পর্যটকদের জন্য মহাকাশে ঘোরার ও থাকার সুযোগ দেবে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা)। মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছার পর পর্যটকেরা ‘জিরো গ্রাভিটি’ বা ওজনহীনতার অভিজ্ঞতার পাশাপাশি দেখবেন পৃথিবীর চমৎকার দৃশ্য। সেখানে ব্যাডমিন্টন খেলার সুযোগও হয়তো পাবেন তাঁরা।
নাসার পক্ষ থেকে গত শুক্রবার নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে জানানো হয়, যাঁরা পর্যটক হিসেবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাবেন, তাঁরা সেখানে ১ মাস পর্যন্ত থাকতে পারবেন। তবে সংখ্যায় অল্প কয়েকজন পর্যটকই প্রতিবছর সেখানে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
নাসা জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে তারা পর্যটক পাঠাবে। আগামী বছর থেকে পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকতে পারবেন। সেখানে যাতায়াত বাবদ সব মিলিয়ে খরচ পড়বে ৫ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ ৪৯৩ কোটি টাকার (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে) বেশি। তবে এ খরচ মহাকাশ স্টেশনের ভাড়া নয়, সেখানে পৌঁছানোর খরচ। এর বাইরে প্রতি রাতে সেখানে থাকার জন্য পকেট থেকে খসবে ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার করে। পর্যটকদের প্রতিদিন লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম এবং প্রসাধন (টয়লেট) ব্যবহারের জন্য ১১ হাজার ২৫০ ডলার; খাদ্যসামগ্রী, অক্সিজেন, চিকিৎসা সহায়তার জন্য ব্যয় হবে সাড়ে ২২ হাজার ডলার। এ ছাড়া আরও আনুষঙ্গিক কিছু ব্যয় করতে হবে পর্যটকদের। তবে পর্যটক হিসেবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাওয়ার আগে খুবই কঠোর শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে পর্যটকদের।
নাসার প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা (চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার) জেফ ডে উইট বলেন, নাসার কোনো নভোচারী যখন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যান, তাঁদের পেছনে খরচ পড়ে ৮ কোটি ডলার। এখন যদি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নাসা সেখানে পর্যটক পাঠাতে শুরু করে, তখন গড়ে খরচ পড়বে জনপ্রতি ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছানোর পর সেখানে নানা ধরনের তৎপরতায় অংশ নিতে পারবেন পর্যটকেরা। সেখানে তাঁদের ‘জিরো গ্রাভিটি’ অর্থাৎ ওজনহীনতার অভিজ্ঞতা হবে । সেখান থেকে মহাকাশ এবং পৃথিবীর চমৎকার দৃশ্য তাঁরা দেখতে পাবেন। আর কপাল ভালো থাকলে ব্যাডমিন্টন খেলার সুযোগও পাবেন পর্যটকেরা।
পর্যটকদের মহাকাশ স্টেশনে আনা-নেওয়ার জন্য দুটি বেসরকারি কোম্পানিকে ভাড়া করেছে নাসা। দুটোর একটি ‘স্পেস এক্স’। রকেট নির্মাণপ্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। নাসা তাদের ড্রাগন ক্যাপসুল ব্যবহার করবে পর্যটকদের মহাকাশে আনা-নেওয়ার কাজে। আরেকটি হচ্ছে বোয়িং। বোয়িং এ জন্য স্টার লাইনার নামে একটি মহাকাশযান তৈরি করছে।
তবে সরাসরি নাসার পক্ষ থেকে পর্যটকদের কাছ থেকে কোনও অর্থ নেওয়া হবে না। দুটি বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ জমা দিয়ে এ সফরে অংশ নিতে হবে। ২০২৪ সালে চাঁদে অভিযানের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তাই এই ধরনের কাজে স্পেস স্টেশনকে ব্যবহার করে কিছুটা খরচ তোলার চেষ্টা করছে সংস্থাটি।
মহাকাশ স্টেশনে কোনো পর্যটককে পৌঁছে দেওয়া এবং ফিরিয়ে আনা বাবদ কোটি কোটি ডলার ভাড়া দিতে হবে এ দুটি কোম্পানিকে। নাসা আশা করছে, পর্যটকদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ তারা মহাকাশ গবেষণা এবং নতুন নতুন অভিযানে খরচ করতে পারবে।
নাসার কর্মকর্তা বিল গেরস্টেন মেইনার বলেন, নিচু কক্ষপথের বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে নাসা ২০২৪ সালের মধ্যে চাঁদে প্রথম নারী নভোচারী পাঠানো এবং নতুন করে চাঁদে অভিযান শুরু করার তহবিল জোগাতে পারবে। এরপর মঙ্গল গ্রহেও অভিযানের প্রস্তুতি নিতে পারবে।
১৯৯৮ সালে রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনটি তৈরি করে নাসা। তবে এখন এটি সম্পূর্ণ তাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। ২০০১ সালে রাশিয়াকে দু’কোটি ডলার দিয়ে প্রথমবার পর্যটক হিসেবে সেখানে গিয়েছিলেন মার্কিন ব্যবসায়ী ডেনিস টিটো।