অভিযানের সংখ্যার একটা হিসাব হয়ত বিজ্ঞানীরা সহজেই দিতে পারবেন, শতকরা হিসাবও তারা দেবেন, কিন্তু সাফল্য আর ব্যর্থতা কোন্ মাপকাঠিতে হিসাব করা হবে সেটা নিয়েই বিজ্ঞানী মহলে রয়েছে আসল জটিলতা।
যেমন: ব্রিটিশ নভোযান বিগল-২ মঙ্গলের আবহাওয়া মণ্ডলে সফলভাবে ঢুকতে সক্ষম হয়েছিল ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। মঙ্গলের পৃষ্ঠে সফলভাবে অবতরণও করেছিল নভোযানটি। কিন্তু কয়েক বছর আগে জানা যায়, সফলভাবে পৌঁছনর সেই খবর বাড়িতে অর্থাৎ পৃথিবীতে পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হয় নভোযানটি। তাহলে এই অভিযান সফল না ব্যর্থ?
নাসার মার্স রিকনোসেন্স অরবিটার নামে পর্যবেক্ষণ নভোযানের পাঠানো ছবি থেকে দেখা যায় বিগল- টু নভোযানটির “পাপড়ি”র মত যে অংশগুলো অবতরণের সময় খুলে যাবার কথা ছিল সেগুলো খুলতে ব্যর্থ হয়। ওই পাপড়ির মত অংশগুলোতে সংযুক্ত ছিল সোলার প্যানেল। সেগুলো না খোলায় যোগাযোগ অ্যান্টেনাগুলো বন্ধ থাকে এবং পৃথিবীর সাথে নভোযানের যোগাযোগ পথ বন্ধ হয়ে যায়।
বিগল টু-নভোযান প্রসঙ্গে বলা হয় এই মহাকাশ মিশন মঙ্গলের পৃষ্ঠে অবতরণের সময় শুধু কিছু ঘষা খাওয়ার চিহ্ণ রেখে গেছে – এছাড়া এর কোন সাফল্য নেই। কিন্তু যানটি যে অক্ষত অবস্থায় অবতরণ করেছিল সেটাকে কি অন্তত আংশিক সাফল্য হিসাবেও ধরা যায়? বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ আছে।
কিংবা ধরুন রাশিয়ার মার্স-থ্রি নভোযানের কথা। মঙ্গল গ্রহে প্রথম সফলভাবে অবতরণ করেছিল এই নভোযানটি ১৯৭১ সালের দোসরা ডিসেম্বর। সেটাই মঙ্গলে প্রথম কোন নভোযানের অবতরণ। অবতরণের পরই সাথে সাথে সোভিয়েত নভোযানটি সেখান থেকে ছবি পাঠাতে শুরু করে পৃথিবীতে। মিশনের নিয়ন্ত্রকরা এই সাফল্যে তখন উল্লসিত হয়ে উঠেছিলেন।
কিন্তু মঙ্গলের পৃষ্ঠে মাত্র দু মিনিট যেতে না যেতেই নভোযানের কলকব্জা বিকল হয়ে যায়। সেই সময় একটা ভয়ঙ্কর রকম ধূলোর ঝড় বইছিল। ধারণা করা হয় নভোযানের কলকব্জা অকেজো হয়ে যাওয়ার কারণ ছিল ওই ধূলিঝড়।
কোন কোন বিজ্ঞানী মনে করেন ওই ধূলিঝড়ের কারণেই নভোযানের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা বিকল হয়ে যায় এবং পৃথিবীর সাথে নভোযানের যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়।
সোভিয়েত ইউনিয়ন এরপর আরও পাঁচবার মঙ্গলগ্রহে নভোযান পাঠানোর পর তাদের অভিযান আসল সাফল্যের মুখ দেখে।