কারিন মার্জোরি একজন স্ন্যাপচ্যাট ভিত্তিক ইনফ্লুয়েন্সার। সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমটিতে তার প্রায় ২০ লাখ ফলোয়ার আছে। মার্জোরি যত বেশি সম্ভব ফলোয়ারদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতে চান। কিন্তু একার পক্ষে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের সঙ্গে নিয়মিত কথোপকথন চালানো কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে নিজের একটি প্রতিলিপি তৈরি করেছেন।
মার্জোরির আশা- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তিনি নিজের আদলে যে চ্যাটবট তৈরি করেছেন, তা মানুষের ‘একাকীত্ব দূর করবে’।
নিজের কন্ঠের আদলে তৈরি মার্জোরির এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবটের নাম ‘কারিনএআই’। চ্যাটবটের ওয়েবসাইটে এটি নিজেকে ‘ভার্চুয়াল গার্লফ্রেন্ড’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুসারে, এই চ্যাটবটের সাহায্যে মার্জোরির ভক্তরা তার এআই সংস্করণের সঙ্গে ‘ব্যক্তিগত কথোপকথন’ চালাতে পারবেন।
এই চ্যাটবট ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। মার্জোরি সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন। প্রচুর মানুষ তার সমালোচনা করছেন, এমনকি তিনি মৃত্যুর হুমকিও পাচ্ছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সঙ্গীর মতো কথোপকথন চালু নিয়েও তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।
এক টুইটে মার্জোরি বলেছেন, ‘মানুষের একাকীত্ব নিরসনের পথে কারিনএআই প্রথম উদ্যোগ।’ ২৩ বছর বয়সী এই ইনফ্লুয়েন্সার আরও বলেন, ‘পুরুষদেরকে তাদের আবেগ-অনুভূতি, পুরুষত্ব ও তারা যেসব সমস্যার মোকাবেলা করছে, তা গোপন রাখতে বলা হয়। কারিনএআই’র সাহায্যে আমি এসব সমস্যার সমাধান করতে চাই। বিশ্বের শীর্ষ মনোবিদদের পরামর্শে আমি এই চ্যাটবটে কগনিটিভ বিহেভিয়ারিয়াল থেরাপি ও ডায়ালেক্টিক বিহেভিয়ার থেরাপি যোগ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এই চ্যাটবট করোনা মহামারির সময় মানুষ যে শারীরীক এবং মানসিক মনোবল হারিয়ে ফেলেছিল, তা ফিরে পেতে সহায়তা করবে, পাশাপাশি মানসিক ট্রমা থেকেও বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে।’
এআই চ্যাটবটের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুসারে, ‘যথার্থ এআই অভিজ্ঞতা’ নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্টরা ডিজাইন এবং কোডিংয়ের পেছনে ২ হাজার ঘন্টারও বেশি সময় ব্যয় করেছেন।
ফরেভার ভয়েস নামের একটি প্রতিষ্ঠান মার্জোরির জন্য এই চ্যাটবটটি তৈরি করেছে আর এতে ব্যবহার করা হয়েছে ওপেনএআই’র জিপিটি৪ সফটওয়্যার। এনবিসি নিউজ ফরেভার ভয়েসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জন মেয়ারের কাছে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি।
তবে সম্প্রতি এক টুইটে চ্যাটবট তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পেরে ‘গর্বিত’ বলে দাবি করেছেন তিনি এবং মার্জোরির উদ্যোগকে ‘মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে এআই’র ব্যবহারকে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ফরচুন ম্যাগাজিনের তথ্য অনুসারে চালুর প্রথম সপ্তাহেই কারিনএআই’র ‘ভার্চুয়াল গার্লফ্রেন্ড’ সেবা প্রায় ৭২ হাজার মার্কিন ডলার আয় করেছে। মার্জোরির ভক্তরা চ্যাটবটটির সঙ্গে কথা বলার জন্য মিনিটে ১ ডলার করে খরচ করছেন।
কারিনএআই গ্রাহকদের অন্তরঙ্গ অভিজ্ঞতা দিলেও সেখানে কোনো খোলামেলা ‘যৌন আলাপের অভিজ্ঞতা’ পাওয়ার সুযোগ নেই। তবে দেখা গেছে গ্রাহকের উস্কানিতে পা দিয়ে কারিনএআই তাদের সঙ্গে খোলামেলা যৌন আলাপে অংশ নিচ্ছে। বিজনেস ইসসাইডার এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর মার্জোরি এক বিবৃতিতে জানান, ‘এটি হওয়ার কথা নয়। সম্ভবত অ্যালগরিদম ঠিকভাবে কাজ করছে না। খুব দ্রুত এই ত্রুটি সারানো হবে। ‘
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এই ধরনের সেবার নজির এটিই প্রথম নয় এবং এ ধরনের সমস্যাও (খেলামেলা যৌনালাপ) কারিনএআই’ই প্রথম মোকাবেলা করছে না। এআই প্রতিষ্ঠান রেপ্লিকাও একই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল।
তবে এ ধরনের এআই চ্যাটবট দিয়ে আসলেই মানুষের একাকীত্ব নিরসন করা যাবে কিনা, তার জানার জন্য কোনো সঠিক বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক গবেষণা এখনো নেই। কিছু বিশ্লেষকের মতে, এটা শুধু সাধারণ মানুষের ওপর ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রভাব ব্যবহার করে অর্থ উপার্জনের একটি কৌশলমাত্র।