ভারতের বৃহত্তম ও বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড (এজিইএল) প্রতিষ্ঠানটির ‘কনস্ট্রাকশন ফাইন্যান্সিং ফ্রেমওয়ার্ক’ প্রকল্পে আরও বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক ব্যাংকের কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে এ প্রকল্পে মোট ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়নের লক্ষ্য রয়েছে। এ লক্ষ্য পূরণে আরও ১.৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের এ ঘোষণা দিল আদানি।
এজিইএল এর পরবর্তী মাইলফলক হলো বিশ্বের বৃহত্তম ‘রিনিউয়েবল এনার্জি (আরই) পার্ক’, যেটি গুজরাটের খাবড়া অবস্থিত। এ প্রকল্পের উন্নয়ন সক্ষমতা বাড়াতে এ গ্রিন লোন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। খাবড়া প্রাথমিক পর্যায়ে ২,১৬৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এ অর্থায়নকে একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন হিসেবেও ধরা হচ্ছে। এছাড়া খাবড়া নবায়নযোগ্য প্রকল্পের ভবিষ্যত উন্নয়নের সোপান হবে এ বিনিয়োগ। বিশ্বের বৃহত্তম এই ‘আরই পার্ক’টি শুধু ২০৩০ সালের মধ্যে এজিইএল এর ৪৫ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যের সক্ষমতাই বৃদ্ধি করবে না, বরং ভারতের শূন্য কার্বন নিঃসরণ যাত্রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদানও রাখবে।
৮টি শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক ব্যাংকের সঙ্গে এ ঋণচুক্তি করেছে আদানি। ২০২১ সালের মার্চে কনস্ট্রাকশন ফাইন্যান্সিং ফ্রেমওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই এজিইএলকে এসব ব্যাংক ঋণ সুবিধা দিয়ে আসছে। আদানি যে সকল ঋণদাতা ব্যাংক কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে এ গ্রিন লোন সুবিধা পাচ্ছে, সে ব্যাংকগুলো হলো- বিএনপি পরিবাস, কোঅপারেটিভ রাবোব্যাংক ইউ.এ., ডিবিএস ব্যাংক লিমিটেড, ইনটেসা স্যানপাওলো এস.পি.এ., এমইউএফজি ব্যাংক লিমিটেড, সোশিয়েট জেনারেলে, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও সুমিতোমো মিৎসুই ব্যাংকিং কর্পোরেশন।
এজিইএল এর পুরো মূলধন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো এ অর্থায়ন এবং উন্নয়ন প্রকল্পের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি অর্জনে এ অর্থ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। কনস্ট্রাকশন ফ্রেমওয়ার্কের পুরো কাঠামোটি এখন পর্যন্ত এজিইএল এর একটি সফল প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত। তাই এর ওপর আন্তর্জাতিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর আস্থা রাখার ক্ষেত্রে এটি একটি গ্যারান্টার হিসেবে কাজ করেছে।
আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড- এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ভিনিত এস জাইন এই মাইলফলক সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, “কনস্ট্রাকশন ফাইন্যান্সিং ফ্রেমওয়ার্কে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্প্রসারিত এ বিনিয়োগ একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। এবং বিশ্বের বৃহত্তম নবায়নযোগ্য শক্তি পার্কে পরিণত হতে যাওয়া ১৭ গিগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার খাবড়া প্রকল্পের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে এ বিনিয়োগ।
আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড- এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অমিত সিং বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের উন্নয়ন এজেন্ডার একটি প্রয়োজনীয় উপাদান হলো কনস্ট্রাকশন ফাইন্যান্সিং ফ্রেমওয়ার্ক। এবং একটি টেকসই ভবিষ্যত বিনির্মাণে আমাদের অটল প্রতিশ্রুতি রক্ষায় এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ বিনিয়োগ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পগুলোর প্রতিষ্ঠাতা ও অপারেটর হিসেবে আমাদের দক্ষতাকেই শুধু স্বীকৃতি দেয় না, বরং আমাদের কৌশলগত লক্ষ্যের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থাও প্রদর্শন করে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যমাত্রার উপর জোর দিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের সক্ষমতা ৪৫ গিগাওয়াট পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
আদানি পোর্টফোলিও এর গ্রুপ কর্পোরেট ফাইন্যান্স হেড অনুপম মিশ্র বলেন, “ টেকসই (সাসটেইনেবিলিটি) এবং উদ্ভাবনী ও সম্প্রসারণশীল অর্থায়নের সমাধান একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। লো-কার্বনসমৃদ্ধ ভবিষ্যত বিনির্মাণে জমজ ইঞ্জিনের মতো এগুলো কাজ করে।” তিনি আরও বলেন, “জাতিসংঘের ২৮ তম জলবায়ু সম্মেলনের (কপ২৮) পাশাপাশি আমাদের জন্য এটিরও একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। কেননা আমরা টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। এবারের অর্থায়নের মাধ্যমে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো আদানি গ্রীন এনার্জি লিমিটেডকে তৃতীয়বারের মতো ঋণ দিতে যাচ্ছে। এবং আমাদের মূলধন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে এটিকে সফলতার একটি নিদর্শন হিসেবে ধরা যায়।”
এ অর্থায়নে আদানির কো-গ্রিন স্ট্রাকচারিং ব্যাংক হিসেবে কাজ করেছে ডিবিএস ব্যাংক লিমিটেড, এমইউএফজি ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এবং সুমিতোমো মিৎসুই ব্যাংকিং কর্পোরেশন। ডকুমেন্টেশন এবং স্ট্রাকচারিং ব্যাংক হিসেবে কাজ করেছে কোঅপারেটিভ রাবোব্যাঙ্ক ইউ.এ. এবং এমইউএফজি ব্যাংক লিমিটেড গ্যারান্টি স্ট্রাকচারিং ব্যাংক হিসেবে কাজ করেছে।