ফাইভজি নেটওয়ার্ক-সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি মোকাবেলায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোকে আরো বেশি তথ্য বিনিময়ের আহ্বান জানাবে ইউরোপিয়ান কমিশন। তবে হুয়াওয়ে টেকনোলজিসের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে সাড়া দেবে না ইইউ। আগামী সপ্তাহ নাগাদ এ-সংক্রান্ত সুপারিশ উপস্থাপন করা হবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রয়টার্স।
জানা গেছে, ইউরোপিয়ান ডিজিটাল প্রধান অ্যান্ড্রুস অ্যানসিপ আগামী মঙ্গলবার প্রয়োজনীয় সুপারিশ উপস্থাপন করবেন। অন্যদিকে চীনা বহুজাতিক নেটওয়ার্কিং এবং টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম নির্মাতা ও সেবা সরবরাহকারী হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে ইউরোপের সঙ্গে লবিং করছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলছে, কোম্পানিটির তৈরি যন্ত্রাংশের মাধ্যমে গুপ্তচরবৃত্তি করতে পারে চীন সরকার। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এসব অভিযোগ কড়াভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে হুয়াওয়ে এবং এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে চলতি মাসের শুরুর দিকে মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে হুয়াওয়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এনআইএস ডিরেক্টিভস নামে পরিচিত নেটওয়ার্ক অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমসের (এনআইএস) নিরাপত্তার জন্য ইইউর নির্দেশনায় তৈরি যন্ত্রপাতি ব্যবহারে ইইউর দেশগুলোকে আহ্বান জানানো হবে। ২০১৬ সালে গৃহীত এ নির্দেশনাবলি সম্প্রতি সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এনআইএস ডিরেক্টিভস অনুযায়ী, সদস্য দেশগুলো নিজেদের মধ্যে তথ্য বিনিময় করতে পারবে এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে সমন্বিত প্রভাব মূল্যায়ন গবেষণা করতে পারবে। এছাড়া ইন্টারনেট সংযুক্ত ডিভাইস ও ফাইভজি যন্ত্র নিয়ে সার্টিফিকেশনও করতে পারবে দেশগুলো।
তবে হুয়াওয়ের ওপর ইউরোপের পক্ষ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে না। অবশ্য জাতীয় নিরাপত্তা বিবেচনায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের বিষয়টি দেশগুলোর হাতেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফাইভজি নেটওয়ার্কে নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলায় ইইউর দেশগুলোর একটি সমমনা মনোভাব তৈরি করতে সুপারিশে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
উপস্থাপিত হতে যাওয়া সুপারিশ অনুযায়ী, পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে এটি হবে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর শুক্রবারের কথার আংশিক বাস্তবায়ন। প্রেসিডেন্ট বলেছেন, সম্ভাব্য চীনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ‘ইউরোপীয়রা সজাগ’ হচ্ছে। একটি সম্মেলনে চীনের নীতিমালা নিয়ে ইইউর নেতাদের প্রথম আলোচনার পর মাখোঁ এ মন্তব্য করেছিলেন।
এদিকে দীর্ঘ কয়েক বছর চীনা বিনিয়োগের প্রতি উদার মনোভাব দেখানোর পর সম্প্রতি কঠোর ভূমিকা গ্রহণ করেছে ইইউর নির্বাহী শাখা ইউরোপীয় কমিশন। যদিও উচ্চপ্রযুক্তিপণ্য তৈরিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের বৈশ্বিক সরবরাহের ৭০ শতাংশই চীনের দখলে।
ইউরোপের বড় বড় টেলিযোগাযোগ কোম্পানি হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিরুদ্ধে। তাদের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে ফাইভজি প্রযুক্তি বিস্তারের ক্ষেত্রে অঞ্চলটি কয়েক বছর পিছিয়ে পড়বে। যদিও অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের অপারেটররা তাদের নেটওয়ার্কগুলোয় হুয়াওয়ের তৈরি যন্ত্র ব্যবহার বন্ধ রেখেছে।