ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারকে বকেয়া অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউর (এজিআর) ১৯৫ কোটি রুপি পরিশোধ করেছে রিলায়েন্স জিও ইনফোকম। ভারতীয় একমাত্র সেলফোন অপারেটর, যা দেশটির সর্বোচ্চ আদালত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বকেয়া এজিআরের অর্থ পরিশোধ করল। খবর ইটি ব্যুরো।
২০০৫ সাল থেকে এজিআরের সংজ্ঞা নিয়ে ভারতের ব্যক্তিখাতের টেলিকম কোম্পানি এবং দেশটির টেলিকম বিভাগের (ডিওটি) মধ্যে আইনি লড়াই চলে আসছে। গত অক্টোবরের শেষ দিকে এজিআর নিয়ে ভারতী এয়ারটেল, রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস ও ভোডাফোন আইডিয়ার মতো টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন খারিজ করে দিয়ে ডিওটির সংজ্ঞাকে বৈধতা দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। একই সময় বকেয়া পরিশোধে সেলফোন অপারেটরগুলোকে চলতি মাসের ২৩ তারিখ সময় বেঁধে দেয়া হয়। এর কয়েক সপ্তাহ পর দেশটির সেলফোন অপারেটরগুলোর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হয়। সম্প্রতি এজিআর নিয়ে আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনও খারিজ হয়ে যায়।
২০১৬ সালে ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে প্রবেশ করে রিলায়েন্স জিও ইনফোকম। এর প্রবেশ দেশটির টেলিযোগাযোগ খাতে তীব্র প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করে। জিওর আগ্রাসী ব্যবসানীতির কারণে ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে মূল্যযুদ্ধের সূচনা হয়। জিও ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে দেরিতে প্রবেশ করায় বকেয়া এজিআরের পরিমাণও কম। গত বছর অক্টোবরে ভারতী এয়ারটেল, রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস ও ভোডাফোন আইডিয়ার কাছ থেকে ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি রুপি বকেয়া আদায়ের আদেশ দিয়েছিলেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।
ভারতের সেলফোন অপারেটরগুলো ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে বকেয়া এজিআর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি ভারতী এয়ারটেল। প্রতিষ্ঠানটি বকেয়া এজিআর পরিশোধে আরো সময় চেয়েছে। অবশ্য যেসব সেলফোন অপারেটর নির্ধারিত সময়ে এজিআর পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোকে এখনই কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে ডিওটি।
গত সপ্তাহে ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেড জানিয়েছিল যে, আদালত বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে তারা বকেয়া এজিআরের আংশিক পরিশোধ করবে। ঋণখেলাপি ট্যাগ এড়ানো এবং কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে যাতে বিপত্তিতে পড়তে না হয়, সেজন্য এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আদালত অবমাননার দায় থেকেও রেহাই পাবে সেলফোন অপারেটরটি। তবে গত বৃহস্পতিবার বকেয়া এজিআর পরিশোধের নির্ধারিত দিন থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি কোনো অর্থ পরিশোধ করেনি। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারকে ভারতী এয়ারটেল, রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস ও ভোডাফোন-আইডিয়ার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে বকেয়া লাইসেন্স ফি বাবদ মোট ৯২ হাজার ৬৪২ কোটি রুপি পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া স্পেকট্রাম ইউজেস চার্জ, জরিমানা ও জরিমানার ওপর সুদ বাবদ আরো ৫৫ হাজার ৫৪ কোটি রুপি বকেয়া পরিশোধ করতে হবে।
সম্প্রতি বিচারপতি অরুণ মিশ্র, এসএ নাজির এবং এমআর শাহের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সেলফোন অপারেটরগুলোর বকেয়া পরিশোধের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের যোগ্যতা খুঁজে পায়নি বলে তা খারিজ করে দেন। সেলফোন অপারেটরগুলোর পক্ষ থেকে রায় পর্যালোচনার জন্য একটি উন্মুক্ত শুনানির ব্যবস্থা করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। তবে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত এতে সায় দেয়নি।
বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, আদালতের রায় নতুন-পুরনো মিলে ভারতের ১৫টি সেলফোন অপারেটরের ওপর প্রভাব ফেলবে। এর মধ্যে ব্যক্তিখাতের বড় দুটি অপারেটরের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে। এ সিদ্ধান্তের প্রভাব নিয়ে সরকারের অবশ্যই পর্যালোচনা করা উচিত। সেলফোন অপারেটরগুলোর চাপিয়ে দেয়া এ আর্থিক বোঝা দূর করার জুতসই পদ্ধতি বের করার বিকল্প নেই। কারণ ভারতের টেলিকম বিভাগের দাবি করা বকেয়া অর্থ পরিশোধ করার মতো অবস্থায় নেই ভারতী এয়ারটেল, ভোডাফোন আইডিয়া ও রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস।