সর্বাধুনিক মোবাইল ফোনে ‘তোলা’ চাঁদের নকল ছবি নিয়ে নিজেদের ‘বিতর্কিত’ ক্যামেরা প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তির ব্যাখ্যা দিয়েছে কোরিয়ান মোবাইল জায়ান্ট স্যামসাং।
কোম্পানির বর্ণনা অনুযায়ী, ‘গ্যালাক্সি এস২১’ ডিভাইস থেকেই চাঁদের এই শনাক্তকরণ ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আর ব্যবহারকারীর ফোনে ‘সিন অপ্টিমাইজার’ অপশন সক্রিয় থাকলে এর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা শনাক্ত করতে পারে যে তিনি ‘২৫এক্স’ বা তার বেশি জুমে চাঁদের ছবি তোলার চেষ্টা করছেন।
এই প্রযুক্তি ফোনের উজ্জ্বলতা কমানোর পাশাপাশি একাধিক ফ্রেইমের ছবি তোলে (উজ্জ্বল ও কম নয়েজের ছবি তুলতে)। আর ছবিটি তুলনা করতে উচ্চ রেজুলিউশনের কোনো ‘রেফারেন্স’ ছবির মাধ্যমে এর খুঁটিনাটি বিষয়াদি উন্নত করার লক্ষ্যে নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এটি।
ব্যবহারকারী চাইলে এই ‘সিন অপ্টিমাইজার’ অপশন বন্ধও করতে পারেন। স্যামসাং আরও বলছে, চাঁদের কোনো অস্পষ্ট স্ন্যাপশট অথবা এমন ছবি, যা নিশ্চিতভাবেই পৃথিবীতে নেওয়া হয়নি, সেগুলোর বেলায় এটি কাজ করবে না। আর চাঁদের নিজ অক্ষে আবর্তনের গতি যেহেতু পৃথিবীকে আবর্তনে চাঁদের গতির সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়, তাই পৃথিবী থেকে চাঁদের একই পৃষ্ঠ আমরা দেখতে পাই।
এর মানে হচ্ছে, পৃথিবী থেকে তোলা চাঁদের একটি উচ্চ রেজুলিউশনের ছবি আর যে কোনো ক্যামেরায় (স্যামসাং ফোনের ক্যামেরাও) তোলা ছবি আসলে একই জিনিসের একই অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা ছবি হবে।
এনগ্যাজেট সরাসরি না বললেও ওই তথ্যের মানে হচ্ছে, স্যামসাং মেবাইলে তোলা ছবির বদলে ভালো মানের একটি ছবি ক্যামেরার ডিসপ্লেতে দেখিয়ে দিয়েও দাবি করা সম্ভব যে ওটা মোবাইলের ক্যামেরাতেই তোলা।
বিশেষ করে, মহাকাশ থেকে তোলা চাঁদের ছবিতে স্যামসাংয়ের এই প্রযুক্তি কাজ করবে না, এমন দাবিও প্রশ্নের উদ্রেক করে।
এই বিষয়টিই পরীক্ষা করে দেখেছেন ‘ব্রেকফটোস’ নামের এক রেডিট ব্যবহারকারী। স্যামসাংয়ের বিরুদ্ধে তিনি চাঁদের ছবিতে বিভিন্ন নকল উপাদান যোগ করার অভিযোগ তোলেন, যা মূল ছবিতে ছিলই না। এর পরপরই স্যামসাংয়ের এই ব্যাখ্যা এলো।
স্যামসাং যে ‘ভিন্ন ছবি দেখায়’ সেটি প্রমাণে তিনি এক কম্পিউটার স্ক্রিনে কয়েকটি তুলনামূলক অস্পষ্ট ও কম রেজুলিউশনের ছবি এনে সেগুলোর ছবি তোলেন স্যামাংয়ের ক্যামেরায়। দেখা গেছে, ফোনটি এমন সব তথ্য ছবিতে যোগ করে দিয়েছে যেগুলো মনিটরে তোলা ছবিতে থাকার কথা নয়।
এমনকি এক্সপোজার বাড়িয়ে দেওয়ার পরও দেখা গেছে, ডিভাইসটি এমন সব উপাদান যোগ করছে, যা সেখানে ছিলই না।
তবে, এটা পুরোপুরি নকল, বিষয়টি এমন নয়। ছবির আসল শটকে ভিত্তি হিসেবে ধরে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে স্যামসাং। তবে, এর অ্যালগরিদম এই ধরনের ছবি তৈরি করে এমন এক অনিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে চলে যাচ্ছে, যা লেন্সের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর দেখা ছবিকে উপস্থাপন করে না।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্ভবত এই বিষয়ে কোম্পানি নিজেও অবগত। কারণ তারা এর ‘সিন অপ্টিমাইজার’ ঢেলে সাজিয়ে আসল চাঁদ ও এর সমসাময়িক ছবিগুলোর মধ্যে ‘যে কোনো সম্ভাব্য বিভ্রান্তি কমানোর’ কথা বলছে।
ছবির আউটপুট হেরফের করা নিয়ে এই প্রথম কোনো ফোন উৎপাদক সমালোচনার মুখে পড়েছে, বিষয়টি এমন নয়। আর কয়েকটি ফোনে এমন ‘বিউটি মোড’ও রয়েছে, যেগুলো শরীর ও ত্বকের অপূর্ণতাকে ‘পোস্ট প্রসেস করে’ বিভিন্ন অবাস্তব পোরট্রেইট তৈরি করে, যেটিকে আলোকচিত্রের ভাষায় বলা হয় মাস্কিং।