ঘুরতে আমরা সবাই ভালোবাসি, নতুন নতুন জায়গার প্রতি আগ্রহ আর আকর্ষণের কমতি নেই আমাদের মাঝে। তবে দর্শনীয় স্থানগুলোর মাঝে নির্দিষ্ট কিছু জায়গাতেই আমাদের ঘুরাঘুরি সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি, যার ফলে আমাদেরই আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা সম্ভাবনাময় পর্যটন স্থানগুলো সম্পর্কে আমরা অবগত নই। চেনা জায়গাগুলোতে বারবার যাওয়ার ফলে আমাদের ভ্রমনের ইচ্ছায় পরছে ভাটা, সেই সাথে পর্যটকদের ভিড়ও কমে যাচ্ছে সেই সব এলাকায়৷ আমরা জানি বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ আর বিদেশি পর্যটকেরা আমাদের এই আয়ের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই আমাদের প্রয়োজন নতুন নতুন দর্শনীয় স্থানগুলোর খবরা-খবর জানা ও জানানোর এবং তার জন্য একটি শক্তিশালী যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা। ই-কমার্স সেক্টরে পর্যটন কেন্দ্রগুলোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, কারণ ই-কমার্সের মাধ্যমেই এখন আমরা আমাদের পর্যটন সম্ভাবনাময় অঞ্চলগুলোর প্রচার করতে পারি সহজেই। সেই সম্ভাবনাময় অঞ্চলগুলোর খোঁজ করতে হলে প্রথমেই আমাদের অনুসন্ধান চালাতে হবে নিজ নিজ জেলা বা অঞ্চলে।
ভালুকা উপজেলা ময়মনসিংহ জেলার প্রথম মডেল থানা ও দেশের অন্যতম প্রধান বিসিক নগরী। বানিজ্যিক এই শহরের আশেপাশেই রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান ও পর্যটন কেন্দ্র, গড়ে উঠেছে বিভিন্ন রিসোর্ট আর বাগান, পার্ক ও উদ্যান। এই অঞ্চলের পর্যটন স্থানগুলো ই-কমার্স সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে যদি আমরা একটু গুরুত্ব সহকারে এই জায়গাগুলোর প্রচার করতে পারি। ভালুকা উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মাঝে অন্যতম হলো, কাদিগড় জাতীয় উদ্যান, তেপান্তর পিকনিক ও শ্যুটিং স্পট, মেঘমাটি ভিলেজ রিসোর্ট, গ্রীণ অরণ্য পার্ক, ড্রীম ওয়ার্ল্ড পার্ক, অরণ্য ইকো রিসোর্ট, চন্দ্রমল্লিকা রিসোর্ট ইত্যাদি। তবে তথ্য উপাত্তের অভাব ও প্রচারের অভাবে অনেক অঞ্চলেরই বিস্তারিত কোন কিছু জানা যায়নি।
কাদিগড় জাতীয় উদ্যান
বন বা উদ্যান যাদের পছন্দের জায়গা তাদের জন্য ভাওয়াল গড় বা মধুপুরের গড়ের বিকল্প হতে পারে ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নে অবস্থিত কাদিগড় জাতীয় উদ্যান। দীর্ঘ সময় ধরে গড়ে তোলা এই উদ্যানটি ভালুকা উপজেলার ২১ ভাগ জায়গা জুড়ে আছে যা পর্যটকদের দিবে অরণ্যের স্বাদ। কাচিনা ইউনিয়নের সিডস্টোর বাজার থেকে সখিপুর যাওয়ার রাস্তায় পরে কাচিনা বাজার, সেই বাজার হতে প্রায় ১ কি.মি. উত্তরে পালগাঁও চৌরাস্তার পাশেই কাদিগড় জাতীয় উদ্যানের প্রধান প্রবেশপথ। কাদিগড় বিট ও উথুরা বিট নামকরণ করে কাদিগড় জাতীয় উদ্যানকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কাদিগড় জাতীয় উদ্যানে রয়েছে ১টি প্রবেশপথ, ১টি অফিস ভবন, ২টি ইকো কটেজ, ১টি বিশ্রামাগার, ২টি গোলাঘর, ১টি ওয়াচ টাওয়ার, ২টি সেন্ট্রি পোস্ট, ১টি পিকনিক স্পট এবং ১টি লেক। উদ্যানটি ঘিরে এবং ভেতর দিয়ে মোট ৭শ মিটার পাকা রাস্তা রয়েছে আর রয়েছে ব্রিক সলিং রাস্তা যার দৈর্ঘ্য ১ হাজার মিটার।
চুন, লোহা আর অ্যালুমিনিয়ামের পরিমাণ এই গড়ের মাটিতে বেশি থাকায় মাটির রং লালচে যা মধুপুর গড়ের নিদর্শন হিসাবে প্রকাশ পায়। স্থানীয় মানুষের ভাষায় ‘মাইটাল’ আর ভূ-তাত্ত্বিকদের মতে মধুপুর ক্লে নামে খ্যাত এই কাদিগড়ের মাটি, যার আদি উৎস মুধুপুরের গড়। ক্রান্তিয় পতনশীল ও ঔষধি গুণাগুণ সমৃদ্ধ শাল এবং গজারি গাছ এই বনের রাজা, যা দেয় ভাওয়াল গড়ের রূপের ছায়া; আর রয়েছে মেহগনি গাছের বাগান। বিভিন্ন গুল্মজাতীয় গাছ ও বেত গাছের ছড়াছড়ি পুরো বনাঞ্চল জুড়ে। উঁচুনিচু মালভূমির মতো মাঠ ও এলাকাগুলো চোখে পরে একটু পরপরই, যা ছোট পাহাড় ও টিলার আমেজ তৈরি করে। আর জীবজন্তুর কথা বলতে গেলে তো হনুমানের কথাই সবার প্রথম আসে, যদিও তা বিপন্ন প্রানীর তালিকায় চলে এসেছে ইতিমধ্যে। এছাড়াও নানান প্রজাতীর পাখপাখালির মাঝে দেশী শুমচার দেখা মিলে এই বনে যা প্রায় বিলুপ্ত একটি পাখি। বানর, ময়ূর, বন মোরগ, বুনো শুকোরসহ অনেক জীব-জন্তুর বসবাস এই বনে।
বনের ভিতরে গড়ে উঠা কাঁঠাল বাগান, মেহগনি বাগান, বুনো আলু, বেত ইত্যাদি বনাঞ্চল এলাকার মানুষের জীবিকার উৎস। কাদিগড় বিটের বিট অফিসার মোঃ ছেফায়েতউল্লার কাছ থেকে জানা যায় যে, এই বনাঞ্চলের বনজ দ্রব্য বিক্রি করে সরকারী কোষাগারে জমা হয় প্রায় অর্ধ কোটি টাকা৷ তবে বনের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে পরিমাণ লোকবল প্রয়োজন তা নেই বলে অবৈধভাবে কেটে নেয়া হচ্ছে মেহগনি ও শালের মতো দামী কাঠের গাছ।
কাদিগড় জাতীয় উদ্যানের কথা এখনও অনেকের অজানা। ভ্রমণ পিয়াসী মানুষগুলোর জন্য এই উদ্যানটি হতে পারে বনের প্রতিরূপ। ময়মনসিংহ সদর হতে এই বনাঞ্চলটি প্রায় এক ঘন্টার পথ, আর ঢাকা হতে প্রায় দুই ঘন্টার। বাস বা মাইক্রোবাসে করে সহজেই ভালুকার সিডস্টোর তারপর কাচিনা চলে যাওয়া যায়। খাবার দাবারের ব্যবস্থার ব্যপারে কিছু জানা যায়নি, তাই ভালো হয় নিজেদের খাবারের ব্যবস্থা নিজেরাই আগে থেকে করে নিলে। রিসোর্ট বা পিকনিক স্পটের তুলনায় খরচ এখানে কম তা বলাই বাহুল্য।
মেঘমাটি ভিলেজ রিসোর্ট
মাঝে মাঝেই আমাদের মন ছুটে যেতে চায় গ্রামের জীবনে। গ্রামের মেঠো পথ আর খোলা হাওয়ায় দিন কাটাতে হৃদয় ব্যাকুল হয়ে পরে কখনও কখনও। গ্রামীণ পরিবেশের স্বাদ পেতে চাইলে আর শহরের যান্ত্রিকতা থেকে একটু সময়ের জন্য মুক্তি চাইলে সহজেই চলে যাওয়া যেতে পারে মেঘমাটি ভিলেজ রিসোর্টে। ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলায় অবস্থিত এই রিসোর্টটি বর্তমানে পরিচিতি পাচ্ছে বেশ ভালোভাবেই। মাটির ঘ্রাণ পেতে বা সবুজের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাইলে মেঘমাটি ভিলেজ রিসোর্টটি হতে পারে অন্যতম পছন্দের একটি জায়গা।
শহরে বড় হওয়া মানুষগুলোকে কেউ যদি একটুখানি গ্রাম দেখাতে চায় তাহলে মেঘমাটি ভিলেজ রিসোর্ট একটি আদর্শ স্থান। রিসোর্টটির দুই ধারে আবারিত ধান ক্ষেত আর দিগন্তজোড়া সবুজে ঘেরা জায়গাটি মনে স্থান করে নিবে মুহূর্তের মাঝে। রিসোর্টে রয়েছে বরশি দিয়ে মাছ ধরা, পুকুরে সাঁতার কাটার মতো সুবিধা; সেই সাথে রয়েছে জানা অজানা নানান জাতের গাছ।
আধুনিক দু’তলা বাড়ির ভিতর সুইমিং পুল রয়েছে, রয়েছে চারপাশ ঘেরা নানান ফলের বাগান। সেই বাগান থেকে তাজা ফল তুলে খাওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে যে কেউ। বিশাল মাঠ রয়েছে রিসোর্টের সামনে, খেলাধুলার উপকরণ জোগান দেবে রিসোর্টের কর্তৃপক্ষই। আরও রয়েছে গাছে ঝোলানো দোলনা, পানির উপর কটেজ আর ইনডোর গেমিং এর সুযোগ সুবিধা। ফ্যামিলি প্যাকেজে সহজেই বুকিং দিয়ে অবকাশ কাটিয়ে আসা যাবে এই রিসোর্টটিতে, প্যাকেজের ভিতর সকল প্রকার খাবার আর ভেহিক্যাল খরচ ইনক্লুড করা রয়েছে।
ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত এই রিসোর্টটিতে যেতে হলে বাসযোগে বা মাইক্রোযোগে যেকোনভাবেই যাওয়া যাবে। ঢাকা থেকে আড়াই ঘন্টা আর ময়মনসিংহ থেকে প্রায় এক ঘন্টার পথ অতিক্রম করতে হবে এই রিসোর্টে যেতে।
চন্দ্রমল্লিকা রিসোর্ট
ভালুকা উপজেলা বর্তমানে বেশ কয়েকটি পার্ক ও রিসোর্টের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তেমনি একটি রিসোর্ট ভালুকার কাঠালীতে অবস্থিত চন্দ্রমল্লিকা হলিডে রিসোর্ট। প্রাকৃতিক পরিবেশে একটা দিন পিকনিক করার জন্য বা কিছুদিন সবুজের মাঝে কাটানোর জন্য এই রিসোর্টটি বেশ উপযোগী। রিসোর্টটিতে রয়েছে বেশকিছু দেখার মতো স্থান এবং রয়েছে সময় কাটানের মতো নানা রকম ব্যবস্থা। বিশাল জায়গা জুরে তৈরি করা এই রিসোর্টটি বর্তমানে অনেকেরই রিফ্রেশমেন্টের জন্য পছন্দের জায়গা।
ঘন সবুজ গাছ-গাছালি আর নানান জাতের ফুল ও ফলের গাছ, এক তলা বা দু’তলা কটেজের ছড়াছড়ি আর সেগুলোর সামনে বিশাল বড় করে বাগান আর চত্বর; লম্বা বারান্দাওয়ালা ঘর সাথে ঘাট বাঁধানো পুকুর; রাজহাঁসের একটা পাল হেলেদুলে হেঁটে বেড়াচ্ছে কোন বাঁধন ছাড়াই; চন্দ্রমল্লিকা হলিডে রিসোর্টের কথা বলতে গেলে অনেক কিছুই তুলে ধরতে হয়। ফ্যামিলি ট্যুরে বা পিকনিকে যাওয়ার জন্য বেস্ট একটা জায়গা এই রিসোর্টটি। একদিন পুরোটা সময় একা রিসোর্টটি ঘুরে দেখতে চাইলেও যাওয়া যাবে, তার জন্য কাটতে হবে টিকেট। ছোট বড় সবার জন্য রয়েছে বিশাল বড় আর খুবই সুন্দর একটি সুইমিং পুল। রয়েছে বাচ্চাদের খেলাধুলার ব্যবস্থা। রিসোর্টে তৈরি করা ঘরগুলো একদম ঘরোয়া পরিবেশ তৈরি করার মতো করেই গড়ে তোলা হয়েছে। সেই সাথে বিকালে হাঁটার জন্য রয়েছে বিশাল জায়গা আর দেখার মতো অনেক অনেক গাছ আর পাখি। পুকুর ঘাটটি খুব আকর্ষণ করবে যেকোন মানুষকেই। এক কাপ চা নিয়ে প্রকৃতির মাঝে একটু সময় কাটাতে চাইলেও রয়েছে সেই ব্যবস্থাও।
চন্দ্রমল্লিকা হলিডে রিসোর্টে যাওয়ার জন্য ঢাকা বা ময়মনসিংহ হতে বাসে করে ভালুকায় নেমে রিক্সা বা অটো দিয়ে চলে যাওয়া যাবে। সঠিক প্রচারের মাধ্যমে রিসোর্টটি হতে পারে ভ্রমনের জন্য একটি আদর্শ জায়গার আধার।
তেপান্তর শ্যুটিং স্পট
তেপান্তর রিসোর্ট এন্ড শ্যুটিং স্পট বেশ জনপ্রিয় একটি জায়গা। শ্যুটিং স্পটের জন্যই বিখ্যাত এই জায়গাটি ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার জমিরদিয়া মাস্টারবাড়িতে অবস্থিত। সহজ যোগাযোগ ব্যবস্তা আর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য খুব দ্রুত এই জায়গাটি মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। তেপান্তর রিসোর্টটিতে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন কৃত্রিম স্থাপনা যা বেশ দৃষ্টিনন্দন। বড়দের জন্য আলাদা খেলাধুলার ব্যবস্থার পাশাপাশি রয়েছে ছোটদের জন্যও আলাদা প্লে-গ্রাউন্ড। সুইমিং পুল, পার্টি জোন, ইনডোর গেমসের সুবিধাসহ এই রিসোর্টে ব্যবস্থা রয়েছে মিটিং, প্রশিক্ষণ আর বৈঠকের। রিসোর্টটিতে নিজস্ব ক্যাটারিং সার্ভিসের ব্যবস্থা থাকায় খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। মনোরম পরিবেশ আর জায়গার প্রশস্তাসহ রিসোর্টে থাকার জায়গাগুলো বেশ সুন্দর আর আরামদায়ক বলে শ্যুটিং এর ভিড় লেগেই থাকে প্রায় সারাবছর। তেপান্তর রিসোর্ট ও শ্যুটিং স্পটের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যার জন্য পিকনিক স্পট বা ঘুরাঘুরি অথবা দুই-একদিন কাটানোর মতো জায়গা বলতে প্রথমেই এই রিসোর্টের কথা মাথায় আসে। ঢাকা থেকে বাসযোগে এসে ভালুকা মাস্টারবাড়িতে নেমে বা প্রাইভেট কারে করে সোজা চলে যাওয়া যাবে এবং ময়মনসিংহ থেকে একইভাবে ঘুরে আসা যাবে তেপান্তর রিসোর্ট এন্ড শ্যুটিং স্পটটিতে।
গ্রীন অরন্য পার্ক
ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নে, সিডস্টোর বাজার থেকে ২ কি.মি. পূর্বে বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে গ্রীন অরন্য পার্ক। দর্শনীয় স্থান, শিশু পার্ক আর শ্যুটিং স্পট হিসাবে পার্কটি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারীতে উদ্ধোধন করা হয়েছে। পার্ক বলতেই যেখানে আমরা বুঝি কৃত্রিম তৈরি কোন জায়গা, সেখানে গ্রীন অরন্য পার্ক সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রাকৃতিক পরিবেশের মাঝেই পার্কের স্থাপনাগুলো তৈরি করে ভারসাম্য করা হয়েছে দুটো পরিবেশের মাঝে। এমনকি কিডজ জোনের রাইডগুলো ও অন্যান্য রাইডগুলোও বিশাল জায়গার মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে তৈরি করা হয়েছে যা পরিবেশের কৃত্রিমতা কমিয়ে দিয়েছে অনেকটাই।
পার্কটিতে রয়েছে কৃত্রিম লেক যেখানে বোট রাইড রয়েছে। পার্কের পুরো কনস্ট্রাকশন এখনও শেষ হয়নি। পার্কটির ভিতরে থাকার জায়গা হিসাবে কটেজ তৈরি করা হচ্ছে বেশ কিছু। পার্কটি শ্যুটিং স্পট হিসাবেও ব্যবহার করা যাবে এমনভাবেই ধীরে ধীরে গড়ে তোলা হচ্ছে। পার্কটিতে রাইডসহ ছোট ছোট চত্বর, ব্রীজ, লেক, লেকসাইড পেভমেন্ট, ছোট ছোট স্থাপত্য তৈরি করা হয়েছে। ফ্যামিলি বা বন্ধুবান্ধবসহ ঘুরে আসার জন্য গ্রিন অরন্য পার্ক হতে পারে সুন্দর একটি স্থান।
বাসযোগে দেশের যেকোন স্থান থেকে ভালুকা উপজেলার স্কয়ার মাস্টারবাড়ী অথবা সীডস্টোর বাজার নেমে হবিরবাড়ি ইউনিয়নে রিক্সাযোগে চলে যাওয়া যাবে এই পার্কটিতে। আর ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবস্থা থাকলে সরাসরি পার্কে চলে যাওয়া যাবে। সিডস্টোর বাজার থেকে পার্কে যাওয়ার রাস্তাটিও গ্রামীন পরিবেশের আর এতো সুন্দর যে যাওয়ার সময়টুকুও হয়ে উঠবে উপভোগ্য।
ড্রীম ওয়ার্ল্ড পার্ক এন্ড রিসোর্ট
সম্প্রতি যে পার্কটি পিকনিকের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তা হলো ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার হাজির বাজারের ড্রীম ওয়ার্ল্ড পার্ক এন্ড রিসোর্ট। মোটামুটি খোলা জায়গা নিয়ে সুন্দর করে সাজানো আর অনেকগুলো রাইড বসানো এই পার্কটি ঘুরাঘুরি করার জন্য এবং পিকনিকের জন্য দারুন একটি জায়গা।
কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা সমাবেশ করার জন্য পার্কটির ভিতরে যেমন রয়েছে স্থায়ী মঞ্চ আবার ঘুরে ফিরে দেখার জন্য রয়েছে বাগান, চত্বর আর ছোট ছোট ফোয়ারা। বোট রাইড, কিডজ প্লে-গ্রাউন্ড, ছোট ছোট রাইড পুরো ড্রীম ওয়ার্ল্ড পার্ককে করেছে সাধারণ টুরিস্টদের জন্য আকর্ষণীয় একটি জায়গা। রাত্রিযাপনের জন্য পার্কটির ভিতরে রয়েছে বিভিন্ন দাম ও মানের আবাসিক রুমের ব্যবস্থা।
বাসে করে ময়মনসিংহ, ঢাকা বা গাজীপুর থেকে ভালুকা সিডস্টোর বাজারের সামনে নেমেই পৌঁছে যাওয়া যাবে এই পার্কটিতে। একদিনে ঘুরে ফিরে দেখার মতো একটি পার্ক এই ড্রীম ওয়ার্ল্ড পার্ক এন্ড রিসোর্ট।
অরণ্য ইকো রিসোর্ট
সবুজের কাছে নিজেকে সঁপে দিতে চাইলে একবার ঘুরে আসা যেতে পারে অরন্য ইকো রিসোর্ট থেকে। ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার নিশিন্দায় তৈরি হয়েছে অরণ্য ইকো রিসোর্ট। ভালো খাবার এবং সুন্দর পরিবেশের সমন্বয়য়ে গড়ে উঠেছে এই রিসোর্টটি। সবুজের মাঝে রয়েছে কাঠের কটেজ, বড় বড় গাছের মাঝে হঠাৎ দেখা যায় ঝোলানো দোলনা, লেক পাড়ে রয়েছে সুন্দর করে ডেকোরেশন করা বসার জায়গা। এই রিসোর্টটির ফ্যাসিলিটিসগুলোর মাঝে রয়েছে বোটিং, ফিশিং, প্লে গ্রাউন্ড, চিলড্রেন প্লে জোন, সুইমিং পুল, সাইক্লিং এর মতো সুবিধা। পুরো রিসোর্টটি জুরে বাইল ট্রেইল রয়েছে; লেকের মাঝে তৈরি করা হয়েছে ভাসমান আইল্যান্ড যেখানে বোটে করে গিয়ে লেকের মাঝে মাছ ধরা যাবে বা একান্তে সময় কাটানো যাবে। বড়দের খেলার জন্য রয়েছে বড় মাঠ, যেখানে ক্রিকেট, ফুটবল বা ভলিবল খেলে পার করে দেয়া যায় অনেকটা সময়। ছোট বাচ্চাদের খেলার জন্য রিসোর্ট থেকেই প্রোভাইড করা হয় ইন্সট্রুমেন্ট বা প্রপস৷ অরণ্য ইকো রিসোর্ট এর সবচেয়ে প্রশংসনীয় দিক হচ্ছে এর খাবারের ব্যবস্থা। ট্রেইনড এ স্কিলড এক দল কেটারিং এর লোক খাবারের পুরো ব্যপারটি দেখাশোনা করে থাকে। তাই অন্ততঃ ভালো মানে খাবার পাওয়ার চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, সুন্দর একটি জায়গার মাঝে সময় কাটাতে গিয়ে অস্বস্তিতে পরতে হয় না।
অরণ্য ইকো রিসোর্টটি ময়মনসিংহের খুব কাছেই অবস্থিত কারণ তা ভালুকা উপজেলা ও ত্রিশালের সীমানার কাছে গড়ে তোলা হয়েছে। মাঝেই পোঁছে যাওয়া যাবে এখানে। সবুজ ও সুন্দরের মাঝে অবকাশ কাটাতে অরণ্য ইকো রিসোর্ট আদর্শ একটি রিসোর্ট।
সৌখিনতার জন্যই শুধু নয়, মনের শান্তি ও বিশ্রামের জন্যও আমাদের ঘুরাঘুরি বা একান্তে সময় কাটানোর প্রয়োজন। পিকনিক, ডে-আউট বা স্টে-আউটের মাধ্যমে আমরা সহজেই মনপর প্রফুল্লতা নিয়ে আসতে পারি। জীবন যাপনের বা কাজের একঘেয়েমী কাটাতে একা বা দল বেঁধে ঘুরতে যাবার কোন বিকল্প নেই। বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ অনলাইনে তাদের বেশিরভাগ সময় কাটায়। আমাদের অঞ্চলের পর্যটন এরিয়াগুলো সম্পর্কে জানানোর জন্য এখন সবচেয়ে সহজ মাধ্যম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। ই-কমার্স সেক্টরে এই জায়গাগুলোর গুরুত্ব তুলে ধরতে প্রয়োজন বেশি বেশি তথ্যমূলক কন্টেন্ট আর ভিডিও। যেহেতু রিসোর্ট, পার্ক আর শ্যুটিং স্পটগুলো থেকে দেশের বার্ষিক আয় হয় সেহেতু পর্যটন এরিয়াগুলোকে ঢালাওভাবে সাজাতে হবে। আর তার জন্য প্রয়োজন বেশি বেশি পর্যটকদের আনাগোনা আর তা সম্ভব শুধুমাত্র সঠিক প্রচারের মাধ্যমেই। একটি জায়গার পর্যটন স্থানগুলোর সাথে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার এসকল পর্যটন এরিয়াগুলোর প্রচার ও প্রসারের জন্য প্রয়োজন শিক্ষিত ও দক্ষ লোকবলের, যারা এই জায়গাগুলো সম্পর্কে জানবে, জানাবে আর প্রচার করবে বেশি করে। আর এই কাজে প্রথমেই এগিয়ে আসা প্রয়োজন নিজ জেলা বা উপজেলার মানুষের।
লেখক
রুকশানা সুলতানা রুনা