শীতের পোশাক হিসেবে শাল যুগ যুগ ধরেই জনপ্রিয়তা শীর্ষে। যেকোন বয়সী নারী-পুরুষ উভয়ই খুব সহজে ব্যবহার করতে পারেন। এটি এখন কেবলমাত্র শীত নিবারনের পোশাকই নয় বরং ফ্যাশনের অনুষঙ্গও বটে। নারীরা শাড়ি,গাউন,সেলোয়ার-কামিজ, টপস বা ওয়েস্টার্ন পোশাকের সাথে এবং পুরুষেরা পাঞ্জাবি, শার্ট,টি-শার্ট, কুর্তার সাথে দেশীয় শাল ব্যবহার করছেন। যদিও গত দুই বছর আগেও আমরা দেশীয় শাল বলতেই বিদেশী বিভিন্ন ধরনের শালের নামই জানতাম। কিন্তু গত বছর থেকে এই চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশ ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রাজিব আহমেদ স্যার দেশীয় শালের ওয়েভ করেন৷ তখন আমরা জামদানী, খেশ, স্ক্রিনপ্রিন্ট, বম,খাদি,লতিপাতা,ভেলভেট,এমব্রয়ডারি, উলেন, ভিসকস,ডেনিম, হাতের কাজের নকশী, ব্লক,হ্যান্ডপেইন্ট,সিল্ক সহ প্রায় ৪০ ধরনের দেশীয় শালের নাম জেনেছি৷
২০২১ শালের জুলাই থেকে স্যারের পরামর্শ মত অনেকেই অনলাইনে ( ফেসবুকে নিজেদের ব্যক্তিগত আইডি, ছোট ছোট গ্রুপ, মিডিয়া) দেশীয় শাল নিয়ে প্রচার শুরু করি। এর আগে দেশীয় শাল নিয়ে সার্চ করলে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যেতো না। কিন্তু গত ছয়মাসে ক্রেতারা নিজেদের, পরিবার এবং উপহারের জন্য দেশীয় শালকেই পছন্দ করছেন।তারা ছবি সহ রিভিউ শেয়ার করছেন,গরম কালেও দেশীয় শালের অনেক অনেক ছবি আমাদের দৃষ্টি আর্কষণ করছিলো। যা বিগত বছরগুলোতে দেখা যায় নি৷দেশীয় শালের উদ্যোক্তারা নিজেদের শালের ইতিহাস, উৎপত্তি স্থান, বুনন প্রক্রিয়া, যত্ন, ব্যবহার পদ্ধতি ইত্যাদি বিভিন্ন তথ্য প্রচার করছেন৷ এর ফলে দেশীয় ক্রেতা সহ প্রবাসী ক্রেতারাও দেশীয় শাল নিয়ে আগ্রহী হচ্ছেন৷
বাংলাদেশে হ্যান্ডলুম ও পাওয়ার লুম দুই ধরনের শাল তৈরী হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকেই হ্যান্ডলুম শাল তৈরীর কাজ বেশী হলেও পাওয়ারলুমের কাজ হতো। যদিও তা পরিমানে খুবই সীমিত৷ তবে বর্তমানে পাওয়ারলুম শালে বাটিক, ব্লক,স্ক্রিনপ্রিন্ট, হ্যান্ডপেইন্ট সহ নানান ফিউশন দেখতে পাচ্ছি। এই শালগুলো আরামদায়ক, দাম হাতের নাগালে এবং রুচিসম্মত। এতো এতো ভিন্নতার কারনে ক্রেতারা শীতের পোশাক হিসেবে দেশীয় শালকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন।
গতবছর আমরা বম নামক এক ধরনের দেশীয় শালের নাম জেনেছি৷ পার্বত্য চট্টগ্রামের মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর হাতে তৈরী হয় এই শাল।তাদের নামানুসারে এই শালের নাম হয় বমশাল। উলের চিকন সুতায় কোমড় তাঁতে বোনা হয় বমশাল। বান্দরবান ও রাঙামাটি বমশালের উৎপত্তির স্থান হলেও অনলাইনের মাধ্যমে সারাদেশে পাওয়া যায় এবং অত্যাধিক পরিচিতি লাভ করেছে এই শাল।
অনলাইনে দেশীয় শালের যতবেশী প্রচার হবে সামনের বছরগুলোতে ততবেশী সুফল আমরা সকলেই দেখতে পাবো। এর জন্য দেশীয় শালের উদ্যোক্তাদের একসাথে কাজ করতে হবে। তারা নিজেদের শাল ছাড়াও অন্যদের শাল প্রচার করতে পারেন, ৫-১০ জন মিলে শালের ক্রেতাদের নিয়ে ইভেন্ট করতে পারেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি ছোট ছোট প্রায় ২০০ এর বেশী ছোট গ্রুপ একসাথে দেশীয় শালের ওয়েভে অংশগ্রহণ করছে। এটি আমাদের দেশীয় শালের প্রচারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে৷
এভাবেই অনলাইনের মাধ্যমে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শালের প্রচার এবং কন্টেন্ট বৃদ্ধি করার মাধ্যমে দেশ সহ সারাবিশ্বে শালের সুনাম ছড়িয়ে পরবে।