দক্ষিণ কোরিয়ান কোম্পানি স্যামসাং ২০১৯ সালে প্রথম গ্যালাক্সি এ সিরিজের ফোন লঞ্চ করেছিল। লো বাজেট থেকে শুরু করে ফ্ল্যাগশিপ ফোন, সবধরণের ফোন এখন গ্যালাক্সি এ সিরিজে উপলব্ধ। কিছুদিন আগে কোম্পানি এই সিরিজের নতুন ফোন স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৫১ ভারতে লঞ্চ করেছিল। কিন্তু এই ফোনটি ভ্যালু ফর মানি স্মার্টফোন তো? আপনার জন্য কি একটি সঠিক বিকল্প হবে?দেশের বাজারে ফোনটির দাম রাখা হচ্ছে ২৯ হাজার ৯৯৯ টাকা।
স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৫১ এর ডিজাইন :
এই ফোনের ডিজাইন আপনার পছন্দ হতে বাধ্য। ফোনটি প্রিমিয়াম লুক দেয়। ফোনের সামনে পাঞ্চ হোল ডিসপ্লে আছে। আবার পিছনে গ্লসি প্যানেল রয়েছে। এর বাম দিকে উপরে কোয়াড রিয়ার ক্যামেরা ও ফ্ল্যাশ লাইট দেওয়া হয়েছে। ফোনের বেজেল অত্যন্ত পাতলা। ফোনটির দেন দিকে ভলিউম ও পাওয়ার বাটন আছে। আবার বাম দিকে দেওয়া হয়েছে সিম ট্রে। এই ফোনটি এক হাত দিয়ে ব্যবহার করা মুশকিল। এমনটি পিচ্ছিলও বটে। ফলে আপনাকে কভার ব্যবহার করতে হবে।
স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৫১ এর ডিসপ্লে :
এই ফোনে ৬.৫ ইঞ্চির ফুল এইচডি প্লাস সুপার অ্যামোলেড ইনফিনিটি ও ডিসপ্লে দেওয়া হয়েছে। যার পিক্সেল রেজুলেশন ১০৮০ × ২৪০০। স্ক্রিনের সুরক্ষার জন্য আপনি পাবেন কর্নিং গরিলা গ্লাস ৩। ইনফিনিটি ও ডিসপ্লে হওয়ার কারণে এই ফোনে কনটেন্ট দেখার অভিজ্ঞতা দারুন। ডিসপ্লের উপরের দিকে মাঝে ফ্রন্ট ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। ব্রাইটনেস খুব বেশি না বাড়িয়েও আমি স্ক্রিনের সমস্ত কিছু পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম। আপনি ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম এর কনটেন্ট খুব ভালো ভাবে দেখতে পাবেন।
স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৫১ এর হার্ডওয়্যার :
এই ফোনে অক্টা-কোর এক্সিনস ৯৬১১ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও আছে ৮ জিবি পর্যন্ত র্যাম ও ১২৮ জিবি পর্যন্ত স্টোরেজ। মাইক্রোএসডি কার্ডের মাধ্যমে এর স্টোরেজ ৫১২ জিবি পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। সবার প্রথমে ফোনের মাল্টিটাস্কিংয়ের কথা বলি। স্যামসাং গ্যালাক্সি এ ৫১ ফোনে আমি একটি অ্যাপ থেকে অন্য অ্যাপে খুব সহজেই যেতে পারছিলাম। কোনো হ্যাং হাওয়ার সমস্যায় পড়েনি। আবার আমি এই ফোনে পাবজি মোবাইল লাইট খেলার সময় ও ওভারহিট হওয়ার সমস্যা দেখিনি। যদিও কোনো ফোনের পারফরম্যান্স কয়েকদিনে বোঝা যায়না, ইটের জন্য প্রতিদিন ব্যবহার করা প্রয়োজন।
স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৫১ এর সফটওয়্যার :
এই ফোন কোম্পানি স্যামসাং ওয়ান ইউআই ২.০ এর উপরে চলে। যেটি অ্যান্ড্রয়েড ১০ ভিত্তিক। এই UI কোম্পানির পুরানো UI এর তুলনায় অনেক ভালো। ফোনে গুগলের নেভিগেশন জেসচার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ফোনে ওয়াই-ফাই কলিং ফিচার বর্তমান। প্রি-ইনস্টল অ্যাপ হিসাবে এতে ফেসবুক, নেটফ্লিক্স এর মতো অ্যাপ আছে।
স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৫১ এর ক্যামেরা :
এই ফোনের পিছনে কোয়াড ক্যামেরা আছে। যার প্রাইমারি ক্যামেরা ৪৮ মেগাপিক্সেল। এছাড়াও অন্য তিনটি ক্যামেরা হলো ১২ মেগাপিক্সেল + ৫ মেগাপিক্সেল ও ৫ মেগাপিক্সেল। আবার সামনে ৩২ মেগাপিক্সেল সেলফি ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। ফোনের পিছনের ক্যামেরায় লাইভ ফোকাস, প্রো, প্যানোরামা, ম্যাক্রো, ফুড়, নাইট, সুপার স্লো-মো, স্লো মোশন হাইপা এর মতো মোড আছে। এছাড়াও ক্যামেরায় AR Emoji ফিচার আছে, যা আমার দারুন লেগেছে। অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজার না থাকার কারণে ছবিতে বোকেহ মোড ফিচার ভালো ভাবে কাজ করে। এই ফোনের ক্যামেরা দিয়ে রাতে ও দিনে ভালো ছবি পেয়েছি। বিশেষ করে সেলফি ক্যামেরা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবহার করার জন্য দুর্দান্ত ছবি পাওয়া যায়।
স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৫১ এর সিকিউরিটি :
এই ফোনে পাবেন ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার ও ফেস আনলকের মতো সিকিউরিটি ফিচার। এছাড়াও আছে ইন ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর। যেটি আঙ্গুল ছোঁয়ানোর সাথে সাথে ফোনকে আনলক করে। এছাড়াও ফেস আনলক ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও দ্রুত কাজ করে।
স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৫১ এর ব্যাটারি :
এই ফোনে ১৫ ওয়াট ফাস্ট চার্জিংয়ের সাথে ৪,০০০ এমএএইচ ব্যাটারি দেওয়া হয়েছে। আমি যখন ১৫ শতাংশ এর চার্জ ছিল তখন চার্জে বসিয়েছিলাম, যা ফুল চার্জ হতে ২ ঘন্টা সময় নিয়েছে। সারাক্ষন অনলাইন ভিডিও দেখে ও গেম খেলে ১৯ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যাটারি ব্যাকআপ দিয়েছিলো। ফলে স্বাভাবিক ব্যবহারে দুইদিনের কাছাকাছি ব্যাটারি থাকবে আশা করা যায়।
সারসংক্ষেপ
মিড রেঞ্জ ফোন হিসাবে এই ফোনকে ভালো বিকল্প মানতেই হবে। যদিও এই ফোনে কয়েকটি কমতি আছে, তবে এর অন্যান্য ফিচার সেই কমতি কে ঢেকে দিতে পারে। এই দামে আপনি হয়তো বাজারে ৬৪ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ফোন পেয়ে যাবেন, তবে স্যামসাং গ্যালাক্সি এ ৫১ এর ছবি বাজার চলতি ৬৪ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ফোনের ছবির থেকে কোনো অংশেই কম নয়।