বিশ্বে প্রতি ৫ জনে ১ জন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। দেশে ২১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছে। করোনা মহামারিতে এ সমস্যা আরও বেড়েছে। তবে এখনও অবহেলিত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা। দেশে যারা সমস্যায় ভুগছে, তাদের মধ্যে গড়ে ৯৩ শতাংশ চিকিৎসার বাইরে থাকছে। এ বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
সোমবার ডেইলি স্টার ও লাইফস্প্রিংয়ের যৌথ আয়োজনে রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে ‘মানসিক স্বাস্থ্যে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক,মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লাইফস্প্রিং মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সাঈদুল আশরাফ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন লাইফস্প্রিংয়ের চেয়ারম্যান এবং লিড সাইকোলজিস্ট ইয়াহিয়া মো. আমিন।
সাঈদুল আশরাফ বলেন, দেশে মানসিক সমস্যায় ভুগছে এমন শিশুদের মধ্যে ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বড়দের মধ্যে ৯২ দশমিক ৩ শতাংশ চিকিৎসাসেবার বাইরে থাকছেন। স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের মাত্র ১ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসায় বরাদ্দ দেয় সরকার। মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের ৬০ শতাংশ খরচ হয় মানসিক হাসপাতালগুলোতে। দেশের অনেক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরও সংকট আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, মানুষের মধ্যে দিনে দিনে বিষণ্ণতা বাড়ছে। সামাজিক পরিস্থিতির কারণে চাপ বাড়ছে। স্কুল পর্যায় থেকে শিশুদের মাথায় জিপিএ ফাইভের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেউ আত্মহত্যা করলে সেটি প্রচার করেই কাজ শেষ হয়ে যায় না। আত্মহত্যার কারণ ও প্রতিকার খোঁজে বের করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আত্মহত্যায় সহায়ক কিছু ওয়েবসাইট বন্ধ করা উচিত।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন নাহার বলেন, শিশুদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করতে প্রতিটি স্কুলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
গণমাধ্যমের ভূমিকা বিষয়ে সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সংবাদ প্রকাশে সুবিধাবাদী একটি নীতি রয়েছে। প্রচার বাড়ানোর জন্য অনেক গণমাধ্যম মানুষকে হতাশ করে, এমন অস্বাস্থ্যকর অনেক কিছুই প্রকাশ করে। এ ক্ষেত্রে একটি নীতিগত অবস্থান থাকা দরকার।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের প্রভাষক ফারজানা আক্তার, ডা. আব্দুন নূর তুষার, এএফপির ব্যুরো চিফ শফিকুল আলম প্রমুখ।