দেশিয় ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস ইভ্যালি নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা ভবিষ্যতে ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর। এর জন্য ই-কমার্সসহ দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের উপর প্রভাব পড়বে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) বেসিস সূত্রে এই তথ্য জানা যায়। সম্প্রতি বেসিস আয়োজিত এক ওয়েবিনারে নিজ বক্তব্যে এসব কথা বলেন বেসিস সভাপতি। সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমাদের অনলাইনে কেনাকাটার যে ট্রেন্ডটা শুরু হয়েছে এটা কিছুটা হলেও থেকে যাবে। কিন্তু এই কাস্টমার গুলো আমরা ধরে রাখতে পারবো কিনা সেটা নির্ভর করবে আমাদের লজিস্টিক এবং সাপ্লাই চেইন এর উপর। প্রতিটা প্রতিষ্ঠান এর একটা আলাদা বিজনেস মডেল আছে। এই মডেল এর মাধ্যমে যদি কাস্টমারের সাথে প্রতারণা না হয়ে থাকে এটা নিয়ে কথা বলা একদমই ঠিক না। আর ‘লেট ডেলিভারি’র ক্ষেত্রে যেটা হয় অর্ডারের সময় ‘টার্মস এন্ড কন্ডিশন’ এ কিন্তু লেখাই থাকে যে আপনি কম দামে পন্যটি নির্দিষ্ট তারিখের পরে পাবেন, কিন্তু তারা এসব শর্তাবলী অনেকেই পড়েইনা। শর্তাবলীতে কিন্তু সে রাজি হয়েছে এক মাস পরে নিবে কিন্তু সে আশা করতেছে যে, একদিন পরই এটা পেয়ে যাবে। আর এজন্যই সমস্যাটা বেশি হয়।
আলমাস কবীর আরও বলেন, ইভ্যালি নিয়ে যে নেতিবাচক প্রচারণা চলছে তা ভবিষ্যতে ক্ষতির কারণ হতে পারে। শুধু ইভ্যালি না, দেশিয় ই-কমার্স এবং সামগ্রিকভাবে আইসিটি খাতের উপর এর প্রভাব পড়বে। গ্রাহকেরা ই-কমার্সের উপর থেকে আগ্রহ হারাবেন এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ করা নিয়ে শংকায় থাকবেন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যবসায়িক মডেল থাকতেই পারে। ক্যাশব্যাক যদি ব্যবসার মডেলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তবে কারও কোনো সমস্যা থাকার কথা না।
ওয়েবিনারে অনলাইন ব্যবসার করোনার প্রভাব,বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে খাত সংশ্লিষ্টরা আলোচনা করেন। সিন্দাবাদ ডট কমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জিসান কিংশুক এর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বেসিস পরিচালক দিদারুল আল্ম সানি, ডিজিটাল কমার্স বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সায়, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমালসহ অন্যান্যরা।
ই-কমার্সে নীতিমালা প্রসঙ্গে ই-ক্যাব সভাপতি শমি কায়সার বলেন, আমাদের একটি ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা রয়েছে। নতুন করে রেগুলেটরি বডি তৈরি না করে বিদ্যমান ডিজিটাল কমার্স নীতিমালাকে সময়পযোগী করে গড়ে তোলা যেতে পারে। কোভিড কালীন সময়ে ই-কমার্সে একটি পূর্ণাঙ্গ ইকো সিস্টেম গড়ে উঠেছে বলে আমি মনে করি। বর্তমানে সবচেয়ে যেটি বেশি দরকার তা হলো সকল বিশেষজ্ঞ ও ট্রেড বডিদের নিয়ে একটি সময়পোযগী নীতিমালা গড়ে তোলা। সবাই মিলে একত্রে যে সমস্যগুলো রয়েছে এবং ভবিষ্যতে যে সমস্যাগুলো আসতে পারে সেগুলো বের করতে হবে। একই সাথে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং এগুলোর ক্ষেত্রে পলিসি তৈরি করতে হবে। অন্যদিকে রেগুলেটরি বডি যেন এমন না হয় যে তা ই-কমার্স অগ্রগতির পথকেই রোধ করে ফেলে সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
বর্তমান সময়ের ই-কমার্স পরিস্থিতি নিয়ে বেসিস পরিচালক দিদারুর আলম সানি বলেন, মহামারীর সময় বা এখন যে অবস্থা এতে ই-কমার্স সেক্টরে আমাদের প্রচুর ‘গ্রোথ’ হচ্ছে। এর কারণে আমাদের ডেলিভারি দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। অনেকেই মনে করতেছে যে এটা একটা ‘ওয়ানটাইম গ্রোথ’; এটা থাকবেনা। তবে আমি মনে করি এই গ্রাহকদের যদি দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে সেবা প্রদান করতে পারি তাহলে এই কাস্টমার শ্রেণী রয়ে যাবে। আপনি যদি মূল্য না কমান বা ক্যাশব্যাক বা মেগা অফার না দেন তাহলে কাস্টমার কে ধরে রাখতে পারবেন না। একেকটা কোম্পানি একেকটা কৌশল নিয়ে কাজ করে। এই কৌশলে রেগুলেটরি কমিশন এর হাত না দেয়াই ভালো। এতে করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যায়। একটা কোম্পানির বিভিন্ন বিষয় সময় নিয়ে না দেখে ‘তারা ভালো না’ বা ‘এভাবে হবেনা’ এগুলো বলা একদমই ঠিক না। এতে করে তাদের যে বিপুল সংখ্যক গ্রাহক আছে তারা আর ই-কমার্স এর ওপর ভরসা করবে না। এতে ক্ষতি একজনের হবেনা; সবারই হবে।