দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাং ইলেকট্রনিকস যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদন কারখানার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। গত শুক্রবার প্রতিষ্ঠানটির যুক্তরাষ্ট্রের কারখানায় নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ আক্রান্ত দুই কর্মী শনাক্ত হওয়ার পর অস্থায়ীভাবে কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। খবর রয়টার্স।
বিবৃতিতে স্যামসাং জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের বৃহৎ হোম অ্যাপ্লায়েন্স কারখানাটি সাউথ ক্যারোলিনার নিউবেরি কাউন্টিতে অবস্থিত। কারখানাটির দুই কর্মী কভিড-১৯ পজেটিভ শনাক্ত হওয়ার পর তা সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। শিগগিরই কারখানাটির কার্যক্রম শুরু করা হবে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, যুক্তরাষ্ট্রে নভেল করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। দেশটিতে কভিড-১৯ আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে স্যামসাংয়ের হোম অ্যাপ্লায়েন্স কারখানার কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা বিলম্বিত হতে পারে।
গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে কভিড-১৯ আক্রান্ত কর্মী শনাক্ত হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের শহর গুমিতে মোবাইল ডিভাইস উৎপাদন কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছিল স্যামসাং।
বিবৃতিতে ওই সময় বিশ্বের বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, গুমিতে অবস্থিত কারখানায় কভিড-১৯ আক্রান্ত একজন কর্মী শনাক্ত হয়েছে। ওই কর্মী কারখানার যে ফ্লোরে কাজ করতেন, তাত্ক্ষণিকভাবে তা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সাময়িকের জন্য কারখানাটির কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা বলা হলেও তা পরে আরো দীর্ঘায়িত হয়েছে। যেসব কর্মী কভিড-১৯ আক্রান্ত কর্মীর সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাদের নিজেদের কোয়ারেন্টিন করে রাখার পরামর্শ দিয়েছিল স্যামসাং। একই সঙ্গে তারাও আক্রান্ত কিনা, তা নিশ্চিত হতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
চীন নভেল করোনাভাইরাসের উত্পত্তিস্থল হলেও স্মার্টফোন ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদন নিয়ে খুব বেশি জটিলতায় পড়েনি স্যামসাং। কারণ প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে চীন থেকে মোবাইল ডিভাইস উৎপাদন কার্যক্রম শতভাগ স্থানান্তর করেছে। দেশটিতে নিজেদের সর্বশেষ স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানার কার্যক্রম গত বছর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এখন স্যামসাংয়ের সিংহভাগ স্মার্টফোন উৎপাদিত হচ্ছে ভারত ও ভিয়েতনামে স্থাপিত নিজস্ব কারখানায়। স্যামসাং মোট যতসংখ্যক স্মার্টফোন উৎপাদন করে, তাতে গুমির কারখানার অবদান খুবই সামান্য। মূলত স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটাতে গুমির কারখানায় হাই-এন্ড ফোন উৎপাদন করে আসছে স্যামসাং। গুমি দক্ষিণ কোরিয়ার দেইগু নামের শহরের কাছাকাছি। দক্ষিণ কোরিয়ায় এ পর্যন্ত যতসংখ্যক মানুষ কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছে, তার বেশির ভাগই দেইগুর একটি চার্চের আশপাশের এলাকার।
গত জানুয়ারিতে চীনে নভেল করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করায় মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল জানায়, দেশটিতে তাদের আইফোন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যে কারণে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার রাজস্ব আয়ের যে পূর্বাভাস ছিল, তা পূরণ সম্ভব হবে না বলে সতর্ক করা হয়। অ্যাপল এখনো জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের আর্থিক খতিয়ান প্রকাশ করেনি।
অবশ্য নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আইফোন উৎপাদন ব্যাহত হলেও স্যামসাংয়ের স্মার্টফোন উৎপাদন ও সরবরাহে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করা হয়। কারণ চীনে নিজেদের স্মার্টফোন উৎপাদন কার্যক্রম শূন্যের কোটায় নামিয়ে এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। বলা হচ্ছিল, এ পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে অ্যাপল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়লেও শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাং লাভবান হবে। তবে করোনাভাইরাস দক্ষিণ কোরিয়ায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। স্যামসাংয়ের উৎপাদন কারখানাতেও কভিড-১৯ আক্রান্ত শনাক্তের মতো ঘটনা ঘটছে। মোবাইল ডিভাইস উৎপাদন নিয়ে জটিলতায় না পড়লেও যুক্তরাষ্ট্রে হোম অ্যাপ্লায়েন্স বাজারে ক্ষতির মুখে পড়বে স্যামসাং। কারণ কারখানাটি থেকে উৎপাদিত পণ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদা মেটানোর পর তা অন্যান্য বাজারেও সরবরাহ করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের দাবি, চীনভিত্তিক ডিভাইস ব্র্যান্ডগুলোর পাশাপাশি নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাব অ্যাপলের আইফোন ব্যবসা বিভাগ ও স্যামসাংয়ের ডিভাইস ব্যবসা বিভাগের ওপরও পড়ছে। এরই মধ্যে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে অ্যাপলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে চীনে আইফোনের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় তাদের আগাম পূর্বাভাসের তুলনায় চলতি বছর রাজস্ব আয় অনেকাংশে কম হবে। তবে স্যামসাং নভেল করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি।