কৃষিপণ্যে সমৃদ্ধ দেশের উত্তরের দুই বিভাগ রাজশাহী ও রংপুর। এই দুই বিভাগের ১৬ জেলার বাসিন্দাদের প্রতি বছর গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে তীব্র বিদ্যুৎ সংকটের ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিদ্যুতের অপর্যাপ্ততার কারণে অলস পড়ে থাকে ছোট খাটো শিল্প কারখানা, ব্যাহত হয় গৃহস্থলির দৈনন্দিন কাজও।
তবে সম্প্রতি এই চিত্রটা বদলাচ্ছে। এই বিভাগ দুইটি ইতোমধ্যে আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ড লিমিটেড (এপিজেএল) থেকে আমদানিকৃত বিদ্যুৎ পেতে শুরু করেছে। প্ল্যান্টটির প্রথম ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ইউনিটটি এ মাসের শুরুতে কমিশনিং শুরু করে এবং বাংলাদেশের ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এর ফলে সুফল পাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করতে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডা এলাকায় অপেক্ষাকৃত কম কার্বন নিঃসরণের অত্যাধুনিক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২০১৭ সালে এপিজেএল এর সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-বিপিডিবি। গোড্ডায় এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুই ইউনিটের সক্ষমতা ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। চুক্তির আওতায় গত ২০ মার্চ এপিজেএল এর প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ আমদানির কার্যক্রম প্রাথমিকভাবে শুরু করে বিপিডিবি। বিপিডিবি আদানির পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে রুটিন ভিত্তিতে প্রায় ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করছে। বিদ্যুৎ আমদানির এই কার্যক্রম এ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ জ্বালানি আমদানির জন্য বাংলাদেশ মূল্যবান ফরেন এক্সচেঞ্জ ব্যয়ে বাধ্য হচ্ছে। ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
আদানি পাওয়ার এর ঝাড়খণ্ড প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য গোড্ডা থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত আদানি গ্রুপ ইতোমধ্যে ডেডিকেটেড সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে। এ সঞ্চালন লাইন এরপর রাজশাহীর সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর হয়ে পৌঁছেছে বগুড়ায়। সেখানের সাবস্টেশনের মাধ্যমে আমদানিকৃত বিদ্যুৎ যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।
প্রাথমিকভাবে এই বিদ্যুৎ থেকে উপকৃত হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের মানুষেরা এবং এটি দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ওপর চাপ কমিয়ে এনেছে। ফলে বাংলাদেশের অন্যত্র প্রয়োজন অনুসারে বিদুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। উল্লেখিত উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার বাসিন্দারা উৎসবমুখর এই সময় ও তীব্র গরমে বিদ্যুৎ সংকট থেকে মুক্তি পেয়েছেন। পাশাপাশি সেচ, শিল্প ও নিত্যদিনের কাজে তাদের ভোগান্তি কমে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে সুবিধাভোগী এনায়েত উল্লাহ খান বলেন, “উত্তরাঞ্চল অনেক আগে থেকেই বিদ্যুৎ সংকটে ভুগছে। গরমে আমাদের এখানে বিদ্যুৎ ঘাটতি মারাত্মক পরিস্থিতি ধারণ করায় অনেক শিল্প-কারখানা অলস পড়ে থাকে। এর প্রভাব পড়ে দৈনন্দিন আয়-রোজগারসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়। আদানির এই বিদ্যুৎ আসার ফলে বিদ্যুৎ-ভোগান্তির স্থায়ী সমাধান হবে বলে আমরা আশা করছি।”