অনলাইনে কেনাকাটার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিশা মার্ট এর বিরুদ্ধে উঠেছে গ্রাহক হয়রানি আর ভোগান্তির হাজারো অভিযোগ। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে জমা হয়েছে অভিযোগের পাহাড়।এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি চরম আস্থার সংকটে পড়েছে বলে জানা গেছে।
আলিশা মার্ট থেকে পণ্য অর্ডার করে গ্রাহকদের ভোগান্তি ও হয়রানিসহ নানান অসংগতি উঠে এসেছে টেকজুমের অনুসন্ধানে। আলিশামাট গ্রাহক ভোগান্তির শেষ কোথায়? বিষয়ে আজ প্রকাশ হলো প্রথম পর্ব।
সম্প্রতি তথ্যপ্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্ট অনেকেই আলিশা মার্ট এর গ্রাহক ভোগান্তি নিয়ে নানান প্রশ্ন তুলেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ই-কমার্স নিয়ে দেশে কোনো রেগুলেটরি কমিশন না থাকার কারণে বিষয়টি সম্পর্কে সরকারের উচ্চ মহলে নজরে আসছে না বলে মনে করছেন ই-কমার্স খাত সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আলিশা মার্ট এ ক্যাশ অন ডেলিভারি (সিওডি) বা পণ্য হাতে পাওয়ার পর পেমেন্ট পদ্ধতি নেই। ফলে এখানে পণ্য ক্রয় করতে হলে অবশ্যই আগে থেকে অনলাইনে পেমেন্ট দিতে হবে। পেমেন্ট দেয়ার কয়েকমাস পর পণ্য পাওয়া যায়।
মূলত বাজার মূল্যের চেয়ে কম টাকা বা ডিসকাউন্টে পণ্য দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অফার দেয়া হয় বলেই মানুষ এখানে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে আলিশা মার্ট এর কখনই নির্ধারিত সময়ে পণ্য ডেলিভারি দেয়া হয় না। এমনকি দুই তিন মাস অপেক্ষায় রেখে গ্রাহককে বলা হয় স্টক আউট হওয়ার কারণে পণ্য দেয়া যাচ্ছে না।
আর যাদের পণ্য ডেলিভারি দেয়া হয় না তাদের সরাসরি টাকা ফেরত দেয়া হয় না। পণ্য অর্ডার করে টাকা পরিশোধ করার পরেও সেটা নির্ধারিত সময়ে গ্রাহক না পাওয়া, প্রোসেসিংয়ের নামে দিনের পর দিন পণ্য আটকে রাখা, হেল্প লাইনে কল করে অভিযোগ করলে সেটা আমলে না নিয়ে তার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়া, সাধারণ গ্রাহকদের এমন নানান ধরনের হয়রানি আর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
সাইদুর রহমান পাভেল নামে আরেক ভুক্তভোগী গ্রাহক বলেন, অনেক আশা করে ৫০% অফারে একটা পণ্য আর্ডার করি। সব মিলিয়ে ২ মাস ১৫ দিন চলছে। এর পরেও কবে পণ্যটি পিকড হবে আর কবেই সেটা ডেলিভারি হবে এখনো কিছুই সিওর না। সবই ধোয়াশা। অনেকবার মেইল আর ফোন দেয়া হয়েছে। বাকিটা ইতিহাস। অনেক সখ করে আলিশা মার্ট তে অর্ডার করেছিলাম।এসব কি দেখার কেউ নাই? আমার পণ্যটা দ্রুত হাতে পেতে চাই।
কোনো প্রতিষ্ঠান দ্বারা ভুক্তভোগী গ্রাহক প্রতারিত হয়ে অভিযোগ করার বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৭৬ ধারায় বলা আছে, যে কোনো ব্যক্তি, যিনি, সাধারণভাবে একজন ভোক্তা বা ভোক্তা হইতে পারেন, এই অধ্যাদেশের অধীন ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য সম্পর্কে মহাপরিচালক বা এতদুদ্দেশ্যে মহাপরিচালকের নিকট হইতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অবহিত করিয়া লিখিত অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবেন।
১৫ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দেয়ার নিয়ম থাকলেও দিনের পর দিন অপেক্ষা করে, কেউ এক মাস, কেউ দুই মাস পরেও বুঝে পাচ্ছেন না নির্দিষ্ট পণ্য। এসএমএস, ইমেইল, হেল্প সেন্টারে কল করেও মিলছে না কোনো সমাধান। কেউ কেউ পণ্য অর্ডারের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়েও রয়েছেন শঙ্কায়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক বলেন, আলিশা মার্ট এর সম্পর্কে বেশকিছু অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এসব অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। আমাদের কাছে অভিযোগ করলে তদন্তে প্রমাণ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রান্তিক পর্যায়সহ সারা বাংলাদেশকে প্রযুক্তি সুবিধার আওতাভুক্ত করা ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তৃতি, সারাদেশে রফতানিমুখী নতুন শিল্পায়ন, অধিকতর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, আস্থাশীল ই-কমার্স বান্ধব পরিবেশ তৈরি এবং গতিশীল বাণিজ্যিক ব্যবস্থা রূপায়নে ২০১৮ সালের ১৬ জুলাই মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা ২০১৮’ অনুমোদন দিয়েছেন।