❝এতদিন শুধু বিলালে অমৃত,আজ প্রয়োজন যবে, যে-হাতে পিয়ালে অমৃত, সে-হাতে কূট বিষ দিতে হবে। সেদিন সুদূর নয়-যে দিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয়।❞ — নারী (কাজী নজরুল ইসলাম)
নারী মানে কারো চোখে দেবী,কারো কাছে ছলনাময়ী, কারো জন্য দয়াময়ী। আর কারো কারো চোখে শুধুই ভোগ্যপণ্য! আজ থেকে হাজার বছর পূর্বে যার ছিলো নূন্যতম সামাজিক মর্যাদা, ছিলো না নিজস্ব পরিচয়!
কিন্তু সেদিন অনেক পিছনে ফেলে এসেছি আমরা। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আজ আমরা নারীদেরকে পুরুষদের সমান মর্যাদা দেওয়ার আহবান জানিয়েছি। আজ আমরা সবাই গতানুগতিকভাবে চলে আসা বৈষম্য ভাঙবার পদক্ষেপ নিচ্ছি, এগিয়ে যাচ্ছি সুন্দর সম অধিকারের সমাজের দিকে…।
কিন্তু আজও প্রশ্ন থেকেই যায়, সত্যিই কি সামনে এগুতে পারছি আমরা? আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদনে তারই উপর একটু আলোকপাত করা যাক_
কোথায় যেন একবার পড়েছিলাম, “A woman is unstoppable after she realizes that she deserves better.”
উপরের এই কথাটি হয়তো আজ থেকে দু’যুগ আগেও আমাদের সমাজের বেলায় ঠিক খাটতো না। বলা ভালো নারীদেরকে এই দিকটি দেখানোর সু্যোগটাই দেওয়া হতো না। আজও যে ঠিক সুযোগ পাওয়া যায়, তা নয়। তবে অবস্থার যে উন্নতি ঘটেনি, তা বলা উচিৎ হবে না। বরং সেকালকে পিছনে ফেলে আমরা বেশ অনেকদূর এগিয়ে এসেছি, একথা ভেবে একটু গর্ব-ই করা চলে।
৮ই মার্চ ; বিশ্ব নারী দিবস।এ দিবসকে সামনে রেখে আজ একটু ঘুরে দেখা যাক সেকালকে পিছনে ফেলে কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন আমাদের নারীরা_
বেশি দূরে নয়, একটু ঘুরে করোনা মহামারির আগের কথাই চিন্তা করা যাক। ২০১৯ সালের গোড়ার দিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেখা যায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের ৫ কোটি ৪১ লাখ কর্মজীবীর মধ্যে ১ কোটি ৬২ লাখ নারী৷
এদের মাঝে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তা নারীর সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার ৬৯৭ জন। দেশের ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবহারকারীও নারী৷
যেখানে চাকরি ক্ষেত্রে নারীর সংখ্যা ৮৩ হাজার ১৩৩ জন, অর্থাৎ মোট চাকরির শতকরা ৭.৬ ভাগ ।
কিন্তু এই ছক উলটে গেছে কেবল দুই বছরের মাঝেই। ২০২১ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছিলো যে এক দশকের ব্যবধানে নারী উদ্যোক্তা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ছিলো দু লাখেরও বেশি যা ২০০২-০৩ অর্থ বছরে ছিলো মাত্র ২১ হাজার।
নারীরা ব্যাবসা ক্ষেত্রে যে অবিস্মরনীয় গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন, তাতে আশা করা যাচ্ছে যে আগামী ১০ বছরের মাঝেই বাংলাদেশের নারীসমাজ অনেক এগিয়ে যাবে স্বাবলম্বী হবার দিকে।বাংলাদেশে বর্তমানে বেশিরভাগ নারী উদ্যোক্তারাই অনলাইনে নিজেদের উদ্যোগকে এগিয়ে নিচ্ছেন। দেশের ই-কমার্স এ অভূতপূর্ব উন্নতি দেখা গেছে গত দুই বছরে। তবে, বাংলাদেশে সরাসরি কিংবা অনলাইন- দু ধরণের ব্যবসাতেই নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা অনেক বাড়লেও উদ্যোক্তাদের মতে নারী হিসেবে ব্যবসা করা কিংবা ব্যবসা সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বাধা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে!
উদ্যোক্তাদের অনেকের ভাষ্যমতে, মেয়েরা টেকনোলজি খাতে প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাবে-এটা আগেও যেমন অনেকে মেনে নিতে পারতো না, এখনো অনেকেই পারেন না।অনলাইন কিংবা অফলাইনে নিজের পরিচয় গড়ে তুলতে গেলে তাই টুকটাক কিছু বাধার সম্মুখীন এখনো হতেই হয়।
এখনো সমাজে নারীদের কদর বোঝার তো মানুষ খুব বেশি নেই।এখনো অসংখ্য প্রতিভা চাপা পড়ে যায় সমাজের কাদা-জলেই।
কি্ন্তু,পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে তবুও লেখা হয় নারীদের সব বাধা পেরিয়ে জয়ী হয়ে আসার গল্প।মন ভরে যায় যখন দেখি নতুন কোনো নারীকে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে, যখন দেখি অন্দরের কোনো নারীর মুখে নিজের কাজে পরিতৃপ্ত হয়ে ওঠার হাসি।
আমরা আজ এমন একটা বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি, যেখানে থাকবে না লিঙ্গ বৈষম্য কিংবা পুরুষদের প্রতি অধিক পক্ষপাতিত্ব। যেখানে নারীদের থাকবে না দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা গতানুগতিক- বাঁধাধরা জীবনের ভয়, তারা এগিয়ে যাবে নতুন থেকে নতু্নতর দিগন্তের পথে…
আমরা স্বপ্ন দেখছি নতুন এক বৈষম্যহীন বিশ্বের, যেখানে লেখা হবে জীবনের নতুন নতুন গল্পগুলো।
এই গল্পগুলোকে আরো একটু সুন্দর করা যাক তবে?
তবে, আসুন এবার একটু সুন্দরভাবে ভাবা যাক, একটু বাড়িয়ে দেওয়া যাক সাম্যের হাত, চলুন ভেঙে ফেলি অকারণের এই পক্ষপাতিত্বকে…
It’s time to break the bias. So, come on Bangladesh_
“Let’s break the bias”