ক্লাউড গেমিং, উন্নত মোবাইল প্রযুক্তি ও এআইয়ের ব্যবহার বাড়ায় দ্রুত সম্প্রসারণ হচ্ছে অনলাইন গেমসের বাজার। আগামী সাত বছরে বাজারটি প্রায় দ্বিগুণ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে গবেষণা সংস্থা ফরচুন বিজনেস ইনসাইটস। তবে অনলাইনে মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকায় সাইবার হামলা ও ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে।
ফরচুন বিজনেস ইনসাইটসের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর শেষে বিশ্বব্যাপী অনলাইন গেমসের বাজার ছাড়াবে ২২ হাজার কোটি ডলার। সাত বছর পর ২০৩২ সালে বাজারটি পৌঁছবে ৪২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে।
অনলাইন গেমিং বলতে বোঝায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভিডিও গেম খেলা, যেখানে ব্যবহারকারী গেম কনসোল (প্লে-স্টেশন, এক্সবক্স), পারসোনাল কম্পিউটার, ল্যাপটপ কিংবা স্মার্টফোনের মতো বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করে গেমে অংশ নেয়। এক্ষেত্রে প্লেয়াররা একে অন্যের সঙ্গে বা বিপক্ষে খেলতে পারে। এমনকি তারা বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তেও সংযুক্ত হতে পারে।
এ ধরনের গেমিং অভিজ্ঞতা শুধু বিনোদনই দেয় না, বরং খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রতিযোগিতার অনুভূতি, সাফল্যের স্বাদ ও সামাজিক সংযোগের সুযোগও তৈরি করে। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, তরুণদের পাশাপাশি প্রবীণরা এখন অনলাইন গেমের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে উচ্চ মানের গ্রাফিক্স ও দ্রুত সংযোগের মাধ্যমে গেমিং অনেক বেশি আকর্ষণীয় ও বাস্তবসম্মত হচ্ছে।
গেমারদের মতে, অনলাইন গেমিং এখন শুধু সময় কাটানোর মাধ্যম নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল বিনোদন শিল্পে পরিণত হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনলাইন গেমিং বাজার সম্প্রসারণের অন্যতম কারণ হলো ইন-গেম কেনাকাটা ও ডাউনলোড করা যায় এমন কনটেন্টের (ডিএলসি) ব্যবহার বেড়ে যাওয়া। এসব ফিচারের মাধ্যমে গেমাররা নতুন নতুন আইটেম, লেভেল ও চরিত্র কিনতে পারে। এতে ব্যবহারকারীর আগ্রহ দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ও বাড়ে। ফলে অনলাইন গেমিং একটি লাভজনক ও দ্রুত বর্ধনশীল খাতে পরিণত হয়েছে।
ফরচুর বিজনেস ইনসাইটস আরো বলছে, অ্যাক্টিভিশন ব্লিজার্ড, ইলেকট্রনিক আর্টস (ইএ) ও টেনসেন্টের মতো বড় গেমিং কোম্পানিগুলো অনলাইন গেমসের বাজারে শীর্ষে রয়েছে। সম্প্রতি, জেনারেটিভ এআই গেমিং শিল্পে বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে। এখন এআইয়ের মাধ্যমে জটিল চরিত্র, লেভেল, এমনকি গল্পও তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। এতে গেম তৈরির সময় ও খরচ কমছে, খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতাও আরো বাস্তবসম্মত ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনলাইন গেমিং বাজারের প্রবৃদ্ধির পেছনে আরেকটি কারণ হতে পারে ক্লাউড গেমিং। দামি গেমিং হার্ডওয়্যার ছাড়াই গেমাররা এখন স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা স্মার্ট টিভির মাধ্যমে গেম স্ট্রিম করতে পারছে।
আধুনিক স্মার্টফোনগুলো এখন শক্তিশালী প্রসেসর, দ্রুত রিফ্রেশ রেট ডিসপ্লে ও উন্নত গ্র্যাফিকস চিপস দিয়ে সজ্জিত। এগুলো ডিভাইসকে গেমিংয়ের জন্য আদর্শ করে তোলে। এমনকি বিশ্বব্যাপী গেমসের বাজারে গত বছর আয়ের দিক থেকে শীর্ষে ছিল মোবাইল গেমিং। ২০২৪ সালে গেমিং বিভাগটির বার্ষিক আয় ছিল ৯০ বিলিয়ন বা ৯ হাজার কোটি ডলারের বেশি।
শুধু অনলাইন গেম নয়, কর্মী ছাঁটাই ও স্টুডিও বন্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালে কঠিন সময় কাটানোর পর সামগ্রিকভাবে ভিডিও গেম শিল্প চলতি বছর শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখবে বলে আশাবাদী প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
তবে প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি এ শিল্পে কিছু প্রতিবন্ধকতাও দেখা দিচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা নিয়ে ঝুঁকি তৈরি করছে বাড়তে থাকা অনলাইন গেমিং।
বাজার গবেষণা সংস্থাটির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তি, মোবাইল ও উদ্ভাবনী গেম ডিজাইনের মাধ্যমে অনলাইন গেমিং শিল্প শক্তিশালীভাবে বেড়ে চলেছে, তবে ডাটার সুরক্ষা এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।