বিজ্ঞানীরা কিছু টিউমারের ভেতরে শক্তিশালী প্রতিরোধক কোষ বা পাওয়ার হাউসের খোঁজ পেয়েছেন, যা শরীরকে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। কিছু ক্যানসার রোগীর ক্ষেত্রে এসব প্রতিরোধী কোষ ভেতর থেকেই সেরে উঠতে সহায়তা করতে পারে বলে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে।
আন্তর্জাতিক গবেষক দলের গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন তাঁরা। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ‘নেচার’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে তিনটি গবেষণাপত্র। এতে কিছু টিউমারের ভেতরের মূল গঠন শনাক্ত করার বিষয়ে বলা হয়েছে। এতে বলা হয় টেরিটরি লিম্ফয়েড স্ট্রাকচার (টিএলএস)।
কয়েক বছর ধরেই চিকিৎসকেরা ক্যানসার চিকিৎসায় ‘ইমিউনোথেরাপি’ব্যবহার করছেন। এতে টিউমারের সঙ্গে লড়াই করার জন্য শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা হয়। এ পদ্ধতিতে রক্তের টি-সেল নামের শ্বেতকণিকাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। টি-সেলকে ক্যানসার কোষ চেনার প্রশিক্ষণ দিয়ে আক্রমণ করতে শেখানো হয়। কিন্তু উদ্ভাবনী এ চিকিৎসা কেবল ২০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ভালোভাবে কাজ করে। এ পদ্ধতি শুধু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ভালোভাবে কেন কাজ করে, তা জানতে গবেষণা চলছে।
প্যারিস ডেসকার্টেস বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল স্কুলের কর্ডেলিয়ার্স গবেষণা কেন্দ্রের ইমিউনোলজির এমিরেটার অধ্যাপক উলফ এইচ ফ্রিডম্যান বলেন, এসব কাঠামো কারখানা বা প্রতিরোধ কোষগুলোর জন্য কারখানা বা স্কুলের মতো কাজ করে, যা শরীরকে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। এসব কোষকে স্কুলে শিক্ষিত হতে হয়, যা মূলত টেরিটরি লিম্ফয়েড স্ট্রাকচার। এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্যানসার কোষকে আক্রমণ করে প্রতিরোধী কোষগুলো।
গবেষকেরা বলেন, টি-সেলের বাইরেও ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করার কোষ পাওয়া গেছে। টিএলএসে বি-সেল পূর্ণ থাকে, যা এমন এক ধরনের প্রতিরোধী কোষ যা অ্যান্টিবডি তৈরি করে।
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ডারসন ক্যানসার সেন্টারের সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগের ফেলো বেথ হেলমিনক বলেন, এ গবেষণা ইমিউনোথেরাপিতে বি-কোষের ভূমিকা সম্পর্কে ধারণা পরিবর্তন করে দেবে।
অবশ্য এ গবেষণায় অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। সব টিউমারে না হয়ে কেন শুধু কিছু টিউমারে এ ধরনের কোষ তৈরি হয়, তেমন একটি প্রশ্ন। ইমিউনোথেরাপিতে বি-সেল কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, সে প্রশ্নের উত্তরও মেলেনি। তবে এ গবেষণা ক্যানসার চিকিৎসায় সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলতে পারে বলেও মনে করছেন গবেষকেরা।