বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজার খারাপ সময় পার করছে। গত বছর নতুন স্মার্টফোন সরবরাহে প্রবৃদ্ধির দেখা মিললেও তা যথেষ্ট ছিল না। বিশ্বব্যাপী নতুন স্মার্টফোন সরবরাহে মন্দা দেখা গেলেও ব্যবহৃত ও পরিমার্জিত স্মার্টফোনের চাহিদায় উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
২০১৯ সালে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ব্যবহৃত ও পরিমার্জিত স্মার্টফোনের বৈশ্বিক সরবরাহ ২০ কোটি ৬৭ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে, যা এক বছর আগের চেয়ে ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। ২০১৮ সালে ব্যবহৃত ও পরিমার্জিত স্মার্টফোন সরবরাহ ১৭ কোটি ৫৮ লাখ ইউনিট ছিল। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। খবর ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিস।
বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ অফারের আওতায় ব্যবহৃত স্মার্টফোন ফেরত নিয়ে নতুন কেনার সুযোগ দিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে পুরনো ডিভাইসের নির্ধারিত মূল্য নতুন কেনা ফোনের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। অর্থাৎ এক্সচেঞ্জ অফারের আওতায় অর্ধেক বা তার কিছু বেশি মূল্য পরিশোধ করে আপগ্রেডে ডিভাইস ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে থাকেন ক্রেতারা। এক্সচেঞ্জ অফারের আওতায় ব্যবহৃত ফোন সংগ্রহ এবং ঘষামাজা করে তা পুনরায় বাজারে সরবরাহকৃত ডিভাইসকে পরিমার্জিত বলা হয়।
আইডিসির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মধ্যে ব্যবহৃত স্মার্টফোনের বৈশ্বিক সরবরাহ ৩৩ কোটি ২৯ লাখ ইউনিটে পৌঁছবে। আগামী চার বছর ব্যবহৃত ও পরিমার্জিত স্মার্টফোন সরবরাহে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে।
আইডিসির গবেষণা ব্যবস্থাপক অ্যান্থনি স্ক্যারসেলা বলেন, বৈশ্বিক নতুন স্মার্টফোন বাজার কয়েক বছর ধরে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েক বছর নতুন স্মার্টফোন বাজারে যৎসামান্য প্রবৃদ্ধি দেখা যেতে পারে। তবে ব্যবহৃত ও পরিমার্জিত স্মার্টফোন বাজারে সরবরাহ কমার কোনো আশঙ্কা নেই। বরং বিশ্বের সব অঞ্চলে ব্যবহৃত স্মার্টফোনের চাহিদা বাড়বে।
তিনি বলেন, উন্নত ফিচারের ডিভাইস সাশ্রয়ী মূল্যে সরাসরি ব্র্যান্ডগুলোর কাছ থেকে কিনতে পারায় পরিমার্জিত ও পুরনো ফোনের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ব্যক্তিপর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অর্থ বাঁচাতে এ ধরনের ডিভাইস বেশি কিনছে। একই সঙ্গে প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডগুলো তুলনামূলক সাশ্রয়ী ডিভাইস নির্মাতাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা জোরদারে পরিমার্জিত হাই-এন্ড ডিভাইস সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ করছে। ফলে ক্রেতা ও ডিভাইস নির্মাতা উভয় প্রতিষ্ঠান লাভবান হচ্ছে। বিভিন্ন সরঞ্জামের চড়া মূল্যের কারণে ব্র্যান্ডগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নত ফিচার-সংবলিত ডিভাইস সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছে। এক্ষেত্রে কম দামে গ্রাহকদের হাতে প্রিমিয়াম ফিচারের ফোন পৌঁছাতে ব্যবহৃত ও পরিমার্জিত ডিভাইসকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজির ব্যবহার শুরু হয়েছে। থ্রিজি ও ফোরজির চেয়ে দ্রুত বিস্তার ঘটছে ফাইভজির। এ নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির সুবিধা পেতে দরকার ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোনের। ফাইভজির পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার শুরু হলে পরিমার্জিত স্মার্টফোন বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়বে। কারণ অনেকেই ফোরজি ফোন ছেড়ে ফাইভজি সমর্থিত ফোন ক্রয়ে ঝুঁকবে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, ফাইভজির পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার শুরু হলে পরিমার্জিত ফোন বাজারের আকার আরো বাড়বে। কারণ এখনো বিশ্বের অনেক টেলিযোগাযোগ বাজার পূর্ণাঙ্গ ফোরজি নেটওয়ার্কের আওতায় আসেনি। এসব বাজারে ফোরজি সম্প্রসারিত হলে সংশ্লিষ্ট ডিভাইসের চাহিদা বাড়বে। ফলে অনেকেই অর্থ সাশ্রয়ে ব্যবহৃত ও পরিমার্জিত ফোরজি ফোন কিনতে আগ্রহী হবেন, যা বাজার প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি বৈশ্বিক ব্যবহৃত স্মার্টফোন বাজারের প্রবৃদ্ধি অনেকটা ডিভাইস ব্র্যান্ডগুলোর ওপরও নির্ভর করছে। কারণ পরিমার্জিত হলেও তারা কতটা ত্রুটিমুক্ত করে ডিভাইসগুলো সরবরাহ করছে তা গুরুত্বপূর্ণ।