১৪ জানুয়ারি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে উইন্ডোজ ৭ সমর্থন। অর্থাৎ আগামী মঙ্গলবারের পর উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের এ সংস্করণের আর কোনো নিরাপত্তা হালনাগাদ কিংবা অন্যান্য সমর্থন দেবে না মাইক্রোসফট। যদিও উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংস্করণগুলোর একটি উইন্ডোজ ৭। এখনো বিশ্বব্যাপী ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ পার্সোনাল কম্পিউটারে (পিসি) উইন্ডোজ ৭ চলছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসছে এ বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারী এখন কী করবেন?
মার্কিন সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১০ উন্মোচনের পর থেকে সতর্ক করে আসছিল, ২০২০ সালের শুরু থেকে উইন্ডোজ ৭ সমর্থন বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও ২০১৫ সালের শুরুর দিকেই উইন্ডোজ ৭-এর যাবতীয় ফিচার হালনাগাদ বন্ধ রয়েছে। বিশ্বব্যাপী উইন্ডোজ পিসি ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন সময় উইন্ডোজ ১০ ব্যবহারে উৎসাহিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এখনো অসংখ্য মানুষ উইন্ডোজ ১০ হালনাগাদ করেনি।
২০০৯ সালের ২২ জুলাই উইন্ডোজ ৭ উন্মোচন করে মাইক্রোসফট। এটির ব্যবহার সহজ হওয়ায় খুব অল্প সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। উইন্ডোজের এ সংস্করণের পর আরো দুটি উন্নত সংস্করণ ছাড়া হলেও এখনো বিশ্বের এক-চতুর্থাংশের বেশি পিসিতে উইন্ডোজ ৭ ব্যবহার হচ্ছে। ১৪ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত ‘বর্ধিত সেবা’ হিসেবে চলছে উইন্ডোজ ৭ সংস্করণটি। অর্থাৎ মূল ধারার সমর্থন বন্ধ হয়ে গেলেও কেবল নিরাপত্তা ইস্যু এবং কিছু বাগ মোকাবেলা করার জন্য সীমিত সমর্থন বজায় রাখা হয়েছে। তবে মঙ্গলবারের পর আর কোনো ধরনের সমর্থন মিলবে না।
উইন্ডোজ ৭ সমর্থন বন্ধ হওয়ার পর কী ঘটতে পারে?
উইন্ডোজ ৭ সমর্থন বন্ধ হওয়ার অর্থ এমন নয় যে, অপারেটিং সিস্টেমটি দিয়ে আর কোনো পিসি চালানো যাবে না। মাইক্রোসফট শুধু উইন্ডোজ ৭ সমর্থন বন্ধ করছে। ফলে নতুন কোনো হালনাগাদ পাওয়া যাবে না। ব্যবহারকারীরা ঠিকই উইন্ডোজ ৭ দিয়ে তাদের কম্পিউটার চালিয়ে নিতে পারবেন। তবে সমস্যা হবে নিরাপত্তা ইস্যুকে কেন্দ্র করে। উইন্ডোজের জনপ্রিয় সংস্করণটির সমর্থন বন্ধ হওয়ার পর ম্যালওয়্যার আক্রমণের আশঙ্কা দিন দিন বাড়বে। ফলে সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। ভাইরাস ও অন্যান্য ত্রুটি প্রতিরোধের ব্যবস্থা না থাকায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্র্যাশ করবে এবং ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যাবে। কাজেই সমর্থন বন্ধ হওয়ার আগেই উইন্ডোজ ১০ বা সমর্থন রয়েছে, এমন যেকোনো অপারেটিং সিস্টেমে পিসি হালনাগাদ করিয়ে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, উইন্ডোজ ৭ থেকে ১০-এ হালনাগাদ করলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন ব্যবহারকারী। এর প্রধান কারণ উভয় অপারেটিং সিস্টেমই একই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকৃত। যে কারণে মূল কাঠামোয় সাদৃশ্য রয়েছে। এর ফলে ব্যবহারকারীর জন্য উইন্ডোজ ১০ চালানো তুলনামূলক সহজ হবে। উইন্ডোজ ১০-এর ইন্টারফেস ও লেআউট উইন্ডোজ ৭-এর মতোই। কেবল প্রোগ্রামগুলো হালনাগাদ করা হয়েছে। যে কারণে ব্যবহারকারী খুব সহজে উইন্ডোজ ১০-এ নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন।
প্রকৃত উইন্ডোজ ১০ বাজারে সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। পাশাপাশি অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে বিনা মূল্যের সংস্করণও চালানো সম্ভব হবে। উইন্ডোজ ১০ যেভাবেই সংগ্রহ করা হোক না কেন, এটি রান করার জন্য কম্পিউটারের কমপক্ষে নিম্নোক্ত কনফিগারেশন থাকতে হবে—
প্রসেসর: ১ গিগাহার্টজ বা এর চেয়ে দ্রুতগতির, র্যাম: ৬৪-বিটের জন্য ২ গিগাবাইট এবং ৩২ বিটের জন্য ১ গিগাবাইট, হার্ডডিস্ক স্পেস: ৩২-বিটের জন্য কমপক্ষে ১৬ গিগাবাইট এবং ৬৪-বিটের জন্য ২০ গিগাবাইট, গ্রাফিকস কার্ড: ডব্লিউডিডিএম ১.০ ড্রাইভারসহ ডাইরেক্টএক্স-৯ কিংবা এর পরবর্তী সংস্করণ।
লিনাক্সে হালনাগাদ হওয়া যেতে পারে
বিশ্বব্যাপী উইন্ডোজ ৭ ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে সাশ্রয়ী আপগ্রেডেশন হতে পারে লিনাক্স। ওপেন সোর্স এ অপারেটিং সিস্টেম একদম বিনা মূল্যে পাওয়া যাবে। লিনাক্সের আরো একটি সুবিধা হচ্ছে, ডেভেলপাররা নিয়মিত হালনাগাদ সরবরাহ করে। যে কারণে যেকোনো নিরাপত্তা ইস্যুতে উদ্বিগ্ন না হয়ে লিনাক্স ব্যবহার করা যায়। লিনাক্সের বেশ কয়েকটি সংস্করণ অনলাইনে মিলবে। এগুলোর মধ্য থেকে যেকোনো একটি সংস্করণ খুশিমতো বেছে নেয়া যেতে পারে। লিনাক্সের একটি জনপ্রিয় ডিসট্রস হলো উবুন্তু। এটি উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের জন্য আদর্শ সংস্করণ বা ডিসট্রস হতে পারে। ব্যবহারে সহজ এবং প্রচুর অ্যাপ সমর্থন করায় এর গ্রাহক সংখ্যাও বেশি। এছাড়া লিনাক্সের আরো একটি সহজ ডিসট্রস হলো লিনাক্স মিন্ট। এর ইন্টারফেস উইন্ডোজ ৭-এর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় ট্রানজিশনের ক্ষেত্রে তেমন কোনো ঝামেলায় পড়তে হবে না। এটি ইনস্টলের সঙ্গে সঙ্গে বেশির ভাগ টুলসও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনস্টল হয়ে যায়। সবচেয়ে সুবিধা হলো, বেশির ভাগ লিনাক্সে ডিসট্রস পুরনো হার্ডওয়্যারের কম্পিউটারে সমানতালে চলে। ফলে নতুন অপারেটিং সিস্টেম আপগ্রেডেশনের ক্ষেত্রে পুরনো হার্ডওয়্যার বদলানোর প্রয়োজন হয় না।
লিনাক্স ডিসট্রসে বেশকিছু ক্ষেত্রে জটিলতার মুখে পড়তে পারেন উইন্ডোজ ৭ ব্যবহারকারীরা। বেশকিছু সাধারণ অ্যাপ যেমন মাইক্রোসফট অফিসের মতো কাজের অ্যাপগুলো না-ও মিলতে পারে। লিনাক্সে যে ওয়ার্ড, এক্সেল রয়েছে তা চালানো উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের জন্য কিছুটা জটিল।
অপারেটিং সিস্টেম আপগ্রেডেশনের আগে করণীয়
পিসি ব্যবহারকারী নিজের পছন্দমতো যেকোনো অপারেটিং সিস্টেমে আপগ্রেড হতে পারেন। তবে প্রথম ও প্রধান যে কাজটি করতে হবে, তা হলো অপারেটিং সিস্টেম আপগ্রেডেশনের আগে কম্পিউটারে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, ফোল্ডার, ইমেজ, ভিডিও কিংবা দরকারি অন্য যেকোনো ডকুমেন্ট সরিয়ে ব্যাকআপ রাখা। এর জন্য সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ। কেউ উইন্ডোজ ৭ থেকে ১০-এ আপগ্রেড হলেও অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়াতে প্রথমে পিসি থেকে প্রয়োজনীয় ফাইলপত্র সরিয়ে রাখুন। কেউ উইন্ডোজ ছেড়ে লিনাক্স কিংবা ম্যাক ডিভাইসে আপগ্রেড হতে চাইলে পুরনো পিসির হার্ডড্রাইভ ফরম্যাট দেয়ার আগে সব ফাইল, ডকুমেন্ট বাড়তি হার্ডডাইভে ব্যাকআপ রাখুন। এক্ষেত্রে ফাইল সিনক্রোনাইজ করে ক্লাউড সার্ভিসে রাখা যেতে পারে, যা পরে নতুন ডিভাইস বা ওএসচালিত মেশিনে সময়মতো ডাউনলোড করে নেয়া যাবে। ড্রপবক্সও একটি ভালো সমাধান হতে পারে, যেখান থেকে উইন্ডোজ, লিনাক্স বা ম্যাক যেকোনো অপারেটিং সিস্টেমে গুরুত্বপূর্ণ পুরনো তথ্য পুনরায় সংগ্রহ করা যাবে।