মঙ্গলবার (০৪ জুন) সন্ধ্যায় পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে বুধবার (৫ জুন) দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। অন্যথায় ঈদ পালিত হবে বৃহস্পতিবার (০৬ জুন)। ইতোমধ্যে সারাদেশে ঈদের জামাতের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবারের মত এবারও ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত হবে জাতীয় ঈদগাহে সকাল সাড়ে ৮টায়।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বুধবার সকালে ঈদের প্রধান জামাতে অংশ নেবেন।
এক মাস রোজার পর ওইদিন চাঁদ দেখা গেলে ৫ জুন বুধবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন বাংলাদেশের ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা। আর চাঁদ দেখা না গেলে ঈদ একদিন পিছিয়ে যাবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, এবার ঈদগাহের প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন মিরপুর জামেয়া আরাবিয়ার শায়খুল হাদিস মাওলানা সৈয়দ ওয়াহীদুযযামান।
বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে এবারও পাঁচটি জামাত হবে। প্রথম জামাতটি হবে সকাল সকাল ৭টায়। পর্যায়ক্রমে সকাল ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং ১০টা ৪৫ মিনিটে পরের জামাতগুলো হবে।
নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় জায়নামাজ বা ছাতা ছাড়া অন্য কিছু বহন না করতে নগরবাসীকে পরামর্শ দিয়েছে ঢাকার মহানগর পুলিশ।
ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া সোমবার ঈদগাহ ময়দানের নিরাপত্তা প্রস্তুতি ঘুরে দেখার পর সাংবাদিকদের বলেন, ঈদের সকালে নামাজে আসা সবাইকে তিন ধাপে তল্লাশি শেষে ঈদগাহে প্রবেশ করতে হবে।
“আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ঈদগাহে আসার পূর্বে তল্লাশিকালে পুলিশকে সহযোগিতা করুন। ভ্যানিটি ব্যাগ, ব্যাকপ্যাক, দা, ছুরি, কাচি, যে কোন ধারালো বস্তু, মোবাইল ফোন, দার্হ্য পদার্থসহ অন্য সকল জিনিস আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কমিশনার বলেন, “ঈদে কিংবা ঈদ জামাতে সুস্পষ্ট কোন নিরাপত্তার হুমকি নেই। তবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যথেষ্ট সতর্ক থাকার কারণ রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছি। ঈদ ঘিরে নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাই কারো ভীত হওয়ার কারণ নেই।”
জাতীয় ঈদগাহে যারা গাড়ি নিয়ে নামাজ পড়তে যাবেন, তাদের গাড়ি রাখার জন্য মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ, আইইবি’র ভেতরে,কার্পেট গলি, দোয়েল চত্বর ব্যারিকেড এর বাহিরে, ফজলুল হক হল ব্যারিকেডের বাইরে এবং প্রেসক্লাব লিংক রোড ব্যারিকেডের বাইরে স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকায় অন্য জামাত যেখানে
জাতীয় ঈদগাহ ছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ৩০২টি স্থানে এবার ঈদের জামাত হবে বলে জানিয়েছেন জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়।
আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে ২২৮টি জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রধান সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
“ডিএনসিসি এলাকার প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে পাঁচটি করে জামাত হবে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলররা এসব জামাতের ব্যবস্থাপনায় থাকবেন। এজন্য ডিএনসিসি প্রয়োজনীয় সব খরচ দেবে।”
নয়াপল্টন জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের জামাত হবে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে সকাল ৮টা এবং ৯টায় দুটি জামাত হবে।
স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রধান ফটক সংলগ্ন মাঠে সকাল ৮টায় এবং ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের লনে সকাল ৮টায় আরও দুটি জামাত হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ ময়দানে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সকাল ৮টায় প্রথম ও প্রধান ঈদ জামাতের ইমামতি করবেন জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের খতিব সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী। আর সকাল ৯টায় দ্বিতীয় ঈদ জামাতের ইমামতি করবেন মসজিদের পেশ ইমাম আহমুদুল হক।
সোমবার সকালে মসজিদ মাঠে বিভিন্ন প্রস্তুতি ঘুরে দেখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।
সিটি মেয়র নাছির বলেন, বৃষ্টির বিষয়টি মাথায় রেখে মসজিদ মাঠে সবধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। বৃষ্টির জন্য ত্রিপল দেয়া হয়েছে উপরে। আর পুরো মাঠটি পাকা হওয়ায় কোনো সমস্যা সৃষ্টি হবে না নামাজ আদায়ে।
এছাড়া নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের মসজিদে মোট ১৬৪টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান মেয়র।
রাজশাহী
রাজশাহী নগরীতে প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায় হজরত শাহমখদুম (র.) কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে।
আবহাওয়া প্রতিকূল হলে শাহমখদুম (র.) দরগাহ শরিফ মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে প্রধান জামাত।
প্রধান জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হলেও নগরীর মুহাম্মদপুর টিকাপাড়া ঈদগাহ ময়দান ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক এখানে ঈদের দ্বিতীয় প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। এখানে সকাল ৮টায় আরও একটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
রাজশাহী জেলার বিভিন্ন এলাকার ঈদগাহগুলোতেও সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।
খুলনা
খুলনা নগরীতে প্রধান জামাত হবে সার্কিট হাউজ ময়দানে সকাল ৮টায়।
এছাড়া দ্বিতীয় প্রধান জামাত হবে খুলনা টাউন জামে মসজিদে সকাল ৯টায়। আবহাওয়া প্রতিকূল হলে টাউন জামে মসজিদে প্রথম ও প্রধান জামাত সকাল ৮টায়, দ্বিতীয় জামাত ৯টায় এবং তৃতীয় ও শেষ জামাত ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া কোর্ট জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় একটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
বরিশাল
বরিশাল নগরীতে প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে হেমায়েত উদ্দিন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল সাড়ে ৮টায়।
তবে বিভাগের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে সকাল ৯টায় চরমোনাই দরবার শরীফ ময়দানে। সেখানে প্রায় ২০ হাজার মুসল্লির অংশগ্রহনে ঈদের জামাতে ইমামতি করবেন চরমোনাই পীর মাওলানা মুফতি সৈয়দ মোহাম্মাদ রেজাউল করিম।
এছাড়াও বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায় নেছারাবাদ ঈদগাহ ময়দান এবং গুঠিয়া বায়তুল আমান জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায়।
বরিশাল নগরীর একাধিক স্থানে ২টি করে জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় জামে কশাই মসজিদ ও জামে এবাদুল্লাহ মসজিদে ঈদের প্রথম জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে।
পুলিশ লাইন্স জামে মসজিদে প্রথম জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় এবয় দ্বিতীয় জামাত সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে।
সকাল ৮টায় জেল গেট জামে মসজিদ, কালিজিরা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, নূরিয়া হাই স্কুল ঈদগাহ ময়দান, মেডিকেল জামে সমজিদ, বাস টার্মিনাল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
সাগরদি মাদ্রাসা জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সোয়া ৮ টায়।
এছাড়া সকাল সাড়ে ৮টায় ল’কলেজ জামে মসজিদ, নথুল্লাবাদ মাদ্রাসা মসজিদ, সাগরদি বাজার জামে মসজিদ, ওয়াফদা জামে মসজিদ, পাওয়ার হাউজ জামে মসজিদ, আঞ্জুমান হেমায়েত ইসলাম গোরস্থান ও জিলা স্কুল জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
রংপুর
রংপুর নগরীতে সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে প্রধান জামাত কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে। তবে বৈরী আবহাওয়া থাকলে সকাল সাড়ে ৮টার পরিবর্তে ৯টায় রংপুর কোর্ট মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ৩০ মিনিট পর পর সেখানে আরও একটি জামাত হবে।
এছাড়াও পুলিশ লাইন্স স্কুল মাঠে সকাল সাড়ে ৭টায়, মুলাটোল হাফেজিয়া মাদরাসা মাঠ ও মুন্সিপাড়া ঈদগাহ মাঠে সকাল ৯টায়, কেন্দ্রীয বাস টার্মিনাল মসজিদ, সদর উপজেলা পরিষদ মাঠ, মাহিগঞ্জ শাহী মসজিদ মাঠ, বড় ময়দান ঈদগাহ মাঠ ও কেরামতিয়া জামে মসজিদ মাঠে সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টায় এবং সাতমাথা ঈদগাহ মাঠ, খাসবাগ, তাজহাট, রবাটসনগঞ্জ, তাতীপাড়া, শালবন, নুরপুর, বাবুপাড়া, জামতলা ঈদগাহ মাঠে সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।