চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বিক্রি ৯ শতাংশ কমেছে। এ নিয়ে টানা তিন প্রান্তিকে স্মার্টফোন বিক্রি কমল। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা ভাবের কারণে গ্রাহক ইলেকট্রনিকস গ্যাজেট ক্রয় কমিয়ে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় ও সঞ্চয়ে মনোযোগী হওয়ায় স্মার্টফোন বাজারে প্রভাব পড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী ছয় থেকে নয় মাসও স্মার্টফোন বাজারের জন্য নেতিবাচক হতে পারে।
প্রযুক্তিবাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ক্যানালিসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের পর স্মার্টফোন বিক্রিতে সবচেয়ে বাজে প্রান্তিক ছিল গত প্রান্তিকটা।
বিশ্বব্যাপী সুদহার বৃদ্ধি ও ক্রমবর্ধমান জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধিতে ভোক্তা ব্যয়ে প্রভাব পড়েছে। চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে শ্লথগতি ও কভিড-১৯ লকডাউনের প্রভাবে স্মার্টফোন বিক্রিতে শ্লথগতি দেখা গেছে। শাওমি, ভিভো ও অপোর মতো দেশীয় কোম্পানির স্মার্টফোন বিক্রিতেও দুই অংকের পতন হয়েছে। শুধু অ্যাপলের আইফোন বিক্রিতে চাঙ্গা ভাব দেখা গেছে। গত সেপ্টেম্বরে আইফোন ১৪ ফোন উন্মোচনের মাধ্যমে অ্যাপলের বৈশ্বিক হিস্যা ১৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে শাওমি, অপো ও ভিভোর বাজার হিস্যা ছিল যথাক্রমে ১৪, ১০ ও ৯ শতাংশ।
ক্যানালিসের বিশ্লেষক সানিয়াম চৌরাসিয়া বলেন, চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিক ও ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে স্মার্টফোন বাজার চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন ডিসকাউন্ট ও বান্ডেল প্রমোশনের আশায় হয়তো অনেক গ্রাহকই নতুন স্মার্টফোন ক্রয় পেছাচ্ছে। গত বছরের এ উৎসব মৌসুমটাতে যে রকম স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছিল এবার তেমনটা দেখা যাচ্ছে না।
আইফোন ১৪-তে ভর করে তৃতীয় প্রান্তিকে অ্যাপলের বিক্রি চাঙ্গা থাকলেও নেতিবাচক খবর শুনিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক এ প্রযুক্তি জায়ান্ট। বিষয় সম্পর্কে অবগত দুটি সূত্রের বরাতে দি ইনফর্মেশন জানায়, আইফোন ১৪ প্লাস ফোন উৎপাদন কমাতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা পাঠিয়েছে অ্যাপল।
প্রযুক্তিবিষয়ক এ সাইটের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, চীনে অন্তত একটি কারখানা আইফোন ১৪ প্লাস ফোন উৎপাদন স্থগিত করেছে। এ ব্যাপারে অ্যাপলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনো মন্তব্য পায়নি বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গত মাসে ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন আইফোন সিরিজ যে পরিমাণে উৎপাদন করার কথা ছিল সেখান থেকে পিছু হটেছে অ্যাপল।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চীনে প্রলম্বিত লকডাউন, শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোয় মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব পড়েছে। এতে সেমিকন্ডাক্টর, ব্যক্তিগত কম্পিউটার (পিসি), এলসিডি প্যানেলসহ প্রায় সব ধরনের পণ্য ও শিল্প উপকরণ বিক্রি কমেছে। তৃতীয় প্রান্তিকের মতো দ্বিতীয় প্রান্তিকেও বৈশ্বিক স্মার্টফোন বিক্রি ৯ শতাংশ কমেছিল। সাশ্রয়ী গ্যালাক্সি এ সিরিজের স্মার্টফোনে ভর করে শীর্ষ স্মার্টফোন বিক্রেতা কোম্পানি স্যামসাংয়ের বাজার হিস্যা ছিল ২১ শতাংশ। দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্মার্টফোন জায়ান্টটির বিক্রি হয়েছে প্রায় ছয় কোটি ইউনিট। এখনো আইফোন ১৩-এর উচ্চ চাহিদায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা অ্যাপলের বাজার হিস্যা ১৭ শতাংশ। প্রথম প্রান্তিকে ৩১ কোটির বেশি স্মার্টফোন বিক্রি হলেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা ২৭ কোটি ৫০ লাখ ইউনিটে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের একই প্রান্তিকে স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছিল ৩১ কোটি ৬০ লাখ ইউনিট।
মহামারীর প্রথম দুই বছরে পেশাগত প্রয়োজন ও বিনোদন চাহিদা পূরণে স্মার্টফোন, ট্যাব ও পিসির চাহিদা রেকর্ড সর্বোচ্চে দাঁড়িয়েছিল। বিষয়টি আমলে নিয়ে স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানিগুলোও বাজারে নিত্যনতুন মডেলের হ্যান্ডসেট নিয়ে আসে। ভোক্তাদের কাছে এখন বিভিন্ন বিকল্প। বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় জরুরি প্রয়োজনীয় পণ্য বাদে ব্যয় কমাচ্ছে ভোক্তারা।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বিক্রি চার বছরের সর্বোচ্চ ছিল। কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের উপাত্ত অনুযায়ী, ২০২১ সালে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বিক্রি ৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৩৯ কোটি ইউনিট। অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর বৈশ্বিক স্মার্টফোন বিক্রি ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ১৩৫ কোটি ইউনিটে দাঁড়িয়েছে।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ জানায়, ২০১৭ সালে রেকর্ড ১৫৬ কোটি ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি হয়। তত্পরবর্তী তিন বছরে স্মার্টফোন বিক্রি কমেছে। উত্তর আমেরিকা, লাতিন আমেরিকা ও ভারতের বাজারে চাঙ্গা বিক্রির জেরে ২০২১ সালে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বিক্রি চার বছরের সর্বোচ্চে দাঁড়িয়েছিল।