কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী সময় থেকে প্রযুক্তি বাজারে মন্দা ভাব বিরাজ করছে। এরপর অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা ও অস্থিতিশীলতা আরো প্রভাব বিস্তার করেছে। সামগ্রিক দিক বিবেচনায় চলতি বছর ১২০ কোটির বেশি স্মার্টফোন বিক্রি হবে না বলে জানিয়েছে বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রেন্ডফোর্স। তবে ফোল্ডেবল ডিভাইস বাজারের নিয়ন্ত্রণ নেবে। আর চলতি বছর ফোল্ডেবল সেলফোনের বিক্রি ৫৫ শতাংশ বেড়ে ১ কোটি ৯৮ লাখ ইউনিট ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
গিজচায়নায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ২০২২ সালের ১ কোটি ২৮ লাখ ইউনিট ডিভাইসের তুলনায় চলতি বছর ৫০ লাখ বেশি ডিভাইস বিক্রি হবে। জরিপে দাবি করা হয়, ফোল্ডেবল স্মার্টফোনের দাম বেশি হওয়ার কারণে স্মার্টফোনের বাজারে এর হিস্যা বা অবস্থান খুবই দুর্বল। সেলফোন উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের খরচ কমাতে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও সরবরাহকারীরা নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, ফোল্ডেবল স্মার্টফোনে যে ওএলইডি প্যানেল ব্যবহার করা হয় তার জন্য ২৩ শতাংশই ওএলইডি অর্গানিক অংশে ব্যয় হয়। বর্তমানে আরো একাধিক কোম্পানি যন্ত্রাংশ সরবরাহের চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে শিগগিরই এর দাম কমবে বলে আশা বিশ্লেষকদের। ফোল্ডেবল ডিভাইসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ হচ্ছে হিঞ্জ। বর্তমানে এর দামও কমে ১২০ ডলারে নেমে এসেছে। প্রযুক্তিবিদদের মতে ফোল্ডেবল স্মার্টফোনের বিক্রি বাড়াতে হলে উৎপাদন খরচ কমাতে হবে।
২০১৯ থেকে শুরু করে ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত ফোল্ডেবল সেলফোন বাজারজাতকারী একমাত্র চীনা কোম্পানি ছিল হুয়াওয়ে। তবে সময়ের সঙ্গে অপো, ভিভো, শাওমি ও অনরের মতো প্রতিষ্ঠান ফোল্ডেবলের বাজারে প্রবেশ করেছে। ২০২২ সালে পকেট এস বাজারে আনে হুয়াওয়ে। এর ডিজাইন ও দাম স্মার্টফোনের বাজারে আলোড়ন তৈরি করেছে। এতে শুধু ফোরজি ব্যবহারের সুবিধা থাকলেও এর বিক্রি কমেনি।
গত বছর হুয়াওয়ের বাজার হিস্যা ১০ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। তবে চলতি বছর তা ২০ শতাংশের কাছাকাছি বলে জানা গেছে। ফোল্ডিং সেলফোনের বাজারে আরো কিছু চীনা প্রতিষ্ঠান ৩-৫ শতাংশ বাজার হিস্যা দখলে নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান যদি বিশ্ববাজারে আরো ডিভাইস আনতে পারে তাহলে বিক্রি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আফ্রিকার বাজারে দীর্ঘদিন ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে ট্রানশন। এ বছর কোম্পানিটি নিজস্ব ফোল্ডেবল সেলফোন দ্য ফ্যান্টম ভি ফোল্ড বাজারজাত করেছে। অতিসম্প্রতি এ ক্যাটাগরিতে প্রবেশ করেছে গুগল। ৭ দশমিক ৬ ইঞ্চি (২২০৮x১৮৪০ পিক্সেল) ও ৫ দশমিক ৮ ইঞ্চির (২০৯২x১০৮০ পিক্সেল) ওএলইডি প্যানেলসহ পিক্সেল ফোল্ড বাজারে এনেছে সফটওয়্যার জায়ান্টটি।
জুলাইয়ের শেষ দিকে গ্যালাক্সি ফোল্ড ৫ বা ফ্লিপ ৫ বাজারজাতের গুঞ্জন চলছে। স্যামসাংয়ের বেশকিছু জেনারেশন রয়েছে। কেননা দক্ষিণ কোরিয়ার এ প্রযুক্তি জায়ান্টই প্রথম ফোল্ডেবলের বাজারে প্রবেশ করে। যে কারণে গবেষণা, উন্নয়ন ও উৎপাদন প্রযুক্তির দিক থেকে কোম্পানিটি অন্যদের তুলনায় এগিয়ে। বর্তমানে বাজারে ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি ফোল্ডিং সেলফোন রয়েছে।
ট্রেন্ডফোর্সের পূর্বাভাস, ২০২৩ সালে বাজারে ফোল্ডেবল স্মার্টফোনের উপস্থিতি ১ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হবে। ২০২৭ সাল নাগাদ তা ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।