২০১৯ সালে সরবরাহ বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন বাজারের তকমা দখলে নিয়েছে ভারত। গত বছর দেশটিতে স্মার্টফোন সরবরাহ ১৫ কোটি ৮০ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে, যা এর আগের বছরের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি। গত বছর ভারত স্মার্টফোন সরবরাহে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির মুখ দেখলেও শাওমি ও ভিভোর মতো ব্র্যান্ডগুলোর কাছে বাজারটিতে ধরাশায়ী হয়ে পড়েছে স্যামসাং। খবর হিন্দুস্তান টাইমস।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের শুরুতে চীনভিত্তিক শাওমির কাছে ভারতের স্মার্টফোন বাজারে শীর্ষস্থান হারায় স্যামসাং। ক্রমবর্ধমান বাজারটিতে কিছুদিন দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও গত বছর শেষে আরেক চীনা ব্র্যান্ড ভিভোর কাছে দ্বিতীয় অবস্থানও হারিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে শীর্ষস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হলেও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন বাজারে এখন তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে স্যামসাং।
ভারত এখন শাওমির বৃহৎ বাজার হয়ে উঠেছে। চীনের বাজারে হুয়াওয়ের কারণে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। যে কারণে তুলনামূলক সাশ্রয়ী ফোরজি স্মার্টফোন দিয়ে ভারতের বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে শাওমি ও ভিভোর মতো চীনা ডিভাইস ব্র্যান্ডগুলো।
ভারতে গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখেছে শাওমি। এছাড়া বছরজুড়ে এর ডিভাইস সরবরাহে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ শতাংশ। রেডমি নোট সিরিজের ডিভাইসের ব্যাপক চাহিদা এবং অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে বিক্রি জোরদার ব্র্যান্ডটির প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।
ভারতের স্মার্টফোন বাজারে গত বছর ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি পেয়েছে ভিভো। বছরজুড়ে ব্র্যান্ডটির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩৪ শতাংশ। এছাড়া শুধু অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ৭৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। তুলনামূলক সাশ্রয়ী ডিভাইসে উন্নত ফিচার দিয়ে গ্রাহক টানায় জোর দিচ্ছে ভিভো। ব্র্যান্ডটির এ কৌশল ভারতে ব্যবসা জোরদারে অনেকটা কাজে দিয়েছে। এর সুবাদে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন বাজারে প্রথমবারের মতো স্যামসাংকে হটিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
অন্যদিকে গত বছরজুড়ে ভারতে স্যামসাংয়ের স্মার্টফোন সরবরাহ ৫ শতাংশ কমেছে। তবে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির স্মার্টফোন সরবরাহ স্থিতিশীল ছিল। এ প্রান্তিকে নিজেদের হালনাগাদ ‘এ’ ও ‘এম’ সিরিজের একাধিক ডিভাইস বাজারে ছাড়ে প্রতিষ্ঠানটি। যে কারণে প্রান্তিকটিতে ভারতে স্যামসাং ডিভাইস সরবরাহ স্থিতিশীল ছিল।
গত প্রান্তিকে ভারতে অপোর স্মার্টফোন সরবরাহ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। ব্র্যান্ডটির সাশ্রয়ী ডিভাইস এ৫এস এবং সম্প্রতি উন্মোচিত এ৯ ২০২০ এবং এ৫ ২০২০ অফলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে বিক্রি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি, যা অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে এর ডিভাইস সরবরাহ প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
কাউন্টারপয়েন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর ভারতে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে অপোর সাব-ব্র্যান্ড রিয়েলমি। বছরজুড়ে এ ব্র্যান্ডের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫৫ শতাংশ। আগ্রাসী বিপণন কৌশল এবং সাশ্রয়ী দামে তুলনামূলক হাই-এন্ড ফিচার সংবলিত ডিভাইস সরবরাহ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন বাজারে ব্র্যান্ডটির প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
ভারতে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছে রিয়েলমি। আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরুর প্রথম বছরেই ভারতে দেড় কোটি ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে কার্যক্রম শুরুর প্রথম বছরে বাজারটিতে যতসংখ্যক ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে, তা দ্বিতীয় বছর দ্বিগুণে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে রিয়েলমি। অর্থাৎ চলতি বছর শুধু ভারতে তিন কোটি স্মার্টফোন বিক্রি করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। রিয়েলমি শুরু থেকে চীনা ব্র্যান্ড ভিভো ও অপোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। ভিভো ও অপোর মতোই এটি অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে বিপণন ও অফলাইন ডিস্ট্রিবিউশনে বিনিয়োগে গুরুত্ব দিচ্ছে। ভারতে ব্যবসা বাড়াতে বাজার দখলে শীর্ষে থাকা শাওমিকে অনুসরণ করছে রিয়েলমি।