সম্প্রতি তুরস্কের মিডিয়ায় সাড়া ফেলেছেন বাংলাদেশি গবেষক ড. শাহেন শাহ। তার গবেষণা প্রতিবেদনটি গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হচ্ছে, যেখানে তিনি দুর্যোগকালীন যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যার সমাধানে একটি নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। বিশেষত ভূমিকম্প বা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যেখানে নেটওয়ার্ক টাওয়ার অচল হয়ে পড়ে, সেখানে তার সমাধানটি অত্যন্ত কার্যকরী বলে স্বীকৃত হয়েছে।
গবেষণার মূল বিষয়:
ড. শাহেন শাহ, যিনি বর্তমানে তুরস্কের ইলদিজ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে ইলেকট্রনিকস ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত, তার গবেষণায় একটি নতুন প্রযুক্তি উপস্থাপন করেছেন। সাধারণত দুর্যোগকালীন সময়ে মোবাইল টাওয়ারগুলি ভেঙে পড়ে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়, যা উদ্ধার কাজকে জটিল করে তোলে। তবে, তার নতুন কৌশলে এই সমস্যার সমাধান এসেছে।
ড. শাহেন শাহ প্রস্তাব করেছেন যে, যখন কোনো নেটওয়ার্ক টাওয়ার অচল হয়ে যাবে, তখন সেখানে পাঠানো হবে ড্রোন। এই ড্রোনগুলো অস্থায়ী বেজ স্টেশন হিসেবে কাজ করবে এবং টাওয়ারের জায়গা নেবে। একটি অচল টাওয়ারের জায়গায় ৫টি ড্রোন পাঠানো হবে, যেগুলো ২ কিমি এলাকাজুড়ে কভারেজ প্রদান করতে সক্ষম হবে।
গবেষণা এবং সফলতা:
ড. শাহেন শাহর এই কৌশলটি ২০২৩ সালে ড্রোনস জার্নালে প্রকাশিত হয় এবং এর পরই তুরস্কের ইলদিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং তুরস্ক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ যৌথভাবে তার উপর কাজ শুরু করে। তাদের প্রাথমিক পরীক্ষায় সফলতারও খবর পাওয়া গেছে, যা এই প্রযুক্তির বাস্তবায়নে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
মানবিক প্রভাব:
এটি শুধু প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুর্যোগকালে দ্রুত যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করতে সক্ষম হলে, উদ্ধার কাজ অনেক দ্রুত এবং কার্যকরীভাবে পরিচালিত হবে, যার ফলে হাজারও জীবন রক্ষা পেতে পারে।
ড. শাহেন শাহর এই উদ্ভাবনী সমাধান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে এবং তা তুরস্কের বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তার গবেষণার মাধ্যমে যে প্রযুক্তির উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে, তা ভবিষ্যতে বিভিন্ন দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখাতে পারে।
তুরস্কে এ ধরনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন যে শুধুমাত্র বাংলাদেশিদের জন্য গর্বের বিষয়, তা নয়, এটি বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নেরও প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।