একটি আড্ডা বা ইভেন্টে বিভিন্ন বয়সের মানুষ, বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ উপস্থিত থাকে এবং সেখানে মুখোমুখি কথাবার্তার দারুন সুযোগ থাকে।আর এ সুযোগটাই যে কোন পণ্য বা বিষয়বস্তুর প্রচারে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
দেশিয় শাল দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী পণ্য।যে কোন দেশিয় পণ্যই দেশের ঐতিহ্য বহন করে,দেশের আর্থিক উন্নয়নে সহায়তা করে।সম্প্রতি ই-কমার্স জগতে এই পণ্যের উপস্থিতি জমজমাট। বর্তমানে প্রায় ২০-৩০ ধরনের দেশিয় শাল,এবং দেশিয় শালের হাজার হাজার উদ্যোক্তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনলাইন জগতে। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্যোক্তার উপস্থিতি রয়েছে ফেসবুকে। দেশিয় কারিগরের তৈরি দেশিয় শাল নিয়ে প্রচার,বিক্রি সবকিছুই চলছে পুরোদমে।কিন্তু এইখানে বিক্রিটাই কি মুখ্য? অনেকের মত আমিও বলবো,”জ্বী বিক্রিটাই মুখ্য”।কারন দেশিয় পণ্য বিক্রি হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। তবে যে কোন পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ হচ্ছে প্রচার।
বাংলাদেশে বিগত বেশ কিছু বছর দেশিয় পণ্যের প্রচার খুব আশানুরূপ ছিলোনা।তাই স্বাভাবিক ভাবেই বর্তমানে দেশিয় পণ্যের প্রচার বেশ জমজমাট হওয়া উচিত। প্রচার বলতেই আমরা সবাই ভেবে থাকি বিজ্ঞাপন।আর অনলাইন জগতে সে বিজ্ঞাপন হবে বিজনেস পেইজে।
আসলেই কি তাই?
আমরা যদি ক্রেতার দিকে একটু গভীরভাবে অবজারভেশন করি,তাহলে একটা ব্যাপার খেয়াল করবো যে,ক্রেতার রুচিভেদে প্রতিটা মানুষের পছন্দ-অপছন্দ আলাদা।আবার ক্রেতার বয়সভেদে পছন্দ-অপছন্দ আলাদা।একই সাথে ক্রেতার সামর্থ্যভেদেও পছন্দ-অপছন্দ আলাদা।
এই ভেদাভেদ টা আমরা তখনই খেয়াল করতে পারবো যখন আমরা ক্রেতার সাইকোলজি বুঝার চেষ্টা করতে পারবো,ক্রেতাকে কাছ থেকে জানতে শুনতে পারবো।কিন্তু অনলাইন জগতে কিংবা ই-কমার্স জগতে এই ব্যাপারটা খুব চ্যালেঞ্জিং।
এই চ্যালেঞ্জিং ব্যাপারটাকে সহজলভ্য করার জন্য চমৎকার একটি আইডিয়া হচ্ছে ইভেন্ট বা আড্ডা।
দেশিয় শাল নিয়ে যে কোন ইভেন্ট বা আড্ডা দেশিয় শাল প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
কিভাবে??
*ক্রেতাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব তৈরিঃ ই-কমার্স জগতে আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে অনেক দূরে বসবাস করি।স্বাভাবিক অর্থেই সেখানে আমাদের খুব একটা কথাবার্তার সুযোগ হয়ে উঠেনা কিংবা হয়ে উঠলেও সেটা কেবল কেনাবেচাকেই ঘিরে।একজন মানুষের ব্যাক্তিত্ব,কথাবার্তা,ব্যবহার খুব সহজেই অন্যের কাছে নিজেকে আকর্ষনীয় ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে,নিজের পার্সোনাল ব্রান্ডিং স্ট্রং করে তুলতে পারে।আর সেটা যদি হয় মুখোমুখি বা সামনাসামনি তাহলে তো কোন কথাই নেই।
দেশিয় শালের উদ্যোক্তারা যদি প্রতিবছর অন্তত একবার দেশিয় শাল নিয়ে আড্ডা বা ইভেন্ট এর ব্যবস্থা করে,তাহলে সেখানে সরাসরি ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগের একটা পথ তৈরি হয়।যেখানে ক্রেতারা দেশিয় শাল নিয়ে বিক্রেতার জার্নি শুনবে।যা দেশিয় শালের প্রচারে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
*ব্রান্ড ভ্যালু বৃদ্ধিঃ অনলাইন জগতে বেশিরভাগ ক্রেতাদেরই একটা অভিযোগ থাকে সেটা হচ্ছে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব বা ফেইক সেলার।ক্রেতারা সহজেই সব বিক্রেতাদের বিশ্বাস করতে পারেনা।কোন কোন ক্রেতা এই কারনে পণ্যের প্রচার অন্যদের কাছে করতেও ভয় পায়।ফলে ব্রান্ড সচেতনতা বা ব্রান্ড ভ্যালু বাড়েনা।এই সমস্যার সমাধান করবে ইভেন্ট বা আড্ডাগুলো।বছরে একবার দেশিয় শালের উদ্যোক্তারা যদি এই ধরনের আয়োজন করে তাহলে ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ক ভালো হয়।ক্রেতারা সরাসরি কথা শুনা ও বলার সুযোগ পায় বলে বিশ্বস্ত হয় সম্পর্ক টা এবং সব কিছু সামনাসামনি হওয়াতে দীর্ঘদিন এই আড্ডা বা ইভেন্টের ব্যাপারগুলো ক্রেতার মনে থাকে,তারা অন্যের কাছেও এই ব্যাপারে প্রচার করে।যা পরবর্তীতে ব্রান্ড ভ্যালু বাড়াতে সক্ষম হয়।
*বিজনেস টু বিজনেসঃ আমরা বেশিরভাগ উদ্যোক্তারাই মনে করি সমজাতীয় পণ্যের উদ্যোক্তারা একে অন্যের প্রতিযোগী,তারা কখনো বন্ধু হতে পারেনা।কিন্তু এটা আমাদের ভ্রান্ত ধারনা।প্রতিটা মানুষের কাজ, উপস্থাপনের ধরন আলাদা আলাদা।কিন্তু একত্রে এর প্রচার ক্ষমতা চমৎকারভাবে বৃদ্ধি করা সম্ভব।যে কোন আড্ডা বা ইভেন্ট গুলো যদি কয়েকজন শালের উদ্যোক্তা মিলে করি,কিংবা একজন করলেও আশেপাশের পরিচিত অন্যান্য শালের উদ্যোক্তাদের দাওয়াত করি তাহলে বেশ ভালো হয়।কেননা সকল শাল উদ্যোক্তারাই একই ধাচের শাল বিক্রি করে এমনটা না।অনেকক্ষেত্রে একেকজন একেক ক্যাটাগরির শাল বিক্রি করে,কেউবা পাইকারি বিক্রেতা হয়।আড্ডা বা ইভেন্ট গুলোতে যদি এমন কতিপয় শালের উদ্যোক্তারা একত্রিত হয়,তাহলে বি টু বি বিজনেস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি,এবং উদ্যোক্তাদের পাল্লা ভারী হওয়ার কারনে প্রচারের ব্যাপারটাও অনেক প্রসারিত হবে।
দেশিয় শালের ইভেন্ট নাকি আড্ডা? কোনটার গ্রহনযোগ্যতা বেশি? দুটোরই গ্রহনযোগ্যতা বেশি।তবে আপনি কোনটা বাছাই করবেন, Its depends on your ability. এইখানে সামর্থ্য বলতে কেবলমাত্র অর্থ খরচের ব্যাপারটাকেই বুঝায় না।এখানে সামর্থ্য বলতে আপনার আড্ডা বা ইভেন্ট সামলানোর মানসিকতা, যোগ্যতা,পারিপার্শ্বিক অবস্থা,অর্থ ব্যায়ের মনোভাবের সবটুকুই বুঝায়।
আড্ডা এবং ইভেন্ট এর পার্থক্য কি?
আড্ডা টা মূলত ঘরোয়া আয়োজনের মত হয় কিংবা গেট টুগেদারের মত।এইখানে সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ২০-৩০ জন হয়।যেখানে মূলত সবাই মিলে দেশিয় শালের পছন্দ,সম্ভাবনা,প্রচার,চাহিদা নিয়ে আলোচনা করবে,পরবর্তী ইভেন্ট এর ও আলোচনা করা যেতে পারে এখানে।
অন্যদিকে ইভেন্টের ক্ষেত্রে সব কিছুরই প্রসারতা বৃদ্ধি পায়।ইভেন্টের সদস্য সংখ্যা তুলমামূলক বেশি হয়, অন্তত সর্বনিম্ন ৪০-৫০ জন।ইভেন্টে শাল নিয়ে মেলার আয়োজন হতে পারে,বিশেষ কোন অতিথির উপস্থিতি থাকতে পারে।জেলাভিত্তিক পর্যায়ে ইভেন্ট খুব কার্যকরী হয়।
তবে নব উদ্যোক্তাদের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে শাল আড্ডাটাই বেশি কার্যকরী।
কখন করা যেতে পারে শাল আড্ডা বা ইভেন্টঃ
এইটা একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।আমরা অনেকেই মনে করি শাল আড্ডা বা ইভেন্ট যেহেতু প্রচারের কাজ করে তাই এর আয়োজন বিক্রির শুরুতেই করতে হবে।এটা একেবারেই ভুল ধারনা।
প্রচার কাজ যে সবসময় শুরুর দিকেই হবে এমনটা না।অনেক সময় পণ্যের প্রচার ভোক্তার নিকট যাওয়ার পর ও হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া প্রেক্ষাপটে শাল একটি সিজনাল পণ্য।অর্থ্যাৎ কেবলমাত্র শীতকে কেন্দ্র করেই বেশিরভাগ শাল বিক্রি হয়। ‘ই-কমার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ ‘(ই-ক্যাব) এর প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জনাব রাজিব আহমেদ স্যার সবসময় বলেন যে,যে কোন সিজনাল পণ্যের প্রচার শুরু করতে হবে সময়ের আরো আগে থেকে। অর্থ্যাৎ শালের বিক্রি যদি শীতকালে হয় তাহলে শীতকাল শুরুর কয়েকমাস আগে থেকেই শালের প্রচার প্রচারণা করতে হবে।এতে করে পণ্যের বিক্রি বৃদ্ধি পায়,পণ্যের কনটেন্ট মানুষের মনে জায়গা তৈরি করে নেয়।
তাই শালের উদ্যোক্তাদের উচিত শীতকাল আসার ৩-৪ মাস আগে থেকেই শালের প্রচার প্রচারণা চালানো।তারপর শীতের শুরুতে বিক্রি শুরু হয়ে গেলে মোটামুটি দেড় দুই মাস পরেই শালের আড্ডা বা ইভেন্ট এর আয়োজন করা যেতে পারে।কারন শালের আড্ডা বা ইভেন্ট গুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি তখনই ক্রেতা পাবো যখন বিক্রি করবো।তাই শাল বিক্রির শেষের দিকেই আড্ডা বা ইভেন্ট এর আয়োজন করা যেতে পারে।
এই সকল ইভেন্ট বা আড্ডা গুলোতে নিয়মিত ক্রেতা,সর্বোচ্চ শাল ক্রয়কৃত ক্রেতাকে সম্মাননা জানানো যেতে পারে।শাল ইভেন্ট নিয়ে মিডিয়ায় প্রচার করা যেতে পারে।যার পুরোটাই শালের প্রচারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।
প্রচারেই প্রসার।এই শব্দটার গ্রহনযোগ্যতা থাকা উচিত সকল উদ্যোক্তাদের নিকট।অনেকেই ভেবে থাকেন আড্ডা বা ইভেন্ট করা মানেই অযথা টাকা খরচ।কিন্তু একটু ভীন্ন দৃষ্টিদৃষ্টিকোণ থেকে যদি চিন্তা করা হয় তাহলে বুঝা যায়,কোন পণ্যের প্রচার খরচই লস না।যে কোন উদ্যোক্তারই ব্যবসায়ের প্রথম কয়েকবছর গুলোতে নিজ খরচে হলেও এই প্রচারকার্য গুলো বহাল রাখা উচিত।যা একটা সময় নিজের উদ্যোগকে স্থায়ী ও অন্যের নিকট বিশ্বস্ত,পরিচিত করে তুলতে সহায়তা করবে।