ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) প্রিপেইড মিটারের জন্য টাকা রিচার্জ করেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা নাজমুল হোসেন। দোকানিকে সার্ভিস চার্জসহ তিনি ১ হাজার দশ টাকা দেন। কিন্তু তাঁর অ্যাকাউন্টে মাত্র ৭৯০ টাকা দেখায়। বাকি ২২০ টাকা কোথায় গেল তিনি জানেন না।
নাজমুলের অ্যাকাউন্ট থেকে ডিমান্ড চার্জ কাটা হয়েছে ১২৬ টাকা। এর সঙ্গে অন্য চার্জসহ মোট ২২০ টাকা কাটা হয়েছে। তবে ডিমান্ড চার্জের ব্যাপারে নাজমুল জানেন না বলে জানান।
ডিমান্ড চার্জ নিয়ে অসন্তোষ জানান রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসিন্দা কাজী মিজানুর রহমানও। ডিমান্ড চার্জের কোনো যৌক্তিকতাই খুঁজে পান না তিনি।
মিজানুর জানান, আগে ডিমান্ড চার্জ দিতেন ২৮০ টাকা। এখন সেটা ৩৩৬ টাকা। এই চার্জ কিসের জন্য জানেন না তিনি।
বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো এভাবেই ইচ্ছে মতো ডিমান্ড চার্জ বাড়িয়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি বিদ্যুতের দাম গড়ে সাড়ে আট শতাংশ বাড়লেও ডিমান্ড চার্জ বাড়ানো হয়েছে ২০ শতাংশ। কোম্পানিগুলোর দাবি, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতেই বেড়েছে খরচ। তবে ডিমান্ড চার্জের নামে গ্রাহকের কাছ থেকে যে অর্থ নেওয়া হয় তার বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
বিতরণকারী সংস্থাগুলোর চাহিদা মতো আবাসিকে প্রতি কিলোওয়াটে মাসে ডিমান্ড চার্জ ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ৪২ টাকা। তবে অনেক সময় কারসাজি করে নির্ধারিত চার্জের বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ গ্রাহকের। তারা বলছেন, বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো কোন খাতে কত টাকা নিচ্ছে–তা তারা স্পষ্ট বুঝতে পারছেন না। কোম্পানিগুলো যেমন বলে তেমনই পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
হুট করে ডিমান্ড চার্জ কেন বাড়ানো হয়েছে–জানতে চাইলে ডেসকোর নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, অবকাঠামোর জন্য একটা ব্যয় কোম্পানিগুলোকে বহন করতে হয়। এই খরচটা পরিচালনার জন্য বিশেষ করে ডিমান্ড চার্জটা আরোপ করা হয়েছে।
ডিমান্ড চার্জের নামে গ্রাহকের ওপর বাড়তি বোঝা চাপানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরাও। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘ডিমান্ড চার্জ আমাদের দেশে ওই ভাবে প্রযোজ্য হওয়া উচিত না। কারণ, রিলাইয়েবল সাপ্লাই তো নেই। ডিমান্ড চার্জ তারা কিভাবে নেয়, কি যুক্তিতে নেয়?’
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছ থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে গ্রাহকের কাছে পৌছে দেয় বিতরণ সংস্থাগুলো। এর জন্য নানা চার্জ নেয় কোম্পানিগুলো।