বোখারা খুবই দামী একটি মশলা জাতীয় ফল, লালচে বর্ণের টক-মিষ্টি এই ফলটির রয়েছে অসম্ভব চাহিদা। আলু বোখারার এই আধারটিকে ই-কমার্সের মাধ্যমে অতি দ্রুত কাজে লাগাতে হবে। নতুন উদ্যোক্তাদের এমন সম্ভাবনাময় পন্য নিয়ে কাজ করার আগ্রহ তৈরির জন্য তৈরি করতে হবে এর সম্পর্কে তথ্যপূর্ণ কন্টেন্ট ও ভিডিও কন্টেন্ট। সেই সাথে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে প্রচারনার ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি অনলাইন ভিত্তিক প্রচারনা, সঠিকভাবে সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ ও সঠিক বাজারের ব্যবস্থা করতে হবে অতি শীঘ্রই। নানান ঔষধি গুণে ভরপুর এই ফলটিকে খুঁজতে আর যেতে হবে না ইরান, আফগানিস্তান বা হিমালয়-কাশ্মীরে।
লিখেছেন -মোসা: রুকসানা সুলতানা