ফেনী জেলার প্রথম পাকা মসজিদ চাঁদগাজি ভূঁইয়া মসজিদ। ফেনী জেলাতে ছড়িয়ে আছে অনেক স্থাপনা ও প্রাচীন ঐতিহ্য যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে দুর্নিবার । বাংলাদেশের স্থাপনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় কারুকার্য খচিত ইতিহাস রচিত পবিত্রতার সাক্ষী নান্দনিক সব মসজিদ। ফেনী জেলায় অবস্থিত চাঁদগাজী ভূঁইয়া মসজিদ দৃষ্টিনন্দন ও দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম৷ এবং এটি ফেনীর আকর্ষণীয় একটি ভ্রমন স্থান।
ইতিহাসঃ-
৪০০ বছর আগে তৈরি এই মসজিদ টি ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মহামায়া নামক ইউনিয়নে অবস্থিত। বলা হয় ১২ ভূঁইয়াদের এক ভূঁইয়া চাদগাজী ভূঁইয়া ১১২২ খ্রিস্টাব্দে এই মোঘল স্থাপনাটি নির্মান করেন৷ প্রায় ২৮ শতক জমির উপর এই মসজিদটি নির্মান করা হয়। ইতিহাসের পাতা আমাদের জানায়
মোঘল আমলে চাদগাজি ভূঁইয়া ছিলেন প্রভাবশালী জমিদার। বার ভূইয়াদের কোন এক বংশের উত্তরসূরী ছিলেন চাঁদগাজী ভূঁইয়া । তিনি মেঘনা তীরবর্তী অঞ্চল থেকে লোক লস্কর নিয়ে এসে বসতি স্থাপন করেন।
চাঁদগাজী ভূঁইয়া সম্পর্কে অনেকে ধারণা করেন তিনি ছিলেন সাধক পুরুষ । ত্রিপুরা রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তিনি আধিপত্য বিস্তার করেন। তার নাম অনুসারে ছাগলনাইয়া উপজেলা দপ্তরের অদূরে চাঁদগাজি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়।
মসজিদের স্থাপত্য শৈলিঃ-
কারুকার্য খচিত এই মসজিদটি মোঘল স্থাপত্যশৈলির আদলে তৈরি করা হয়েছে যা দেখে মুগ্ধ হতে হয়। এর অপূর্ব কারুশৈলি দেখতে পর্যটকদের ভীর জমে।
মসজিদের মূল গেইট এমনভাবে তৈরি যেন মাথা নিচু করে প্রবেশ করতে হয়। গেইটের দক্ষিন পাশে উপরে উঠার একটি সিড়ি রয়েছে।উপরে উঠে পাটাতনের উপর দাঁড়িয়ে আজান দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গেইটের সাথে লাগোয়া মসজিদের তিন পাশে মুসুল্লিদের বসার জন্য পাকা সিড়ি তৈরি করেছিলেন যা এখনও স্থানীয়রা ব্যবহার করছে।
মসজিদটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইট ও চুন সুরকি দিয়ে নির্মান করা হয়েছে। এর দেয়াল গুলো প্রায় ৪ ফুট পুরু । নানান কারুকার্য শোভিত এই মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪৮ ফুট, প্রস্থ ২৪ ফুট এবং উচ্চতা ৩৫ ফুট।
মসজিদের সামনে শ্বেতপাথরের একটি নামফলক রয়েছে। সেখানে আরবিতে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম ও কালিমা তায়িব্যা লেখা আছে। এবং মসজিদের প্রধান দরজার উপরে কালো কষ্টি পাথরে খোদাই করা
ফারসি ভাষায় মসজিদের নির্মান কাল , প্রতিষ্ঠার কাল ও ফারসি কবিতার দুই লাইন লেখা রয়েছে। চলমান হিজরি সন অনুযায়ী এই মসজিদের বয়স কাল ৩১৯ বছর।
মসজিদটির উপরে মধ্যযুগীয় নির্মাণ কৌশল অনুসারে রয়েছে ৩ টি গম্বুজ। মাঝখানেরটি আকারে অন্যগুলোর চেয়ে বড়। গম্বুজের উপরে পাতা ও কলসের নয়াভিরাম নকশা এর সৌন্দর্য কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া একই রকম স্থাপত্যশৈলীর আরো ১২ টি মিনার রয়েছে। এর ভিতরে প্রবেশ করলে উপরে সুন্দর টেরাকোটার নকশা করা রয়েছে। মসজিদের চারপাশের দেওয়ালে রয়েছে ফুল পাতার চিহ্ন ।
মসজিদের ভিতর প্রবেশ করলে প্রাচীন ঐতিহ্যের সব চিহ্ন চোখে পড়ে। অতীতে মসজিদে প্রবেশের জন্য একটি সুদৃশ্য কারুকার্য খচিত দরজা ছিল বর্তমানে এটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তিনটি কাঠের দরজা দেওয়া হয়েছে।
এই মসজিদে কয়েকশ মানুষ একসাথে নামায আদায় করতে পারে।
মাসজিদের পাশেই ১৮ শতক জায়গা জুড়ে একটি বিস্তৃত দিঘী রয়েছে। চাঁদগাজি ভুইঞা এই দীঘি খনন করেছিলেন। যার স্বচ্ছ টলটলে পানি মসজিদের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুন।
এই মসজিদকে ঘিরে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ১৮২২ সালে চাঁদগাজির বংশধরেরা চাঁদগাজি ভূঁইয়া দারুল কুরআন নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
মসজিদের দক্ষিন পাশে রয়েছে চাঁদগাজী ভুইয়ার কবর
কবরটি পাকা করা হয়নি মাটি চিহ্ন দেওয়া। ।মসজিদে সীমানা ঘেরার দুই পাশে রয়েছে কবরের সীমানা।
ঐতিহাসিক এই মসজিদটি ১৯৮৭ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে গেজেট ভুক্ত হয়। ১৯৯৩ সালে মসজিদটিতে সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে মেরামত করা হয়।
চাঁদগাজি ভূঁইয়া মসজিদ কালের সাক্ষী হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে যা শুধু পবিত্র রক্ষার কাজই করছেনা বরঞ্চ মনের খোরাক যোগাতে মোঘল স্থাপনার পরিপূর্ণ রুপ নিয়ে শোভা বর্ধন করছে ভ্রমন পিপাসু ছুটে আসা পর্যটকদের।